আজ নিরাপদ সড়ক দিবস

ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল

প্রতিদিন ১৭ জন মানুষ সড়কে প্রাণ হারান। গত বছরে দেশে পাঁচ হাজার ৩৭১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ছয় হাজার ২৮৪ জন নিহত এবং সাত হাজার ৪৬৮ জন আহত হয়েছেন। সড়কে নেমে নিরাপদে ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা নেই বললেই চলে। অথচ, সড়ক নিরাপত্তায় করা হয়েছে সড়ক পরিবহন আইন। চার বছরের বেশি সময় হলেও এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি আইনটি। তৈরি হয়নি আইনের বিধিমালা। নিরাপদ সড়কের প্রতিশ্রুতিও রয়ে গেছে অধরা। আইনের বাস্তবায়ন না হওয়ায় কমছে না সড়ক দুর্ঘটনা, নিরাপদ হচ্ছে না সড়ক। ক্রমেই সড়কে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে চার হাজার ৬৯৬টি। এতে মারা গেছেন পাঁচ হাজার ২১১ জন। এরপর করোনার বছরে ২০২০ সালে চার হাজার ৭৩৫টি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন পাঁচ হাজার ৪৩১ জন। ২০২১ সালে পাঁচ হাজার ৩৭১টি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ছয় হাজার ২৮৪ জন এবং সর্বশেষ চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে এক হাজার ৮৩১টি। এসব দুর্ঘটনায় মারা গেছেন এক হাজার ৯১১ জন। 

রোড সেফটি বলছে, ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ মানবসম্পদের ক্ষতি হয়েছে তার আর্থিক মূল্য ৯ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা, যা জিডিপির দশমিক ৩ শতাংশ।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ‘নিরাপদ সড়কের জন্য সরকার কাজ করছে। নিরাপদ সড়কের জন্য আইন আছে এবং আইনের প্রয়োগও হচ্ছে। নিয়মিত ৬৪ জেলায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা করা হচ্ছে। একটা কথা মনে রাখতে হবে, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। আমরা সবাই আইন মেনে চললে সড়ক নিরাপদ হয়ে যাবে। তা ছাড়া নিরাপদ সড়ককে একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে দেখতে হবে। সচেতন না হলে কেবল আইন দিয়ে লাভ হবে না।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক ও দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশের মহাসড়কে প্রায় ৮৪ ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে। সুতরাং মহাসড়কে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দুর্ঘটনার মধ্যে সোজা মহাসড়কে ৬৩ ভাগ এবং সড়কের যেখানে বাঁক আছে সেখানে ৩৭ ভাগ দুর্ঘটনা হচ্ছে। সুতরাং গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে পর্যাপ্ত বাঁক রাখতে হবে তাতে কমবে দুর্ঘটনা। মহাসড়কে দুর্ঘটনায় প্রতি ১০০ জনের মধ্যে গাড়ির বেপরোয়া গতির কারণে মারা যান ৪৯ জন পথচারী এবং ৫১ জনের মধ্যে আছেন গাড়ির চালক ও যাত্রী। ঢাকা শহরের মধ্যে দুর্ঘটনায় ৭১ দশমিক ৭২ শতাংশ পথচারী নিহত হন। বাকি ২৯ শতাংশ হলো মোটরসাইকেল চালক, যাত্রী। রাজধানীতে ৪৪ শতাংশ দুর্ঘটনা হচ্ছে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘প্রতিবছর সড়কে যে পরিমাণ মৃত্যু হচ্ছে, তা দেখে অনুমান করা যায় সড়ক নিরাপদ হয়নি। নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যারা জড়িত তারা সবাই দায়ী নিরাপদ সড়ক না হওয়ার পেছনে। জনগণের অর্থে অনেক মেধা দিয়ে সড়ক আইন তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু চার বছরে নিরাপদ সড়ক আইনের বিধিমালা হলো না। ফলে আইন প্রয়োগের সদিচ্ছায় প্রথমেই ভাটা পড়েছে।’

‘নিরাপদ সড়ক চাই' (নিসচা)- এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি, মানুষকে বলছি, সরকারকে বলছি। তবে দুর্ঘটনা রোধ করার জন্য কোনো সরকারের মনোভাব স্ট্রং পাইনি আমি।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //