ঢাকা মেট্রোরেল: দৈর্ঘ্যের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নির্মাণ ব্যয়

২০২৪ সালের জুনেই ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ঢাকা মেট্রোরেল চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু নতুন করে প্রস্তাবিত নকশায় মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য এক দশমিক ১৬ কিলোমিটার বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে আরো দেড় বছর বেশি সময় লাগবে। একইসাথে নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এমনটাই জানিয়েছেন সাম্প্রতিক দেশকালকে। 

যানজট থেকে নিরসনে ও যাতায়াতে রাজধানীবাসীর দুর্ভোগ কমাতে ২০১২ সালে এই মেট্রোরেলের প্রকল্পের কাজ শুরু করে সরকার। কাজ শেষ হলে উন্নত ট্রেনে কম সময়ে পৌঁছানো যাবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। উত্তরা থেকে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার পথে থাকবে না কেনো যানজট। মেট্রোরেলের সুবিধা পেতে নগরবাসীকে আরো অপেক্ষা করতে হবে। তবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত আংশিক ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট (লাইন ৬) প্রকল্পে নির্মাণকাজের জন্য বাড়তি সময় ও অর্থ চেয়ে দ্বিতীয় দফা সংশোধনীর প্রস্তাব করেছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড। প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এতে সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে।

সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন হলে প্রকল্পের মোট সময় লাগবে ১৩ বছর। ২০১২ সাল থেকে শুরু হয়ে আগামী ২০২৪ সালের জুনে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব অনুসারে, কাজ শেষ হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে। প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে হবে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। শুরুতে মূল প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা।

জাপান সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা জাইকা এই প্রকল্পে মূল ঋণ যোগানদাতা। ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা দিচ্ছে সংস্থাটি। বাকি ১৩ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব জোগান।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ প্রকল্পের সংশোধনীর প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করেছে। কেন প্রকল্পটি সংশোধন হচ্ছে- জানতে চাইলে এ বিভাগের সদস্য মামুন-আল-রশীদ গতকাল রবিবার (১৭ জুলাই) বলেন, নতুন করে বর্ধিতাংশ ও স্টেশন নির্মাণের কারণেই মূলত ব্যয় বাড়ছে। এজন্য মতিঝিলের মতো জায়গায় ভূমি অধিগ্রহণ করতে হচ্ছে। সেখানে প্রকল্পের অন্যান্য এলাকার তুলনায় ভূমির দর অনেক বেশি।

মূল প্রকল্প নেওয়ার সময় কমলাপুর পর্যন্ত বিবেচনায় নেওয়া হলো না কেন- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে সময়েও বিষয়টি আলোচনায় ছিল। তবে যেকোনো কারণেই হোক কমলাপুর পর্যন্ত অংশটি হয়নি। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে কমলাপুর পর্যন্ত প্রকল্প বাড়ানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত না পৌঁছলে এটি একটি অসম্পূর্ণ প্রকল্প হবে।

মেট্রোরেল সরকারের একটি ফার্স্ট ট্র্যাক বা অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্প। পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমডি) সূত্রে জানা গেছে, গত জুন পর্যন্ত মেট্রোরেলের বাস্তবায়ন অগ্রগতি ৯২ শতাংশ। তবে আর্থিক অগ্রগতি প্রায় ৯০ শতাংশ। এ পর্যন্ত ১৮ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা ব্যয় করা সম্ভব হয়েছে। এ হিসাব প্রস্তাবিত সংশোধনীর আগ পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে। গত অর্থবছরে মেট্রোরেলের বরাদ্দ ছিল চার হাজার ৮০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে রয়েছে দুই হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল বর্ধিত করা এবং কমলাপুরে স্টেশন প্লাজা নির্মাণের জন্যই মূলত বাড়তি ব্যয় ও সময় চাওয়া হয়েছে।

স্টেশনটি নির্মাণে ব্যক্তিমালিকানাধীন ৩৬টি ছোট-বড় ভবন এবং অন্যান্য ৪০টি অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রায় দেড় একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬১ কোটি টাকা। এর বাইরে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার মালিকানাধীন জমি বাবদ আরো এক হাজার ৭৭৩ কোটি টাকার সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে। নতুন করে ব্যয় বাড়ছে- বিদেশি ঋণের সুদ বাবদ ১৫২ কোটি টাকা, বিভিন্ন ধরনের ইকুইপমেন্টে ৮৫২ কোটি টাকা, মেইন লাইনের সিভিল ও স্টেশন ওয়ার্কে ৪৩২ কোটি টাকা এবং ই অ্যান্ড সিস্টেম বাবদ দুই হাজার ২৬০ কোটি টাকা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //