আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ

আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। লৈঙ্গিক সমতার উদ্দেশ্যে প্রতিবছর বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিনটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয়। নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা, তাদের কাজের স্বীকৃতি দানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য উদযাপনের উদ্দেশ্যে নানা আয়োজনে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় দিনটি।

এ বছরের নারী দিবসে জাতিসংঘের স্লোগান ‘নারীর সুস্বাস্থ্য ও জাগরণ’। নারীর প্রতি সবরকম বৈষম্য ও অন্যায়-অবিচারের অবসান ঘটিয়ে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বিশ্ব গড়ার কাজে পুরুষের সমান অবদান রাখার প্রত্যয় নিয়ে নারীর এগিয়ে চলা আরও বেগবান হোক। “নারী-পুরুষের সমতা, টেকসই আগামীর মূল কথা” (Gender equality today for a sustainable tomorrow)—এই প্রতিপাদ্যে এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপিত হতে যাচ্ছে।

দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাণী দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ১৮৫৭ সালে মজুরি বৈষম্য, নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা আর কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে প্রথমবারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের রাস্তায় নামেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকরা। সেই মিছিলে হামলা করে সরকারি বাহিনী। পরে ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে নেতৃত্ব দেন জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিন। ক্লারা জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে চলা আন্দোলন আর সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯১১ সাল থেকে একটি দিন নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে পালিত হয়। পরে ১৯১৪ সাল থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ নারী দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে।

অর্থাৎ গত শতাব্দীর শুরুতে নারী জাগরণের সঙ্গে সঙ্গে নারী দিবসের ধারনার উত্থান। বছর পরম্পরায় নারীদের অধিকার চাওয়ার এই দিনটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারিভাবে স্বীকৃতি পায় এবং জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালকে ‘আন্তর্জাতিক নারী বর্ষ’ হিসেবে পালনের উদ্যোগ নেয়। আজ বিশ্বের সকল নারী সংগঠন ও সকল রাষ্ট্র ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে উদযাপন করে। আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বেলারুশ, বারকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, চীন, কিউবা, জর্জিয়া, গিনি বিসাউ, ইরিত্রিয়া, কাজাকিস্তান, কিরঘিস্তান, লাউস, মাদাগাস্কার, মলডোভা, মঙ্গোলিয়া, মন্টিনেগ্রো, নেপাল, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, ভিয়েতনাম, জাম্বিয়া ৮ মার্চ নারীদের জন্য রাষ্ট্রীয় ছুটি হিসেবে পালন করে। প্রথাগতভাবে পুরুষরা তাদের মা, স্ত্রী, নারীবন্ধু, নারী সহকর্মীদের এই দিনে ফুল ও উপহার দিয়ে সম্মানিত করে। কোনও কোনও দেশে এই দিনটি মা দিবসের মতো একই সম্মানে উদযাপন করা হয়।

গত কয়েক দশকে নারী দিবস উদযাপনের ধরণে পরিবর্তন এসেছে। কেবল উন্নয়ন সংস্থা না, বিভিন্ন স্তরে দিনটিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়। সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে শ্লোগান নির্ধারিত হয়। আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত বড় বড় প্রতিষ্ঠান দিবসটিকে নারীদের জন্য স্মরণীয় করে তুলতে নানারকম প্রচেষ্টার মধ্যে থাকে।

এবছর বাংলাদেশের নানারকম আয়োজন শুরু হয়েছে এক সপ্তাহ আগে থেকেই। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৬ মার্চ রমনা পার্কের অরুণোদয় গেইট থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েকশ’ নারী একটি পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ছিল- ‘পৃথিবী আমারে চায়: জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় আমরা’।

নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী রোকেয়া কবীর মনে করেন দিবসকেন্দ্রিক এই উদযাপন আরও সুনির্দিষ্ট করে পালনের দরকার আছে। এটি কেবল উদযাপন তাও নয়। এর রাজনীতি আছে। নারী পুরুষের সমতার প্রশ্নে কোন আপসের জায়গা নেই। তবে নারীর অগ্রগতিতে পুরুষকে সম্পৃক্ত করার প্রয়োজন আছে। যতদিন না সেই সমতা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ততদিন নারীর অধিকারের প্রশ্নগুলোকে সামনে আনার জন্য যতরকমের বিশেষ ব্যবস্থা করা যায় সেটি করতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //