তিস্তায় ভারতের খাল খনন, সঙ্কটে বাংলাদেশ

দুটি নতুন খাল খননের মাধ্যমে আবারও তিস্তার পানি প্রত্যাহার করতে চলেছে ভারত। যা বাস্তবায়িত হলে সেচের অভাবে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ব্যহত হবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

আজ  শনিবার (৪ মার্চ) পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ির গজলডোবা তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের অধীনে খাল দুটি খননকাজ শুরু করেছে ভারত সরকার। 

এজন্য গতকাল শুক্রবার প্রায় ১ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করে রাজ্যের সেচ বিভাগ। যার মাধ্যমে কোচবিহার ও জলপাইগুড়ির লক্ষাধিক হেক্টর কৃষিজমি সেচের আওতায় আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তিস্তায় পানি স্বল্পতার দাবিতে সরব মমতা সরকার। তাতে আবারও অনিশ্চয়তায় পড়তে চলেছে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি। দেশের উত্তরাঞ্চলে পানি সংকট নিরসনে প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে তিস্তার পানি দাবি করে আসছে বাংলাদেশ। 

২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে এই চুক্তি বাস্তবায়নের কথা ছিল। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সফরসঙ্গী না হওয়া এবং রাজ্যের স্বার্থ দেখিয়ে সরে আসার কারণেই তা বাস্তবের মুখ দেখেনি।

জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসকের দপ্তরে রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের উপস্থিতিতে প্রায় ১ হাজার একর জমি সেচ দপ্তরকে হস্তান্তর করা হয়। এই জমি তিস্তার বাম তীরে দুটি খাল তৈরি করতে প্রশাসনকে সহায়তা করবে।

তবে কেবল তিস্তা নয়, ভুটান হয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত জলঢাকা নদীর পানিও সেচের কাজে প্রত্যাহার করবে ভারত বলে জানা গেছে।

সেচ দপ্তর জানায়, তিস্তা ও জলঢাকার পানি সরবরাহ করতে গজলডোবা ব্যারেজ থেকে কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধা পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি খাল খনন করা হবে। ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আরেকটি খাল তিস্তার বাম তীরে নির্মিত হবে। প্রশাসন সূত্রে খবর, খালগুলো খনন করা হলে সেখানকার প্রায় এক লাখ কৃষক এই সেচের সুবিধা পাবেন বলে মনে করছে সেচ দপ্তর।

উত্তরবঙ্গের ৯.২২ লাখ হেক্টর কৃষিজমিতে সেচের সুবিধা দেয়ার জন্য ১৯৭৫ সালে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প চালু করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল, খালের মাধ্যমে তিস্তার উভয় পাড়েই সেচের জন্য এই নদীর পানি পাঠানোর। ওই অঞ্চলে প্রবাহমান অন্য নদীর পানিও যাতে সেচকাজে ব্যবহার করা যায়, সেই লক্ষ্যও ছিল।

যদিও কয়েক দশক ধরেই ক্ষতির মুখে পড়েছে প্রকল্পটি। মাত্র ১.০৪ লাখ হেক্টর কৃষিজমিতে সেচের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে এই পানি।

এ বিষয়ে এদিন সেচমন্ত্রী ভৌমিক বলেন, খাল খননের জন্য জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন আমাদের ১ হাজার একর জায়গা হস্তান্তর করেছে। ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকার একে জাতীয় প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা করে। তবে এজন্য প্রয়োজনীয় তহবিল প্রদান করেনি। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে অর্থ না পেলেও পর্যায়ক্রমে আমরা এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার চেষ্টা করব।

এসময় বিজেপিকে নিশানা করে তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গের বিজেপির যে বিধায়করা আছেন, তারা নিজের এলাকার মানুষদের যদি বাঁচাতে চান, তাহলে কেন্দ্রের অনুদান আনুন। আপনাকে যারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, তাদের প্রতি আপনার দায়বদ্ধতা আছে।

সেচ দপ্তর সূত্রের খবর, জলপাইগুড়ির ধুপগুড়ি ব্লকে তিস্তার আরেকটি খালেরও সংস্কার কাজ করা হবে। সেটি ফের সম্পূর্ণ চালু হলে ৩২ হাজার কৃষিজমিতে সেচের কাজের সুবিধা পাওয়া যাবে।

নাম না প্রকাশের শর্তে ওই অধ্যাপক জানান, তার সরকার এখন যেহেতু সেচ প্রকল্পে সম্প্রসারণের চিন্তাভাবনা নিয়েছে, স্বভাবতই এই ঘটনায় স্পষ্ট; তিস্তা থেকে আরও বেশি পানি নতুন খালের মাধ্যমে প্রবাহিত হবে। এর অর্থ গ্রীষ্ম মৌসুমে তিস্তা থেকে বাংলাদেশে আরো কম পানি প্রবাহিত হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //