বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষা যুক্তরাষ্ট্রের

বাংলাদেশে আবারও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পাশাপাশি মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচনে জনমতের সত্যিকারের প্রতিফলন ঘটবে বলে আশা করে ওয়াশিংটন। 

বুধবার (৩ মে) ওয়াশিংটনে দুই দেশের নবম অংশীদারত্ব সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থানের প্রতিফলন ঘটেছে। আলোচনায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন ও রাজনীতিবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেন।

আলোচনায় বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুমসহ চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো বন্ধে সরকারের চলমান পদক্ষেপগুলোর সফলতা কামনা করে বাংলাদেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে তাগিদ দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।

বাংলাদেশের তরেফ র‌্যাবের ওপর থেকে বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে দ্রুত হস্তান্তরের দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।

সংলাপ শেষে প্রচারিত এক টুইট বার্তায় মার্কিন প্রতিনিধি দলের প্রধান ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বলেন, যখন আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক গভীর করছি, সেই সময়ে পররাষ্ট্র সচিব মোমেনের (সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন) সঙ্গে বৈঠক হলো। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনসহ মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রচারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছি। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। 

এদিকে নবম পার্টনারশিপ ডায়ালগের যৌথ বিবৃতির বিষয়ে ঐকমত্য না হওয়ায় পৃথক পৃথক বিবৃতি এসেছে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের রিডআউট স্টেটমেন্টে বলা হয়েছে, ৩ মে ২০২৩ তারিখে ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার নবম অংশীদারিত্ব সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট ফর পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন নিজ নিজ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। উভয় পক্ষই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্বের প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। আন্ডার সেক্রেটারি নুল্যান্ড রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আতিথেয়তার জন্য বাংলাদেশকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যকার শক্তিশালী সম্পর্কের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন।

তিনি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্ব এবং বাংলাদেশে মানবাধিকার, শ্রম অধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রচারে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। সেই সঙ্গে দুই দেশের জনগণের সুদৃঢ় বন্ধনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং আরও উজ্জ্বল অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য এর ইতিবাচক পদক্ষেপের ভুয়সী প্রশংসা করেন। 

ওদিকে সেগুনবাগিচার বিবৃতিতে জানানো হয়, বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মিস্টার মোমেন বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে অংশীদারিত্বের ৫০ বছর উদযাপনে প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফর এবং তারও আগে সরকার প্রধানের জাপান সফরের বিষয়ে মার্কিন প্রতিনিধি দলকে অবহিত করেন। তিনি সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বতন্ত্র ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক বিষয়ে ব্রিফ করেন।

মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতা ভিক্টোরিয়া  নুল্যান্ড নিজ নিজ ইন্দো-প্যাসিফিক নথিতে দুই দেশের অভিন্নতার বিষয়ে পয়েন্ট আউট করেন। পররাষ্ট্র সচিব মোমেন তার মার্কিন কাউন্টারপার্টকে বাংলাদেশের স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ প্রশস্তকরণে নির্বাচন কমিশন গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করেন। যুক্তরাষ্ট্রের তরফে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট অঙ্গীকারের পাশাপাশি আসন্ন নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষেণের পথ উন্মুক্ত করার প্রশংসা করা হয়। 

পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশের সাম্প্রতিক মানবাধিকার কর্মকাণ্ডের কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি শেয়ার করেন। তিনি র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে হস্তান্তরের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। রাষ্ট্রদূত নুল্যান্ড বাংলাদেশ সরকারের এই বছরের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পর্যালোচনার ঘোষণাকে স্বাগত জানান। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বর্ধিত বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য শ্রম খাতের সংস্কারের সাথে অব্যাহত অগ্রগতির গুরুত্বের উপর জোর দেন। উভয়পক্ষ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে ক্রমবর্ধমান এবং প্রাণবন্ত ব্যবসায়িক সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা বাংলাদেশে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টদের ব্যবসায়িক ব্যস্ততা বাড়াতে সাইবার নিরাপত্তা এবং ডেটা সুরক্ষায় আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যেতে সম্মত হন। রাষ্ট্রদূত নুল্যান্ড মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অসাধারণ উদারতার প্রশংসা করেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত মানবিক সহায়তার আশ্বাস দেন। পররাষ্ট্র সচিব মোমেন রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিলের সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং সীমিত সংখ্যক রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে গৃহীত নতুন পাইলট প্রকল্প সম্পর্কে অবহিত করেন। উভয়পক্ষই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কিছু রোহিঙ্গার পুনর্বাসন কার্যক্রমকে আরও বাড়াতে সম্মত হন। উভয়পক্ষ জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের মতামত বিনিময় এবং এ বিষয়ে সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেন। 

পররাষ্ট্র সচিব মোমেন আন্ডার সেক্রেটারি নুল্যান্ডকে আগামী বছর ঢাকায় অনুষ্ঠেয় অংশীদারিত্ব সংলাপের দশম রাউন্ডে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান। বৈঠকে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, স্টেট ডিপার্টমেন্টের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ডোনাল্ড লু এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর, হোয়াইট হাউস এবং ইউএসএআইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //