‘সে ড্রাগ অ্যাডিক্ট, তাকে রিহ্যাবে পাঠানো দরকার’

নিষিদ্ধ মাদক মারিজুয়ানা পাওয়ার অভিযোগে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তার বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কূটনীতিক কাজী আনারকলিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

ওই নারী কূটনীতিকের কর্মকাণ্ডে মারাত্মক ক্ষুব্ধ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। অভিযোগের কথা স্বীকার করে মন্ত্রী বলেন, মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে বাংলাদেশের ‘বদনাম করেছে। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

আনারকলির এমন কাণ্ডে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকরা বলছেন। ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশ। মারিজুয়ানা বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধ মাদক। জাকার্তায় নাইজেরিয়ার এক নাগরিকের সাথে তিনি বসবাস করছিলেন বলে জানা গেছে।

ইন্দোনেশিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নাইজেরিয়ার নাগরিকের সাথে মারিজুয়ানাসহ আনারকলিকে কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখে। তারপর বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের অনুরোধে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ইন্দোনেশিয়ার তরফ থেকে আনারকলিকে ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের কাছে অনুরোধের পর সরকারি মহলে টনক নড়ে।

জানতে চাইলে নিউইয়র্ক সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন টেলিফোনে বলেন, ‘আমি ইন্দোনেশিয়া গিয়েছিলাম। ওই সময় আমাদের রাষ্ট্রদূত পুরো ঘটনাটা বলেছেন। সে (আনারকলি) একজন ড্রাগ অ্যাডিক্ট। আমি তাকে দেশে ফেরত পাঠাতে বলেছি। রাষ্ট্রদূত তাকে ফেরত পাঠায়। তার অপকর্মের পুরোনো ইতিহাস আছে।

একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সে ড্রাগ অ্যাডিক্ট। তাকে রিহ্যাবে (মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র) পাঠানো দরকার। দেশের বদনাম করে ফেলেছে। ইন্দোনেশিয়ানরা খুব ভদ্রলোক। বিপুল পরিমাণ মারিজুয়ানাসহ হাতেনাতে ধরা পড়ার পরও তা বাইরে প্রকাশ করেনি। এখন রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে পুরো রিপোর্ট পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

মন্ত্রী আরো বলেন, ‘লস অ্যাঞ্জেলেসে থাকাকালেও সে অপকর্ম ঘটিয়েছে। সেখান থেকে তাকে বের করে দেয়। সে মাদকাসক্ত, অসুস্থ। তার চিকিৎসা দরকার। সরকারের আইনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে বাসায় ‘মাদক পাওয়ার ঘটনায় ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশ মিশনের উপপ্রধান কাজী আনারকলিকে ঢাকায় প্রত্যাহার করে আনার ঘটনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক ও বিব্রতকর হিসাবে বর্ণনা করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা এটা ইনভেস্টিগেট করছি। নিউজটা আমরা দেখেছি, নিউজটা শুধু দেখার বিষয় নয়, আমরা সেই কর্মকর্তার বিষয় কয়েকদিন আগ থেকেই জানি। আমরা তদন্ত করছি। এটা আমাদের জন্য বিব্রতকর।

বাসায় ‘বিপুল পরিমাণ মারিজুয়ানা রাখার অভিযোগে ইন্দোনেশিয়ায় আনারকলি আটক হওয়ার পর তাকে জাকার্তা থেকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে মঙ্গলবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে দক্ষিণ জাকার্তায় আনারকলির অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালায় ইন্দোনেশিয়া সরকারের মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। এরপর তাকে আটক করা হলেও ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কূটনৈতিক দায়মুক্তির কারণে ছেড়ে দেওয়া হয়।

পরে ইন্দোনেশিয়া সরকারের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে তাকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে এই কূটনীতিকের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্র ক্যাডারের যে হাই স্ট্যান্ডার্ড, এটার সাথে আমরা কখনোই কমপ্রোমাইজ করব না। তদন্তে যদি সে দোষী সাব্যস্ত হয়, অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এ বিষয়ে এটুকু বলতে পারি।

কূটনৈতিক দায়মুক্তি থাকলেও আনারকলির বাসায় অভিযান চালানোর বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, এখানে কোনো ভুল নাই। এবং সেই বাসায় আরেকজন বিদেশি নাগরিক ছিল বলে আমরা শুনেছি। সেক্ষেত্রে পুলিশ যেতে পারে।

তবে আমরা ধন্যবাদ জানাই ইন্দোনেশিয়া সরকারকে, তারা সহযোগিতা করেছেন আমাদের। এবং আমাদের ডিপ্লোম্যাট আমাদের কাস্টডিতে আছেন, আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছেন। এটা আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। তবে আমি আপনাদের নিশ্চিত করতে পারি, এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে। এবং সঠিক পথেই সেটা যাবে।

 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //