‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভাজন নয়’

বঙ্গবন্ধু ব্যক্তি মানুষ হিসেবে একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক বিভাজনে না জড়িয়ে দলমত নির্বিশেষে স্বাধীনতার স্থপতি হিসেবে সকলের মেনে নেয়া উচিত। 

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। 

গতকাল সোমবার (১৪ মার্চ) বিকেল ৪টায় বনানী স্টার টাওয়ারস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইকিউএসি কনফারেন্স হলে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম। গেস্ট অব অনার হিসেবে অংশ নেন মো. রায়হান আজাদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. নূরুন্নবী মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ইফ্ফাত জাহান। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে দেয়া ভাষণে সমগ্র বাঙালি জাতি স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বেলিত-উচ্ছ্বসিত হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধুর সেই নির্দেশনায় জাতি উজ্জীবিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করেছে। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন দেশ সৃষ্টির পেছনে যারা জীবন বাজি রেখেছে সেসব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জানাই অশেষ শ্রদ্ধা ও সালাম। এখন এই দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী করার দায়িত্ব আমাদের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের জাতির পিতা এই চিরন্তন সত্য দেশ ও দেশের বাইরের সবাই আমরা জানি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, বাঙালিদের অনেকে এখনো এটি স্বীকার করতে চায় না। যদি বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হতো তবে বাংলাদেশে নামক স্বাধীন এই দেশের সৃষ্টি হতো না, তা দলমত নির্বিশেষে সবার স্বীকার করা উচিত।

গেস্ট অব অনারের বক্তব্যে মো. রায়হান আজাদ বলেন, বর্তমানে দেশে দুটো প্রজন্ম রয়েছে। একটি স্বাধীনতা পূর্ববর্তী অপরটি স্বাধীনতা পরবর্তী। দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতার স্বপক্ষে মানুষ খুব কম কথা বলতো। বিশেষ করে ৭৫ পরবর্তী একটি শাসকগোষ্ঠী, যারা ১৯৯৬ সালের আগে স্বাধীনতা সপক্ষে কোনো অনুষ্ঠান করতে দেয়নি।সেসময় স্বাধীনতার স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিভক্ত করে ফেলা হয়েছিলো। বিশ্বের প্রতিটি দেশে যেখানে জাতির পিতা দলমত নির্বিশেষে সর্বজন স্বীকৃত হয়, সেখানে আমরা এমন অভাগা জাতি, যারা বঙ্গবন্ধুকে রাজনৈতিক বিভাজনের মধ্যে ফেলে দিয়েছি। এটা কখনো কাম্য নয়। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ইফফাত জাহান বলেন, যিনি আমাদের একটি স্বাধীন দেশ দিলেন, শুধু দেশ নয়, একটি জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন বিশ্ব মানচিত্রে, আর আমরা সেই মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলাম। আমরা বিশ্বাসঘাতকের দলে নাম লেখালাম। আজ ৫০ বছর পরেও এই অনুশোচনা থেকে আমরা কিছু শিক্ষা লাভ করিনি। সত্যি বলতে আমরা লোভ ও সৎ সাহসের অভাবে অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছি।

অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বস্ত্র ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। কিন্তু ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরবর্তী দীর্ঘ একুশ বছর ধরে স্বাধীনতাবিরোধী একটি ধারা তৈরি হয়েছে। এই ধারায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। যারা সবকিছু জানেন তারাও এখন সত্য গোপন রাখেন। সবার মধ্যে সত্য প্রকাশের সৎ সাহস হারিয়ে যাচ্ছে।  

আলোচনা অনুষ্ঠানের সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. নূরুন্নবী মোল্লা তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধারা দেশের সম্পদ। সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে তাদের প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে। সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে বর্তমান বাংলাদেশ সরকার সকল সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ‘ইরামজেন্স অব বাংলাদেশ’ নামে একটি কোর্স বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি চালু হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার দেশকে যে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গেছেন সেই যাত্রা অব্যাহত থাকবে এটাই প্রত্যাশা।  

‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন ২০২২’ কমিটির আহ্বায়ক ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শুভময় দত্ত আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন শেখ মো. হাসানুজ্জামান, বাণিজ্য অনুষদের ডিন ও দেশ বরেণ্য শিল্পী ও নজরুল গবেষক অধ্যাপক ড. নাশিদ কামাল, জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সালাম মন্ডল, স্থপতি বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক সাজ্জাদুর রশিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্যালটেন্ট (এলএন্ডডি) সুজাদুর রহমান প্রমুখ। আলোচনা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ও সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।   

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //