জাতীয় সুন্দরবন দিবস আজ

বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে সুন্দরবনে। গত কয়েক দশকের ব্যবধানে অনেক প্রাণী আজ বিলুপ্ত। টিকে থাকার লড়াইয়ে জাতীয় প্রাণী রয়েল বেঙ্গল টাইগার আছে। এছাড়া মানুষের লোভেও বার বার ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে, বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ এ অরণ্য। বন-বাদাড় কেটে তৈরি হয়েছে মাছের ঘের। জঙ্গল সাফ করে গড়ে উঠছে বসতি। বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস করে চলছে চাষাবাদ।

অথচ কতবার যে ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে বনটি দেশকে রক্ষা করেছে; তার কোনও হিসাব নেই। শুধু তাই নয়, দেশের অর্থনীতিতে সুন্দরবনের অবদান অপরিসীম। 

এমনই পরিস্থিতি আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) দেশে পালিত হচ্ছে জাতীয় সুন্দরবন দিবস। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হচ্ছে।

২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আওতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রূপান্তর ও পরশের উদ্যোগে এবং দেশের আরও ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই প্রতি বছর দেশে সুন্দরবন দিবস পালিত হয়ে আসছে। 

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে লবণাক্ততার সমস্যা আগে থেকেই ছিল। এবার যুক্ত হয়েছে পানিদূষণ। একইসাথে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করে পশুর নদ খনন, বন্যপ্রাণী ও বিষ দিয়ে মাছ শিকার, মিষ্টি পানির প্রবাহ কমে যাওয়া, ভূমিক্ষয় ও ভাঙন, নৌ-যান চলাচল, পর্যটকদের অসচেতনতা, নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর অত্যাচার, অবকাঠামো নির্মাণ ও তার পাশেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন বনটিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ধীরগতিতে হলেও বাড়ছে পানি ও মাটির দূষণের মাত্রা, দীর্ঘমেয়াদে যা মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। 

সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে বেড়েছে প্লাস্টিকের দূষণ। পর্যটকরা সাথে করে নিয়ে আসা পানির বোতল, খাবার প্যাকেট, পলিথন, প্লাস্টিকের প্লেট, চায়ের কাপসহ বিভিন্ন বর্জ ফেলে যাচ্ছেন স্পটগুলোতে। আর এসব জোয়ারের পানিতে নদীতে মিশে সমুদ্রেও চলে যাচ্ছে। এছাড়া উচ্চশব্দে গান বাজানো হয় পর্যটকবাহী নৌযানে। বনের মধ্যেও হৈচৈ করতে দেখা যায় অনেক পর্যটককে। এর সবকিছুর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বনের ওপর।

দীর্ঘ সময় ধরে জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণা করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান। 

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে সুন্দরবনে। দূষিত হচ্ছে মাটি ও বাতাস। ক্রমাগত কমছে উপকূলের রক্ষাকবচ হিসেবে পরিচিত সুন্দরী গাছ। এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও প্রাণিকুলেও।’

তবে এখন সচেতন হলে হয়তো খানিকটা প্রাকৃতিক সম্পদ বাঁচানো সম্ভব; কিন্তু এ সময়টাও চলে গেলে তখন আর বিপদের শেষ থাকবে না। 

তাই সুন্দরবনের জীববৈচিত্র রক্ষা এবং অনন্য সুন্দর প্রাকৃতিক এ সম্পদ সংরক্ষণে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সুন্দরবন একাডেমির আয়োজনে খুলনাসহ সুন্দরবনঘনিষ্ট জেলাসমূহে বেসরকারিভাবে সুন্দরবন দিবসের নানাবিধ কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে।

সুন্দরবন একাডেমির পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বল্প পরিসরে সুন্দরবন দিবস পালন করা হবে। দেশের সামগ্রিক পরিবেশসহ উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ এবং সুন্দরবনের ওপর নির্ভর মানুষের জীবিকা ও জীবন রক্ষায় সুন্দরবনের অসাধারণ ভূমিকা প্রশ্নাতীত। এমনি বাস্তবতায় সুন্দরবনের প্রতি মমত্ববোধের জায়গা থেকে ভার্চুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, সুন্দরবন রয়েছে ৫ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, প্রায় ৫০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৫০ প্রজাতির সরীসৃপ, ৩২০ প্রজাতির পাখি, ৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী এবং ৪০০ প্রজাতির মাছ। সুন্দরবনের স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার পৃথিবী বিখ্যাত। এছাড়া রয়েছে চিত্রা ও মায়া হরিণ, বানর, বনবিড়াল, লিওপার্ড, শজারু ও বন্য শূকর। এখানে রয়েছে বিচিত্র সব পাখি। সুন্দরবনের সরীসৃপের মধ্যে রয়েছে কুমির, সাপ, টিকটিকিজাতীয় সরীসৃপ ইত্যাদি।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //