ডাচ-বাংলার টাকা লুট

দুটি চালের বস্তা ও পাঁচটি ব্যাগে টাকা নিয়ে পালায় ডাকাতরা

রাজধানীর উত্তরায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকাসহ লুট হওয়া চারটি ট্রাংকের মধ্যে ঘটনার দিনই তিনটি ট্রাংক উদ্ধার করা হয়। তবে সেগুলো আংশিক খালি ছিল। গণনার পরে ওই তিন ট্রাংকে সবমিলিয়ে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। বাকি টাকা দুটি চালের বস্তা ও পাঁচটি ব্যাগে ভরে নিয়ে যায় ডাকাতরা। আর কোনও ব্যাগ বা বস্তা না থাকায় টাকাসহ ট্রাংক ফেলে পালিয়ে যায় তারা।

লুটের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও সুনামগঞ্জে আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ।

আজ রবিবার (১২ মার্চ) রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ ও গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের একাধিক টিম বিশেষ অভিযান চালিয়ে আট জনকে গ্রেফতার করেছে। গত ১১ মার্চ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানী ঢাকা ও সুনামগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

ঢাকা থেকে গ্রেফতারকৃতরা হলো— মো. সানোয়ার হাসান (২৮), মো. ইমন ওরফে মিলন (৩৩),  মো. আকাশ মাদবর (২৫) ও সাগর মাদবর (২২)। এছাড়াও সুনামগঞ্জ থেকে গ্রেফতারকৃতরা হলো—  মো. বদরুল আলম (৩৩), মো. মিজানুর রহমান (২০), মো. সনাই মিয়া (২৮) এবং মো. এনামুল হক বাদশা (২৬)।

গত ৯ মার্চ ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বুথে পৌঁছে দেওয়ার জন্য নেওয়া মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেড সিকিউরিটি এজেন্সির গাড়ি থেকে ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা লুট হয়। ঘটনার পরপরই (ওইদিনই) রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে ৯ কোটি টাকা উদ্ধার করার কথা জানায় ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ। যদিও গণনার পরে জানা যায়, সেখানে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছিল। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার শুরু হয়ে।

এরই মধ্যে গতকাল শনিবার (১১ মার্চ) গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ ও গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের বিভিন্ন টিম ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ও সুনামগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করে। এসব অভিযানে আসামিদের গ্রেফতারের পাশাপাশি লুট হওয়া আরও ২ কোটি ৫৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৬ কোটি ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হলো।

অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ জানান, অভিযানে ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) এলাকার বনানী থেকে সানোয়ার হাসান নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয় এবং তার কাছ থেকে ১ কোটি ১৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। একই এলাকা থেকে মো. ইমন ওরফে মিলন নামে আরেকজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে জোয়ার সাহারা এলাকায় তার বাসা থেকেও ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। তাছাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার উত্তরা থেকে আকাশ ও সাগর নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের বাসা থেকে ১ কোটি ৭ লাখ টাকা এবং অপরাধের কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও সুনামগঞ্জ এলাকায় অপর একটি টিমের অভিযানে অন্য চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, গত ৮ মার্চ তারা সিলেট যাওয়ার কথা বলে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে। গত ৯ মার্চ সেই মাইক্রোবাসের চালক কথামতো ভোর সাড়ে ৫টায় কুর্মিটোলা যাত্রীছাউনীর সামনে আসলে আসামিরা তাকে পেছনে সিট ঠিক করার কথা বলে। পরে তিনি পেছনে গেলে হাত পা ও চোখ বেঁধে অচেতন করে ফেলে। পরে টাকা লুট করার উদ্দেশ্যে আসামিরা গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় ওঁৎপেতে বসে থাকে। 

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বুথের জন্য টাকা বহনকারী গাড়িটির নম্বর এবং অন্যান্য তথ্য আগে থেকেই তাদের কাছে ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গাড়িটি কাছাকাছি আসলে তারা অনুসরণ করা শুরু করে। তারা গাড়িটিকে একবার সামনে অতিক্রম করে আবার পেছনে চলে যায়। নির্জন জায়গায় যাওয়ার পর এক পর্যায়ে টক্কর লাগিয়ে তর্কবিতর্ক শুরু করে। পরে গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় তারা।’

সেখান থেকে টাকাসহ গাড়িটি তারা ‘৩০০ ফিট’ এলাকায় নিয়ে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পথে টাকা বহনের দায়িত্বে থাকা পাঁচ জনকে নামিয়ে দেয় তারা। গাড়িতে থাকা ট্রাংকগুলোর মধ্যে দুটি ভেঙে টাকা বের করে তাদের সংগ্রহে থাকা দুটি চাউলের বস্তা ও পাঁচটি ব্যাগ ভর্তি করে তারা। আর ব্যাগ না থাকায় বাকি টাকাসহ বাকি ট্রাংকগুলো ফেলে রেখে চলে যায় তারা।’

তিনি বলেন, ‘গাড়িতেই কাপড় পরিবর্তন করে স্থান ত্যাগ করে তারা এবং যাওয়ার সময়ে তারা গাড়ির ড্রাইভারের সিটেও বড় একটি টাকার ব্যাগ ফেলে যায়। গাড়ির পেছনে অচেতন অবস্থা থাকা চালক সুস্থ হয়ে ওই ব্যাগটি নিজের কাছে রাখে। সেই ব্যাগটি সে পরে তার ভাইয়ের হেফাজতে দেয়। পরবর্তী ওই চালক ও তার ভাইয়ের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাদের বাসা থেকে টাকা উদ্ধার করা হয়। 

আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ডে আবেদন করা হয়েছে জানিয়ে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান বলেন, আসামিদের রিমান্ডে এনে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এদিকে এ ঘটনায় পরিবহনের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১১ কোটি টাকা পরিবহনের সময় ওই প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা অর্থাৎ গার্ডের জন্য অস্ত্রসহ কোনও নিরাপত্তা কর্মী ছিল না। অধিকাংশ সময় এইভাবে অধিক টাকা পরিবহন হয় যা পরিবহনকৃত টাকা নিরাপত্তা বিধানে অপ্রতুল। টাকা পরিবহনের সময় স্থানীয় থানাকে তারা অবহিত করেনি। ডিবির অভিযান চলমান রয়েছে। 

ডাকাতির ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের গ্রেফতার ও বাকি টাকা উদ্ধারের অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন ডিবির কর্মকর্তারা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //