জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সভায় যা যা গুরুত্ব পাবে

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সরকার। নির্বাচনের আগে কী ধরনের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে, তা সরকার এখনই আঁচ করতে চায়। এ প্রেক্ষাপটে আজ বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) হতে যাচ্ছে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সভা। সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। 

এছাড়া জঙ্গিবাদের সম্ভাব্য দৌরাত্ম্য, আর তা মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি, হেফাজতে ইসলামের কর্মকাণ্ডে নজরদারি বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হতে পারে সভায়। একই সঙ্গে আলোচনা হতে পারে আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখা এবং গ্রীষ্ম মৌসুমে লোডশেডিং মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়েও।

তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেতে পারে সভায়। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে কোনো বিরোধী দল যেন কোনোভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে তা পর্যবেক্ষণ ও নিবিড় মনিটরিং নিয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া দেশের অভ্যন্তরে বিদেশি দূতাবাসের কর্মকাণ্ড ও কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের আওতায় আসতে পারে। 

এদিকে আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সভায় একটি প্রতিবেদন উপস্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে। এরই ভিত্তিতে নির্দেশনা দেওয়া হতে পারে। তবে গতবারের সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা হবে বলে আভাস পাওয়া গেছে। 

আজকের সভায় গত সভার সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতির বিষয়টিও অগ্রাধিকার পাবে। এর মধ্যে রয়েছে- পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় শান্তি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের অগ্রগতি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এর পাশাপাশি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে। 

গত সভায় বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি বিভিন্ন দূতাবাসে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মচারীদের বিভিন্ন স্থানে বিচরণের ক্ষেত্রে গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে কোনো ধরনের নীতিমালা না থাকার কারণে তাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের কোনো সুযোগ নেই বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে। 

জ্বালাও-পোড়াও করে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম করার অপচেষ্টা করা হলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে বলেও গত সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে পুলিশের সংশ্লিষ্ট সব ইউনিটকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জননিরাপত্তা বিভাগের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ধর্মকে পুঁজি করে যেন কেউ কোনো ধরনের সহিংসতা সৃষ্টি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করতে না পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি কমিউনিটি পুলিশিং ও বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে। জুম্মার প্রাক-খুতবায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী বক্তব্য দেওয়া নিশ্চিত করতে বলা হয়। এ নিয়ে কাজ করছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এ ছাড়াও কোনো ধরনের গুজব ছড়ানো থেকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয় গত সভায় । 

সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে- মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজন তাদের সম্পত্তি বিক্রি করে সে অর্থ দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যয় করছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ ছিল গত সভায়। 

ওই সভায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশও ছিল। আজকের সভায় তার একটি প্রতিবেদন উপস্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়াও কালোবাজারি ও মজুদদারির মাধ্যমে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী চক্র যেন কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে তা নিবিড়ভাবে মনিটরিংয়ের নির্দেশ ছিল গত সভায়। এসব সিদ্ধান্ত কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে তা পর্যালোচনা করা হবে আজকের সভায়। 

উল্লেখ্য, গত বছর নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ১৩ জানুয়ারি। দ্বিতীয় সভা হয় ১৩ জুন। আর এই কাউন্সিলের প্রথম সভা হয় ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয় সভা হয় ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর।

এসব সভায় যেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এর মধ্যে ছিল- বিভিন্ন ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে যেন জঙ্গি কর্মকাণ্ড পরিচালিত না হয় সেদিকে নজরদারি করা। এর পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিবিড় তদারকি করা। বিশেষ করে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘আরসা’র মাধ্যমে যেন কোনো ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম আমাদের দেশে সংঘটিত না হয় তা বিশেষভাবে নজর রাখা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //