টিপ পরায় হেনস্তা: সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড়

টিপ পরার কারণে পুলিশের এক সদস্য হেনস্তা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তেজগাঁও কলেজের প্রভাষক লতা সমাদ্দার।

তিনি অভিযোগ করেন, শনিবার সকালে কর্মস্থলের দিকে হেঁটে যাওয়ার সময় পুলিশের পোশাক পরা একজন ব্যক্তি তাকে ‘টিপ পরছোস কেন’ বলে কটূক্তি করেন। এছাড়া তিনি প্রতিবাদ জানালে তার গায়ের ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন পুলিশের পোশাক করা ওই ব্যক্তি। খবর বিবিসির।

শনিবার সকালে ওই ঘটনা ঘটলেও তিনি রবিবার শেরে বাংলা নগর থানায় অভিযোগ করেছেন। তবে এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে তীব্র আলোড়ন তৈরি করেছে। অনেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে নিজের টিপ পরা ছবি পোস্ট করতে শুরু করেছেন।

সেই সময় ওইখানে দাঁড়িয়ে থাকা তিনজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের কাছে লতা সমাদ্দার বিস্তারিত খুলে বলেন। তারা বাইকটা শনাক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তারা পারেনি।

সেই সময় হতবাক হয়ে যাওয়ার কারণে তিনি গাড়ির নাম্বারটিও ঠিকভাবে নিতে পারেননি বলে জানান। পরে তিনি কলেজে গিয়ে ভাইস প্রিন্সিপালকে বিস্তারিত জানান। এরপর তিনি সহকর্মীদের সহায়তায় থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন।

লতা সমাদ্দার বলেন, ‘আমি এখনো ট্রমার মধ্যে আছি, আমি কোন দেশে বাস করছি? নারীদের নিরাপত্তা কোথায়? একজন নারী টিপ পরবে, সেজন্য তার গালিগালাজ শুনতে হবে। যে ভাষা হয়তো আমি স্বামীর সাথেও শেয়ার করতে পারবো না। সাধারণ মানুষ নয়, কিন্তু পুলিশের পোশাক পরা একজন লোক যখন এইভাবে আমাকে অ্যাটাক করলো, আমার আর কোন ভাষা ছিল না। আমি এর বিচার চাই। আমি চাই প্রত্যেক নারী তার স্বাধীনতা নিয়ে, স্বতন্ত্রতা চলুক। কোন ইভ টিজিং যেন না থাকে।’

এ বিষয়ে শেরে-বাংলা নগর থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া বলেন, মিজ সমাদ্দার গাড়ির লাইসেন্স নাম্বারের কয়েকটি ডিজিট বলতে পেরেছিলেন, কিন্তু তা থেকে গাড়িটি শনাক্ত করা যায়নি। আমরা এখন বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি দিয়ে যাচাই-বাছাই করছি। তাকে শনাক্ত করতে পারলে আমরা পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেবো। 

তিনি আরো বলেন, আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টা নজরদারি করছেন। তদন্তের আলোকে অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ব্যবস্থাই নেয়া হবে। সেদিন ওই এলাকায় যাদের ডিউটি ছিল, তাদের সবাইকে যাচাই-বাছাই করে দেখা হয়েছে। কিন্তু এই ব্যক্তির সেখানে কোন ডিউটি ছিল না। তিনি হয়তো ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে তাকে শনাক্ত করা কোন কঠিন বিষয় হবে না, আমরা খুঁজে বের করবো। 

সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া

ফেসবুক ব্যবহারকারী ফারাহ জেবিন শাম্মী ওই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে লিখেছেন, কোনদিন নামাজ পড়েন না, জীবনে কোনদিন মসজিদেও যান না। স্মার্ট লাইফ লিড করেন, মদ, ঘুষ সবই খান কিন্তু হিজাব নিকাবের বাড়াবাড়ির কথা আসলে তারাও পোশাকের স্বাধীনতা এবং ধর্ম পালনের স্বাধীনতার কথা বলে তাদের পক্ষ নেন। আর তারা হয়ত জানেন না আজকাল রাস্তাঘাটে, বিভিন্ন জায়গায় হিজাব না পরা, টিপ পরা নারীদের নানা কটূক্তির শিকার হতে হয়। অনেক সময় গালি গালাজ।

ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী টিপ পরা একটি মেয়ের ছবি শেয়ার করে মন্তব্য করেছেন, এদেশ যতদিন না হবে আফগানিস্তান। টিপ হবে বাঙালি নারীর একান্ত-পরিধান।

অবন্তী নাগ প্রমী লিখেছেন, সিস্টেম যদি টিপ পরার পেছনে লাগে, তবে দিনরাত টিপ পরেই থাকবো।

সাবিনা ইয়াসমিন মাধবী নিজের ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, একজন নারীকে রাস্তায় বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত আমি নিজেও হই।তাই বলে পুলিশের পোশাক পরা একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে নারীকে হয়রানি? এতো বড় দুঃসাহস? আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

লাবণ্য লিপি নামে একজন নিজের কপালে লাল টিপ ও ছোট ছেলের কপালে কালো টিপ দেওয়া ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘চাঁদকে ডেকেছিলাম খোকার কপালে টিপ পরিয়ে দিতে। চাঁদ প্রথমে মায়ের কপালে এঁকে দিল লাল টিপ। তারপর খোকার কপালে দিল কাজলের টিপ। যেন পুলিশের নজর না লাগে।’

অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ লিখেছেন, ‘আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা, মানুষের ঘুমন্ত বোধকে আলো দিয়ে যা, জাগিয়ে দিয়ে যা।’

অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন নিজের টিপ পরা ছবি দিয়ে লিখেছেন, তবু কপালের ভাজে চাঁদও যেন হার মেনে যায়, তোমার কালো টিপ!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম টিপ নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে তার প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন লিখেছেন, ‘সব সময় টিপ পরি, ছোট টিপ, বড় টিপ, ডিজাইনার টিপ, ম্যাচিং টিপ। সারা জীবন পরব টিপ।’

টিপও পরতে দেবে না-এ কেমন বিচার? এ কেমন সংস্কৃতি? এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক সঞ্চিতা সিতু।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //