বাড়ছে সংক্রমণ, বিধিনিষেধ মানার বালাই নেই

দেশে বেড়েই চলেছে করোনার সংক্রমণ। সভা-সমাবেশ বন্ধসহ বেশ কিছু বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার। শনিবার থেকে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণাসহ নতুন কিছু বিধিনিষেধ জারি হয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারবার স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য সবাইকে অনুরোধ করছে। কিন্তু দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ সরকারের বিধিনিষেধ এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনুরোধ মানছে না। সরকারের ঢিলেঢালা কার্যক্রমে এবং জনগণের অসচেতনতা দেখে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও বিরক্ত প্রকাশ করেছেন। 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী জানান, দেশে করোনা বাড়ার পরেও জনসাধারণের মধ্যে কোনো প্রভাব পড়ছে না। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই মাক্স ছাড়া রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছেন। তাদের মধ্যে একটা ধারণা থাকতে পারে টিকা নিয়েছি দেখে করোনায় আক্রান্ত হবেন না। কিন্তু ধারণাটি ভুল। করোনা সংক্রমণরোধে জনসচেতনতার বিকল্প নেই।  

তার মন্তব্যের সত্যতা পাওয়া গেল সরেজমিন রিপোর্টে। আজ ঢাকার কয়েকটি জায়গায় ঘুরে দেখা গেছে, বাস বা রাস্তায় মাক্স ছাড়াই ঘোরাফিরা করছে বেশিরভাগ মানুষ। বাজার, চায়ের স্টলগুলোতেও জনসমাগম। তাদের সাথে কথা বলতে গেলে নূর হোসেন নামে একজন পথচারী বলেন, সবকিছুই তো চলছে। বাণিজ্য মেলা চলছে, বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে। সেখানেও তো কেউ কিছু মানছে না। 

১৩ জানুয়ারি থেকে উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও সমাবেশ বন্ধ রাখার নির্দেশনাও জারি আছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বাণিজ্য মেলা হচ্ছে, প্রতিদিনই কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে বিয়ে অনুষ্ঠান হচ্ছে, ধর্মীয় সভা-সমাবেশও হচ্ছে। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ কম হচ্ছে। 

পরামর্শক কমিটির সদস্যরা বলছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ তারা করেছে। যা পরামর্শ দেয়ার, সুপারিশ করার তারা করেছে। বাস্তবায়ন করবে সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। সবাই যদি নিজ নিজ দায়িত্ব পালন না করে তবে সেটার দায় স্বাস্থ্যের নয়।  

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা অদ্ভুত এক যুক্তি দিয়েছেন, ২০২১ সালের মার্চে যে ১৮ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল, সেখানে জনসমাগমে নিরুৎসাহিত করাসহ সকল পর্যটন কেন্দ্রে ভিড় না করতে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়েছিল। সেসময়ও নির্দেশনা মানতে দেখা যায়নি। করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে প্রথম সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয় ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল। যা পরে সাত দফা বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়। কেবল সেই সময়ই জারিকৃত নির্দেশনা মানতে দেখা গেছে। পরে দফায় দফায় নির্দেশনা জারি হলেও সেগুলোর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁয় দেখা গেলো সান্ধ্যকালীন আড্ডা চলছে প্রতি টেবিলে। দুই টেবিলের মধ্যে দূরত্ব নেই বললেই চলে। খেতে ঢুকে মাস্ক পরে থাকার কোনো কারণ নেই। এক কাস্টমার চলে যাওয়ার পর স্যানিটাইজার দিয়ে টেবিল মুছতেও দেখা গেলো না কাউকে। ঢাকার শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে তিন দিনব্যাপী করোনার বিরুদ্ধে নৃত্যানুষ্ঠান, শহরের আরেক প্রান্তে চলছে বাণিজ্য মেলা, ছোট উদ্যোক্তাদের বদ্ধ ঘরের মেলাও চলছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য ও জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানানোর দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের নয়। এখানে আরো অনেক সরকারি সংস্থার কাজ রয়েছে। সমন্বিতভাবে যদি কাজ না করা যায় তবে ১১ দফা নির্দেশনায় কাজ হবে না।

তিনি আরো বলেন, সবাইকে মাস্ক পরতে বলেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেটা পরানোর কাজতো এই মন্ত্রণালয়ের নয়। এটা স্বরাষ্ট্র বা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাজ। এ কাজে জনপ্রতিনিধিদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে।

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, ‘মোবাইল কোর্ট বসিয়ে জরিমানা করার দায়িত্ব স্বাস্থ্যের নয়। যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাদেরকে কাজটা করতে হবে। একটা মহামারির সময় যদি সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয় এবং প্রতিষ্ঠান নিজ দায়িত্ব পালন না করে তাহলে মহামারি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না। সমন্বিতভাবে বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন না করা গেলে ১১ দফা কাগজেই  থেকে যাবে।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //