ঈদযাত্রায় এবারও ভোগান্তি

ঈদে প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করা আমাদের দেশে একটা ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এ সময় রাজধানী থেকে অন্তত এক কোটি মানুষ গ্রামে বা অন্যত্র যায়। সারা দেশে জনস্থানান্তর হয় আরও অন্তত চার কোটি। কিন্তু সাময়িক এ স্থানান্তরকে ঘিরে দুর্ভোগ-বিড়ম্বনারও শেষ থাকে না। সড়কে যানজট, কোথাও রয়েছে ফেরি পারাপারে সমস্যা ও সময়ক্ষেপণ। আছে অনিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা।

এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। সড়ক-মহাসড়কগুলোতে দীর্ঘ যানজটের আশঙ্কা করছেন খোদ সংশ্লিষ্টরা। রাজধানী থেকে বের হওয়ার সড়কগুলোতেও মিলতে পারে ভয়াবহ যানজট। কেননা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় চলছে উন্নয়ন কাজ। গত কয়েক দিন ধরে তাই ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার যানজট লেগে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এটা ঈদের সময় যে আরও ভয়ঙ্কর রূপ নেবে, তা সহজেই অনুমেয়।

বিমানবন্দর-গাজীপুর সড়ক নিয়ে দুশ্চিন্তা

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে রাজধানী থেকে বের হয় ও প্রবেশ করে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর বেশির ভাগ যানবাহন। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের হিসাবে, মহাসড়কটির টঙ্গী অংশে প্রতিদিন গড়ে ৪৫ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করে, যা দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। ব্যস্ত এ পথ ধরেই চলছে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের নির্মাণকাজ। কয়েক বছর ধরে চলা এ প্রকল্পের কাজ, জলাবদ্ধতা আর নানা অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের যানজটপ্রবণ সড়কগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর মহাসড়ক। আসন্ন ঈদুল ফিতরেও তাই মহাসড়ক বিভাগের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এ প্রকল্প।

বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। কিন্তু নির্মাণকাজে ধীরগতি, সৃষ্ট খানাখন্দে জলাবদ্ধতা, দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা, প্রকল্প বাস্তবায়নে অব্যবস্থাপনা ও নানা ধরনের অনিয়মের কারণে তীব্র হয়েছে যানজট। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ গত বছর ঈদুল ফিতরের আগে মহাসড়কটির কিছু অংশ নিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিল, বিআরটি করিডোরে টঙ্গী জেনারেল হাসপাতাল, টঙ্গী স্টেশন রোড, ময়মনসিংহ রোড, ভোগড়া এলাকায় বৃষ্টির পানির কারণে ব্যাপক যানজট হয়। জলাবদ্ধতার কারণে এক পাশে দুই লেনের সড়ক এক লেনে পরিণত হয়। বিআরটি করিডোরে সড়ক বিভাজক না থাকায় যেখানে-সেখানে গাড়ি চলাচলের কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত যানজটেরও সৃষ্টি হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিমানবন্দর-গাজীপুর সড়কে এক বছর আগের এসব সমস্যা এখনো বিদ্যমান। অবকাঠামোগত এসব সমস্যার পাশাপাশি বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়কের বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনাকেও যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তারা। তাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, ঈদ উপলক্ষে গাজীপুর এলাকার গার্মেন্টসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানার শ্রমিকরা গাড়ি রিজার্ভ করে। সেই গাড়িগুলো পার্ক করে রাখা হয় রাস্তার পাশে। এ কারণে ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। একই সঙ্গে সড়কে লোকাল বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো, রিকশা-ভ্যানের মতো ধীরগতির যানবাহন চলাচলের কারণেও ঈদের সময় বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়কে যানজট তীব্র হয়ে ওঠে।

ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম যদিও বলেন, ‘বিআরটি করিডোরের কাজ আমরা অনেকটাই শেষ করে এনেছি। বিগত ঈদযাত্রার চেয়ে আসন্ন ঈদুল ফিতরে বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়কে যানজটের তীব্রতা অনেকটাই কম থাকবে। আর ঈদের সময় যেন কোনো জলাবদ্ধতা না হয়, সেজন্য আমরা ঈদযাত্রার আগেই ড্রেনগুলো পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছি।’

তিনি আরও জানান, ঈদযাত্রায় বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়কের যানজট নিরসনে সড়কের বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং শিল্প-কারখানাগুলোর ছুটি আলাদা দিনে করার পরিকল্পনা রয়েছে। 

ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতেও যানজটের শঙ্কা

রাজধানী থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াতে স্বস্তি এনে দিয়েছে পদ্মা সেতু। আর এ পথ দিয়েই তৈরি হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক, যা ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে নামে পরিচিত। যানবাহনের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত এ মহাসড়কে আসন্ন ঈদুল ফিতরের সময় তীব্র যানজট হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়েতে টোলপ্লাজা রয়েছে ছয় স্থানে।  সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব টোলবুথে তিন ধরনের টোল আদায় ব্যবস্থা রয়েছে। ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেম (ইটিসি), টাচ অ্যান্ড গো এবং ম্যানুয়াল (কাউন্টারে টাকা দিয়ে টোল প্রদান)। এছাড়া পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে রয়েছে টোলপ্লাজা, যেগুলোতে ডিজিটাল ও ম্যানুয়াল দুই ব্যবস্থাতেই টোল আদায় হয়। এ কারণেই এক্সপ্রেসওয়েতে তীব্র যানজট হতে পারে। 

মহাসড়ক বিভাগের ১১ সুপারিশ

আসন্ন ঈদযাত্রায় ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে যানজটমুক্ত রাখতে উদ্যোগী হয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এ লক্ষ্যে বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরীর সভাপতিত্বে গত ২০ মার্চ মাওয়া ও জাজিরা এলাকায় আলাদা দুটি বৈঠক হয়। এতে এক্সপ্রেসওয়ে যানজটমুক্ত রাখা ও মানুষর ঈদযাত্রা স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে ১১টি সুপারিশ করেন মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে টোলবুথের সংখ্যা বৃদ্ধি, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান, সুবিধাজনক স্থানে পাবলিক টয়লেট স্থাপন, টোলহার নিয়ে প্রচারণা ও জনগণকে ভাংতি টাকা নিয়ে আসার অনুরোধ এবং টোলপ্লাজাতেও পর্যাপ্ত ভাংতি টাকা রাখা, ডাকাতিপ্রবণ এলাকায় সিসিটিভি স্থাপন ও মাওয়াতে জাতীয় মহাসড়ক এন-৮-এর সংযোগ সড়কের মিসিং লিংকের কাজ দ্রুত শেষ করা। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //