ভারতের কাছ থেকেও জ্বালানি নেবে বাংলাদেশ

ব্রুনাই বাংলাদেশকে জ্বালানি দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ দেশটির কাছ থেকে জ্বালানি আনার বিষয়ে এগুচ্ছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে গতকাল সোমবার (২৯ আগস্ট) জানানো হয়। বিষয়টি ঠিকভাবে এগুলো দেশের জ্বালানি সংকট বেশ কমে যাবে বলেই ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই সুখবরের মধ্যে জ্বালানি নিয়ে আরো একটি সুখবর পাওয়া গেছে। বার্তাটি হলো, ভারতের কাছ থেকেও জ্বালানি সংগ্রহ করবে বাংলাদেশ।

আগামী ৫ সেপ্টেম্বর তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর নয়াদিল্লিতে ৬ সেপ্টেম্বর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে সম্পর্কের দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব ইস্যুতে আলোচনার পাশাপাশি চলমান জ্বালানি সঙ্কট মেটাতে ভারত থেকে জ্বালানি সংগ্রহের বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা করবেন প্রধানমন্ত্রী। একইসাথে নেপাল থেকে ভারতের গ্রিড ব্যবহার করে বিদ্যুৎ আমদানি বিষয়েও বাংলাদেশর পক্ষ থেকে আলাপ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরে জ্বালানি ইস্যুতে কী সহযোগিতা হবে, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র) মাসুদ বিন মোমেন সোমবার (২৯ আগস্ট) মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘জ্বালানি ইস্যুতে ভারত একটু সুবিধাজনক জায়গায় আছে। তাদের যদি উদ্বৃত্ত থাকে তাহলে তাদের সাথে আমরা দীর্ঘ মেয়াদে চুক্তি করতে পারি। এটা নির্ভর করছে তাদের কতখানি উদ্বৃত্ত রয়েছে বা তাদের নিজস্ব যে সাপ্লাই এবং ডিমান্ড সিচুয়েশন আছে, সেটা কতখানি কমফোরটেবল। আমরা যেহেতু একটু টাইট সিচুয়েশনে আছি, বিভিন্ন সময়ে আমরা পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বিভিন্ন রকম সহযোগিতা পেয়েছি, আমরা আশা করছি এ ব্যাপারেও তাদের সহযোগিতা পাওয়া যেতে পারে।’

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ-নেপাল জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ (জেডব্লিউজি) ও জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটির (জেএসসি) চতুর্থ বৈঠক গত সপ্তাহে নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বাংলাদেশ নেপালকে জানিয়েছে, নেপালে ভারতের জিএমআর গ্রুপের নির্মিত ৯০০ মেগাওয়াটের আপার কার্নালি জল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি সেপ্টেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে। 

বৈঠকে আরো সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, বাংলাদেশে প্রাথমিক পর্যায়ে ভারত হয়ে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা দিয়ে নেপাল থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি সংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য যৌথভাবে ভারতকে অনুরোধ করবে বাংলাদেশ। 

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে ভেড়ামারা-বহরমপুর আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুৎ ট্রান্সমিশন লাইন উদ্বোধন করে ভারত-বাংলাদেশ। বর্তমানে এই লাইন দিয়ে ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশ। নেপাল থেকে ভারতের গ্রিড ব্যবহার করে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি ভারত এরইমধ্যে সম্মতি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে এই ইস্যুতে ভারতের সাথে বিস্তারিত আলাপ হবে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রানিয়াম জয়শঙ্কর গত এপ্রিলে ঢাকা সফরে এসে বলেছিলেন, ‘ভারত উপ-আঞ্চলিক একাধিক খাতে সংযোগ এবং সহযোগিতা আরো শক্তিশালী করতে চায়। বিশেষ করে জ্বালানিখাতের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প উন্নয়নে সহযোগিতা করে আমরা আঞ্চলিকভাবে উপকৃত হতে পারি। ভারত এ অঞ্চলে জ্বালানিখাতের বড় উৎপাদক ও ভোক্তা। এই খাতে আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের সাথে নিয়ে একসাথে কাজ করতে চাই। ভারত এ বিষয়ে উপ-আঞ্চলিক ফোরাম, বিবিআইএনের (বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল) ফেমওয়ার্কের আওতায় এ ইস্যুতে কাজ করতে চায়।

নেপাল থেকে ভারতের গ্রিড ব্যবহার করে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে আসন্ন সফরে ত্রিপক্ষীয় কোনো চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন গতকাল বলেন, ‘নেপালের সাথে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা নাই। জ্বালানির ক্ষেত্রে অনেক ধরনের অপশন আছে, আমরা সবগুলো অপশনই চালু রাখতে চাই। সেটা ভারতের সাথে হোক বা পানি বিদ্যুৎ বা ভারতে ত্রিপুরা রাজ্য আছে সেখানেও যদি উদ্বৃত্ত থাকে সেগুলো আমরা আনার ব্যবস্থা করতে পারি। সেজন্য আমাদের যে সব গ্রিড ব্যবহারের প্রয়োজন হবে সে বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। হঠাৎ করেই এই কাজগুলো করা সম্ভব না। তার আগে যদি রাজনৈতিক সমঝোতা থাকে, তাহলে হয়তো প্রিপারেশনেও কিছু সময় লাগবে। এই ধরনের সফর এমন রাজনৈতিক সমঝোতা বাড়াতে সবসময়ই সহযোগী হিসেবে কাজ করে।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //