ব্যবসায় সবচেয়ে বড় বাধা দুর্নীতি: সিপিডি

দেশে ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে এখনো দুর্নীতিকেই প্রধান বাধা দেখছেন ব্যবসায়ীরা। অবকাঠামো নিয়েও পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন তারা। চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় যোগ হয়েছে আরও নতুন তিনটি চ্যালেঞ্জ। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক জরিপ মতামতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আজ রবিবার (২৯ জানুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে জরিপের ফল প্রকাশ করে সিপিডি। বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ বিষয়ক জরিপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সংস্থার গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

মূলত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম বিশ্বজুড়ে এ জরিপ পরিচালনা করে। গত দুই দশকের মতো এবারও সংস্থাটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশে জরিপটি পরিচালনা করে সিপিডি।

সিপিডি জানিয়েছে, ব্যবসায় পরিবেশ জরিপের সময়কাল ছিল গত বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই। ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকায় অবস্থিত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মতামত নিয়ে জরিপ তৈরি করা হয়েছে।

সিপিডির সমীক্ষায় দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেয়া ৬৪ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যবসায়ী বলেছেন, তাদের ব্যবসায় প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো দুর্নীতি। লাইসেন্স নিতে গিয়ে, কর দিতে গিয়ে এবং বিভিন্ন পরিষেবার জন্য গেলে সেখানে আর্থিক লেনদেন করতে হয়।

অন্যান্য প্রধান সমস্যার মধ্যে রয়েছে, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া এবং অদক্ষ আমলাতন্ত্র। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিতিশীলতা এবং নীতি ধারাবাহিকতার অভাব। এসব কারণে দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি বলে জরিপে জানিয়েছে সিপিডি।

সংস্থাটি বলছে, দেশে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসার পরিবেশ আরও খারাপ হয়েছে। কর্পোরেট গভর্নেন্সের অভাব, দুর্বল নিয়ন্ত্রক তদারকি এবং কর্পোরেট নীতিশাস্ত্রের অভাব প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ খারাপ হওয়ার কারণ।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২-এ ব্যবসার পরিবেশ দুর্বল ছিল। কর কাঠামোতে এখনো ভারসাম্য আনা যায়নি। সড়ক, রেল, নৌ পথে অনেক অবকাঠামো মানসম্মত নয়।

ব্যবসায়ীরা মনে করেন, বিদেশি সহযোগীদের কাছ থেকে গ্রিন সিটি নির্মাণে আলাদা ঋণ আসা উচিত। এতে পরিবেশ দূষণ অনেকাংশে কমবে। আইটি সেবার পরিধি বাড়লেও ডিজিটাল বৈষম্য বাড়ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে ব্যবসায় মাথাচাড়া দিয়েছে মূল্যস্ফীতি, বিদেশি মুদ্রা সংকট ও অস্থিতিশীল নীতির মতো নতুন চ্যালেঞ্জ। এ অবস্থায় ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন ও সুদ হার সীমা উন্মুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।

সিপিডির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের আর্থিক খাতে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত মেনে চলার অংশ হিসাবে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধন, ঋণে সুদ হারের সীমা তুলে নেয়া, বকেয়া ঋণে স্বচ্ছতা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) এবং ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ) এর কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন।

জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিযোগিতা কমিশন, ভোক্তা অধিকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এনবিআর এবং অর্থ মন্ত্রণালয়কে বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে যথাযথ ভূমিকা পালন করা উচিত।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //