ইসি আইন ক্ষমতায় আসার অস্ত্র: সুজন

নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে করা আইনের খসড়া রবিবার বিল আকারে জাতীয় সংসদে তোলা হয়েছে। তবে এটি উত্থাপনের পেছনে ভিন্ন কারণ দেখছেন নাগরিক সমাজ ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।

তারা মনে করছেন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইনের খসড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন এবং সংসদে উত্থাপন খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে হয়েছে। এতে নাগরিক সমাজের মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি। এ ছাড়া আইনটিতে কিছু ত্রুটিও রয়েছে।

রবিবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত 'প্রস্তাবিত নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন :নাগরিক ভাবনা' শীর্ষক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা উঠে আসে।

এতে আরও বলা হয়, বর্তমান সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসার জন্য নিজের পছন্দের লোক দিয়ে নির্বাচন কমিশন সাজাতে এই ত্রুটিপূর্ণ আইন পাস করছে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) ড. এম সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইনের খসড়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। কারণ, এতে সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত নামগুলো কারও জানার সুযোগ নেই। এর চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, যে প্রক্রিয়ায় এটি প্রেসিডেন্টের কাছে যাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তাব ছিল, সার্চ কমিটির দেওয়া নামগুলো প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি সংসদীয় কমিটিতে আলোচনার পর প্রেসিডেন্টের কাছে গেলে তা গ্রহণযোগ্য হতো। কিন্তু তা না করে আইনটি সংসদে উত্থাপন করা হচ্ছে। এতে করে আইনটি প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিক বলেন, বর্তমান সরকার কী ধরনের সার্চ করবে, সেটা আগে থেকেই অনুমেয়। তারা সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীলদের খুঁজে পাবেন। দুজন নাগরিককে রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন দেবেন। রাষ্ট্রপতির এই ক্ষমতা হঠাৎ করে কীভাবে এলো, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

তিনি বলেন, কোন ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হচ্ছে, তা আমরা জানব না। হঠাৎ দেখা যাবে, পাঁচজনের নামে নির্বাচন কমিশন গঠন হচ্ছে।

ড. শাহ্দীন মালিক বলেন, সারাবিশ্বে কর্তৃত্ববাদী সরকারের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা এমনভাবে নির্বাচনের খেলা করে যেন তারা জয়ী হয়। এর প্রথম ধাপ পছন্দের নির্বাচন কমিশন গঠন করা। এটা এ আইনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছে। নির্বাচন নিয়ে যে খেলা হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে সরকারি দল যেন জেতে- সেটাই মনে হচ্ছে।

তিনি সন্দেহ পোষণ করে বলেন, বর্তমান সরকার যেন জয়ী হয়, সেটা নিশ্চিত করার জন্যই এ আইন হচ্ছে। এটা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো লোক দেখানো আইন হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের উদ্দেশ্য ছিল নাগরিকদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিরাপত্তা দেওয়া। উল্টো ওই আইন সরকার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। নির্বাচন কমিশন আইনকেও সরকার ক্ষমতায় আসার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে।

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে না পারলেও বিতর্কিত নির্বাচন ঠেকাতে পারে। নির্বাচন চলমান অবস্থায় ব্যবস্থা নিতে পারে। সরকারের প্রণীত নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইনের খসড়ায় অনুসন্ধানের কথা বলা হয়েছে। রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবীদের থেকে নাম নেওয়ায় কী অনুসন্ধান? প্রশ্ন রাখেন তিনি।

পরিবেশ আইনবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের সংবিধানে নিরপেক্ষতার কথা বলা আছে। স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের কথা বলা হয়েছে। সংসদে উত্থাপিত আইনের খসড়ায় নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করবে- এ কথাটি নেই।

তিনি বলেন, প্রত্যয় থাকতে হবে- সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার। এ আইন ও সার্চ কমিটি দিয়ে তা কখনোই হবে না। এটি জনগণও বেশিদিন মানবে না। আইন পাস হলেও আমরা কি বছরের পর বছর ভোট না দিয়ে চুপচাপ বসে থাকব? অলীক বাস্তবতা ও স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে এসে জনগণকে সকল ক্ষমতার উৎস মনে করে সবাইকে কাজ করতে হবে।

সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, নাগরিকরা যখন একটি আইনের খসড়া আইনমন্ত্রীর কাছে দিয়েছেন, তখন শুনেছি তাদের হাতে সময় নেই। তারপর যখন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংলাপ হয়েছে, তখনও আইনমন্ত্রী বলেছেন সময় নেই। হঠাৎ আইন মন্ত্রিসভায় পাস হয়ে সংসদে উত্থাপন হয়ে গেল। তড়িঘড়ি করে আইন পাস করার উদ্দেশ্য ভালো নয়। তারা আগামীতে কী রকম নির্বাচন করতে চায়- তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের নাগরিক সমাজকে আরও সোচ্চার হতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সুজনের কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ ও নির্বাহী সদস্য বিচারপতি মো. আবদুল মতিন। সুজনের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //