পতাকা ছাড়াই রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে এলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংস্থার (আইএমও) মহাসচিব পদে বাংলাদেশের প্রার্থী ক্যাপ্টেন মঈন আহমেদের পক্ষে সমর্থন চেয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। 

উক্ত বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাপান, রাশিয়া, কানাডাসহ ঢাকায় কর্মরত প্রায় দুই ডজন বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধি অংশ নেন। বিদেশি কূটনীতিকদের গাড়ির সামনে ও পেছনে এ সময় প্রটোকলের গাড়ি থাকলেও তাতে কোনো পুলিশ ছিল না।

তবে লক্ষণীয় বিষয় ছিল, সব দেশের কূটনীতিকরা পতাকাবাহী গাড়িতে এলেও ব্যতিক্রম ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তার গাড়িতে কোনো পতাকা ছিল না।

দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ক্লোজ ডোর ওই ব্রিফিংয়ের পুরোটা সময় উপস্থিত এবং বেশ মনোযোগী ছিলেন পিটার হাস। 

তিনি ব্রিফিংয়ে কোনো প্রশ্ন দূরে থাক, মুখে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি! এমনকি লাঞ্চের সময়ও নয়। অন্য দূতরা অবশ্য মধ্যাহ্নভোজে পরিবেশিত মৌসুমী ফল আমের উচ্চসিত প্রশংসা করেছেন।

বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রদূতরা গাড়িতে পতাকা তুলতে পারবেন না— এমন কোনো নির্দেশনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেই।

কূটনীতিকদের বৈঠকে ‘বাড়তি নিরাপত্তা’ বাতিল প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটি নিয়ে আলোচনার সুযোগও নেই। কারণ এটি ইস্যুভিত্তিক, আমরা শুধু নির্বাচন (আইএমও) নিয়ে আলোচনা করেছি।

তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব ও আমি কথা বলেছি। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেও ব্যাখ্যা দিয়েছি। কূটনীতিকদের নিরাপত্তা পৃথিবীর অনেক দেশের চেয়ে অনেক ভালোভাবে, দক্ষতার সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী, সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অব্যাহতভাবে দিয়ে যাচ্ছে, ভবিষ্যতেও দিয়ে যাবে।

সম্প্রতি সরকার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, সৌদি আরবসহ ছয়টি দেশের কূটনীতিকদের নিরাপত্তায় কয়েক বছর আগের নেওয়া বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা (পুলিশ এসকর্ট) প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে কোনো দূতাবাস চাইলে নিজ খরচে ‘ব্যাটালিয়ন আনসারের’ মাধ্যমে ওই সুবিধা নিতে পারবে বলে জানান হয়।

এর আগে গত বুধবার (১৭ মে) পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানান, বিকল্প নিরাপত্তা সুবিধার বিষয়ে দূতাবাসগুলোকে কূটনৈতিক পত্র (নোট ভারবাল) দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।

কূটনৈতিক পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রগতির বিষয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, এটি আমাদের নিয়মিত কার্যপরিধির একটা অংশ এবং সবাইকে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে যে প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে, সে ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছি। আমরা এ বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে চাই না।

এদিকে বাংলাদেশের ওপর যারা নিষেধাজ্ঞা দেবে, তাদের কাছ থেকে কেনাকাটা করব না—গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে পরিশোধিত চিনি কেনার একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয় সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে।

এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বক্তব্য নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করার সক্ষমতা আমার নেই।

ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের কথা তুলে ধরে শাহরিয়ার বলেন, আমরা শক্তিশালী বাণিজ্য অংশীদার। একে অপরের নীতির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে। আমাদের নিয়মিত আলাপ-আলোচনা আছে এগুলো আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে সামনের দিনে; কিন্তু ভবিষ্যতে এটি পরিবর্তন হলে আপনাদের সময়মতো জানিয়ে দেওয়া হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //