দেশে রোগীর তুলনায় নেই পর্যাপ্ত মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ: সায়মা ওয়াজেদ

বিশ্বের বহু দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নত চিকিৎসা নেই বলে মন্তব্য করেছেন সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম বিষয়ক উপদেষ্টা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।

তিনি বলেন, দেশে রোগীর তুলনায় পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞের সংকট রয়েছে। ফলে গবেষণা অনেক কম। এমনকি, চিকিৎসকদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই।

রবিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সভাকক্ষে ‘কমিউনিটি পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক পরামর্শমূলক সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে তিনি এসব কথা বলেন।

সায়মা ওয়াজেদ বলেন, কেউ যদি ভুল চিকিৎসা করে থাকে তাদেরকে নিয়মের মধ্যে আনতে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে একটি নিয়ন্ত্রক পর্ষদ থাকা দরকার। কিন্তু ১৫ বছরেও তা হয়নি। এরকম সুযোগ না থাকলে তো আমরা বুঝতে পারব না কে উপযুক্ত মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা দেয়। আমাদের যে ইনস্টিটিউট আছে এটিকে আরও উন্নত করতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা কোনো দেশেই খুব ভালো নেই। আমাদের এই ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ আছে।

শেখ হাসিনার কন্যা বলেন, বাংলাদেশে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের স্বল্পতা প্রকট। পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আইন, নীতিমালা ও কৌশলপত্র প্রণয়নসহ বাংলাদেশের বেশ কিছু কাজ রয়েছে। এখন প্রয়োজন তৃণমূল পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। মানসিক স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি জনগণের ভেতরে মানসিক সুস্থতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করাও জরুরি।

তিনি আরও বলেন, যেকোনো হাসপাতালে যদি সার্ভিস সেন্টার না থাকে, তাহলে চিকিৎসা হবে না। শুধু নতুন হাসপাতাল করে কোন লাভ নেই। হাসপাতালে বেডের চেয়ে বেশি দরকার যারা চিকিৎসা দিবে তাদের প্রশিক্ষণ।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য কৌশলপত্রের আলোকে ভবিষ্যত করণীয় ও কর্মকৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে তিনি বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য স্ট্র্যাটিজিক প্ল্যান নিয়ে কাজ করতে গেলে কীভাবে কাজ করতে হবে, এই প্ল্যানে কারা থাকবে, কীভাবে কাজ করবো, কাজের পর কীভাবে বুঝবো এটি কাজ করছে কি না, এর জন্য কি কি ফান্ডিং দরকার, কারা দেবে সব এতে যোগ করা আছে। ইমেন্টল হেলথ সার্ভিস সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে খুবই জরুরি। স্বাস্থ্য খাতে তো আমরা অনেক ইনভেস্ট করছি, তাহলে কেন হবে না?

এ সময় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, যুগোপযোগী এই পরিকল্পনা করোনার কারণে এতদিন বাস্তবায়নে কাজ করা যায়নি। এরপর আসল ডেঙ্গু। কোভিডে মানসিক সমস্যা প্রকট হয়ে দাঁড়ায়। অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে, গৃহ সহিংসতা বেড়ে যায়। বাংলাদেশ টেকসইভাবে এটি নিয়ে কাজ করতে গেলে বিদ্যমান ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। বিশেষ করে বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যেসব বিভাগ রয়েছে তা আরও জোরদার করতে হবে। প্রান্তিক পর্যায়ে কিভাবে মানসিক স্বাস্থ্য পৌঁছে দেওয়া যায় সেটা নিয়েই আমাদের লক্ষ্য। মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে নীতিমালা তৈরি করে দেবে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক দেশের ১৮ ভাগ মানুষ কোন না কোনভাবে মানসিকতা সমস্যায় ভুগছে জানিয়ে বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য আগে পিছিয়ে থাকলেও এখন সামনে এসেছে। ইনস্টিটিউটও সম্প্রাসরিত হয়েছে। এনসিডি কর্ণারে মানসিক স্বাস্থ্যকেও যুক্ত করা হয়েছে। এতে করে প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষ সহজে কাউন্সেলিং পাবেন, চিকিৎসা পাবেন। তবে চিকিৎসায় এখনো পিছিয়ে এটা স্বীকার করতে হবে।

তিনি বলেন, করোনার কারণে সব অসংক্রামক রোগে আমরা জোর দিতে পারিনি। স্বাস্থ্যে যে বাজেট, তার মধ্যে আবার মানসিক স্বাস্থ্যে বরাদ্দ কম।

পরে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সরকারি হাসপাতালে এখন থেকে ডেঙ্গু পরীক্ষায় ১০০ টাকা এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৩০০ টাকা নেওয়া হবে।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। সভাপতিত্ব করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //