দক্ষিণাঞ্চলের সব নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে

বরিশালের কীর্তনখোলা, সুগন্ধা, সন্ধ্যা এবং মেঘনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ১০টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে বরিশাল নগরীসহ ছয় জেলার নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় দুই থেকে তিনফুট পর্যন্ত পানি বেড়ে বসতঘরে ঢুকে পড়েছে।

বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুম জানান, ‘সামনে পূর্ণিমা রয়েছে। এ কারণে গত দুদিন ধরেই বরিশালের বাতাসের গতি অনেক বেশি। তাই নদীগুলোতে স্বাভাবিকের তুলনায় পানি বেশি বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, ‘নদীমাত্রিক অঞ্চল বরিশাল। এ অঞ্চলে অসংখ্য নদী থাকলেও মূলত গুরুত্বপূর্ণ ১০টি নদীর পানি পরিমাপ করা হয়। আজ বুধবার (১০ আগস্ট) সারাদিন ১০টি নদীর পানিই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এর মধ্যে বরিশালের কর্তীনখোলা নদীর পানি বিপৎসীমার ২ দশমিক ৬৭ মিটার ওপর দিয়ে (১২ সেন্টিমিটার) প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ভোলার তেতুলিয়া নদীর পানি ভোলা খেয়াঘাট এলাকায় বিপৎসীমার ৩ দশমিক ২০ মিটার ওপর দিয়ে (৩০ সেন্টিমিটার) প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদীর পানি বিপৎসীমার ২ দশমিক ৯০ মিটার ওপরে।


এছাড়া ভোলার দৌতলখান উপজেলাধীন সুরমা-মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩ দশমিক ৭০ মিটার ওপর (৬৯ সেন্টিমিটার) দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এই নদীর বিপৎসীমা চিহ্নিত রয়েছে ৩ দশমিক ৪১ মিটার। একই জেলার তজুমদ্দিন উপজেলাধীন সুরমা-মেঘনা নদীর পানি ৩ দশমিক ৭০ মিটার বিপৎসীমার ওপর (৮৭ সেন্টিমিটার) দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ নদীর পানির বিপৎসীমা নির্ধারণ রয়েছে ২ দশমিক ৮৩ মিটার।

অপরদিকে, ঝালকাঠি জেলাধীন বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমা পেরিয়ে ২ দশমিক ২৭ মিটার ওপর দিয়ে (১৯ সেন্টিমিটার) প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদীর বিপৎসীমা ২ দশমিক ৮ মিটার।

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলাধীন বুড়িশ্বর বা পায়রা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে ৩ দশমিক ১০ মিটার ওপর দিয়ে (২৯ সেন্টিমিটার) প্রবাহিত হচ্ছে। এ নদীর বিপদসীমা ২ দশমিক ৮১ মিটার।

বরগুনার বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদীর বিপৎসীমা ২ দশমিক ৮৫ মিটার অতিক্রম করে ৩ দশমিক ২১ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী পাথরঘাটা উপজেলাধীন বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে ৩ দশমিক ৫০ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদীর পানির বিপৎসীমা ২ দশমিক ৮৫ মিটার। পানি বেড়েছে ৬৫ সেন্টিমিটার।


অপরদিকে, পিরোজপুরের বলেশ্বর নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে ২ দশমিক ৭০ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদীর বিপৎসীমা ২ দশমিক ৬৮ মিটার। সে হিসেবে ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। একই উপজেলাধীন কচা নদীর উমেদপুর পয়েন্টে ববিপৎসীমার ২ দশমিক ৮৫ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদীর বিপৎসীমা ২ দশমিক ৬৫ মিটার। সে হিসেবে ২০ সেন্টিমিটার বেড়েছে কচা নদীর পানি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুম বলেন, ‘পূর্ণিমা ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ ১০টি নদীর বাইরে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সবগুলো নদীর পানিই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এ কারণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে বিকাল ৫টার পর থেকে পানি কমতে শুরু করেছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

অপরদিকে, বরিশাল আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘ভারতের উড়িষ্যা উপকূলে থাকা একটি নিম্নচাপ লঘুচাপে রূপ নিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলে। এজন্য সমুদ্র বন্দরগুলোকে তিন নম্বর বিপদ সংকেত এবং নদীগুলোকে এক নম্বর নৌ-হুঁশিয়ারি দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

সিনির পর্যবেক্ষক আব্দুল কুদ্দুস জানান, ‘লঘুচাপের প্রভাবে গত দুদিন ধরেই বরিশাল অঞ্চলে থেমে থেমে হালা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বুধবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে মোট ২৪ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতি আরো ২-৩ দিন থাকবে।


এদিকে, সরেজমিনে দেখা গেছে, ‘দুপুরের পর থেকে বরিশালে ভাড়িবৃষ্টি শুরু হয়। প্রায় এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে গোটা নগরজুড়েই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। নগীর ভিআইপি এলাকাখ্যাত রাজাবাহাদুর সড়কে জেলা প্রশাসকের সরকারি বাসভবনসহ পাশাপাশি সরকারি বাসভবনগুলোতে পানি ঢুকে পড়েছে।

এছাড়া নগরীর পলাশপুর, মোহাম্মদপুর এবং রসতুলপুর বস্তি পানিতে ডুবে গেছে। নদীর তীরবর্তী সদর উপজেলার চরবাড়িয়া, লামচড়ি, শায়েস্তাবাদ, কর্নকাঠি, চরকাউয়া এলাকার নিম্নাঞ্চল পানিতে ভাসছে। গৃহবন্দী হয়ে পড়েছেন এইসব এলাকার মানুষ। নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ওপরে জমে থাকা পানি নামতে না পারায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //