পাঁচ বছর পরিত্যক্ত থাকার পর সিলেটের বিয়ানীবাজার গ্যাসক্ষেত্রের ১ নম্বর কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু হচ্ছে। আগামীকাল সোমবার (২৮ নভেম্বর) সকাল থেকে জাতীয় সঞ্চালন লাইনে প্রতিদিন প্রায় ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে।
এর আগে, গত সেপ্টেম্বরে পরিত্যক্ত এই গ্যাসক্ষেত্রে খননকাজ শুরু করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন (বাপেক্স)।
আজ রবিবার (২৭ নভেম্বর) সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের (এসজিএফএল) মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল প্রামাণিক এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আজ (রবিবার) বিকেলে আমরা পরীক্ষামূলক সব কাজ সম্পন্ন করেছি। গ্যাসের চাপ পরীক্ষা (টেস্টিং) শেষে চূড়ান্ত পর্যায়ে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহের জন্য কারিগরি সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে কাল (সোমবার) সকাল থেকেই এই কূপ হতে সঞ্চালন লাইনে গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে।
বিয়ানীবাজার গ্যাসক্ষেত্রটি সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের (এসজিএফএল) আওতাধীন। এই গ্যাসক্ষেত্রের ২ নম্বর কূপ থেকে দৈনিক ৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় সঞ্চালন লাইনে সরবরাহ হচ্ছে।
এসজিএফএল সূত্রে জানা গেছে, বিয়ানীবাজার গ্যাস ফিল্ডের ১ নম্বর কূপ থেকে ১৯৯১ সালে গ্যাস তোলা শুরু হয়। ২০১৪ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৬ সালে আবার উত্তোলন শুরু হলেও ওই বছরের শেষ দিকে আবারও তা বন্ধ হয়ে যায়।
২০১৭ সালের শুরু থেকেই কূপটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। এরপর বাপেক্স ওই কূপে অনুসন্ধানকাজ চালিয়ে গ্যাসের মজুত পায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ সেপ্টেম্বর ওই কূপে নতুন করে পুনঃখননকাজ (ওয়ার্ক ওভার) শুরু হয়।
পুনঃখনন শেষে গত ১০ নভেম্বর থেকে কূপে গ্যাসের মজুদের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। এরপর গ্যাসের চাপ পরীক্ষা শেষে কূপ থেকে দ্রুত জাতীয় সঞ্চালন লাইনে গ্যাস দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়।
এসজিএফএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, বর্তমানে এই কূপের ৩ হাজার ২৫৪ মিটার গভীরে ৭০ বিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস মজুত আছে। গ্যাসের চাপ পরীক্ষার পর দেখা গেছে কূপটি দৈনিক ১০ থেকে ১২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে সক্ষম।
তবে কারিগরি বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে দৈনিক আট মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এতে দৈনিক ১২৫ থেকে ১৩০ ব্যারেল কনডেন্স গ্যাস পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দেশে গ্যাসসংকটের সময়ে এ কূপ থেকে জাতীয় সঞ্চালন লাইনে গ্যাস সরবরাহ একটি আনন্দের সংবাদ উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, বিয়ানীবাজার গ্যাস ফিল্ডের ১ নম্বর কূপে গ্যাস পাওয়া পর আনুষঙ্গিক কাজ দ্রুত শেষ করে জাতীয় সঞ্চালন লাইনে সরবরাহের জন্য বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে। এ জন্য আমরা সফলভাবে কাজটি দুত করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, বিয়ানীবাজারের বিভিন্ন এলাকায় ত্রিমাত্রিক সিসমিক জরিপ চলছে। সেই জরিপ থেকে নতুন গ্যাস ফিল্ড পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
মিজানুর রহমান বলেন, ২০২৫ সাল নাগাদ দেশের সব কোম্পানি প্রায় ৪৬টি কূপ খনন (ওয়ার্ক ওভার) এর মাধ্যেমে ৬১৮ মিলিয়ন গ্যাস বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে এসজিএফএলের আওতায় পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র আছে। এগুলো হলো হরিপুর গ্যাস ফিল্ড, রশিদপুর গ্যাস ফিল্ড, ছাতক গ্যাস ফিল্ড, কৈলাশটিলা গ্যাস ফিল্ড ও বিয়ানীবাজার গ্যাস ফিল্ড।
এর মধ্যে ছাতক গ্যাস ফিল্ড পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। বাকিগুলোর ১২টি কূপ থেকে বর্তমানে প্রতিদিন ৯১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
