ভারি বর্ষণের সতর্কবার্তা, বন্যার আশঙ্কা

ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি বর্ষণের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। অন্যদিকে ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে আগামী ৭২ ঘণ্টা মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। 

আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে দেওয়া ভারি বর্ষণের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বুধবার (১৪ জুন) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি (৪৪-৪৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারি (৮৯ মিলিমিটার বার তারও বেশি) বর্ষণ হতে পারে।

অন্যদিকে আজ বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর অবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। 

এতে বলা হয়েছে, উজানে ও দেশের অভ্যন্তরে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব প্রধান নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। 

আবহাওয়া সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উজানে ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।

এতে এ অঞ্চলের নদ-নদীর (সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই, সারিগোয়াইন, ঝালুখালি, ভোগাই-কংশ, সোমেশ্বরী, যাদুকাটা) পানি দ্রুত বাড়তে পারে এবং বিপদসীমা পার হয়ে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার কয়েকটি নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।

গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা) সিলেটে ২৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলেও জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

জুন মাসের পূর্বাভাস

জুন মাসের জন্য বন্যা পূর্বাভাস সম্পর্কিত বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এতে বলা হয়, জুন মাস দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, ধরলা, তিস্তাসহ সব প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল অব্যাহতভাবে বাড়তে পারে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে যমুনা নদী বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে।

আগামী দুই সপ্তাহ, গঙ্গা-পদ্মা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময়ে পানি সমতল বিপৎসীমা অতিক্রম করে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

আগামী দুই সপ্তাহে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারাসহ সব প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল বাড়তে পারে। উজানে ভারি বর্ষণের কারণে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলেও পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকা এবং উপকূলীয় অঞ্চলে আগামী দুই সপ্তাহ হালকা থেকে মাঝারী বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হতে পারে। এই সময়ে ঘূর্ণিঝড়/জলোচ্ছ্বাস কিংবা বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই ।

বিশেষ পূর্বাভাস প্রতিবেদনে বলা হয়, জুন মাসের প্রথমার্ধ থেকে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর প্রভাব বিস্তার করায় দেশে ও উজানের অববাহিকার স্থানগুলোতে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বেড়েছে। বিশেষ করে চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ সময় দেশের উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি উল্লেখযোগ্য বেড়েছে।

দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর জন্য অববাহিকাভিত্তিক ধারণাগত পূর্বাভাসও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।

ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা

ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বর্তমানে স্বাভাবিক গতিতে বাড়ছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ও উজানের অববাহিকায় ভারতের অরুণাচল, আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের ওপর বর্তমানে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় অবস্থায় থাকায় ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাত প্রবণতা বাড়ছে। এর ফলে জুন মাসের দ্বিতীয়ার্ধে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি সমতল উল্লেখযোগ্যহারে বাড়তে পারে এবং চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে এ অববাহিকার পানি সমতল বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে।

এছাড়া, এ সময়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা ধরলাসহ অন্যান্য প্রধান নদীগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান থাকতে পারে। তবে, উজানে হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গে স্বল্পমেয়াদি ভারি বৃষ্টিপাতের পরিপ্রেক্ষিতে তিস্তা নদীর পানি সময় বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে এবং বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে।

গঙ্গা অববাহিকা

গঙ্গা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে, অপরদিকে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি পদ্মায় প্রবেশ করায় এ নদীর পানি সমতল বাড়ছে এবং যা জুন মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। তবে, এ সময়ে পানি সমতল বিপৎসীমা পার হয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

মেঘনা অববাহিকা

বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্যানুযায়ী, জুনের শেষার্ধে বাংলাদেশর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ও তৎসংলগ্ন উজানে আসাম, মেঘালয় ও বরাক অববাহিকায় সামগ্রিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এরই মধ্যে উজানে ও দেশের অভ্যন্তরে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি দ্রুত বাড়ছে।

আবহাওয়া সংস্থাগুলোর পূর্বাভাসের উদ্ধৃত্তি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী পাঁচদিন দেশের উজানে ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।

এ সময়ে এ অঞ্চলের নদ-নদীগুলোর (সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই, সারিগোয়াইন, ঝালুখালি, ভোগাই কংশ, সোমেশ্বরী, যদুকাটা) পানি দ্রুত বাড়তে পারে এবং বিপৎসীমা অতিক্রম করে সিলেট ও সুনামগঞ্জের কয়েকটি নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।

দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকা

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আগামী পাঁচদিন দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকা অঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে এ সময়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

উপকূলীয় অঞ্চল

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আগামী সাতদিন উপকূলীয় অঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে, তবে এ সময়ে কোনো ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা নেই।

এদিকে সিলেট বিভাগের নদীগুলোতে পাহাড়ি ঢল ও বন্যার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ।

আজ বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সকালে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ আশঙ্কার কথা জানান। একইসঙ্গে তিনি বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন।

তিনি লেখেন, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলা ও মেঘালয় পর্বতের সীমান্তবর্তী স্থানে (চেরাপুঞ্জি নামক স্থানে) খুবই ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৪ জুন দুপুর পর্যন্ত।

এরপর ১৪ জুন দিবাগত মধ্যরাতের পর থেকে আজ ১৫ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত আবারও ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে ও এখনও চলছে।


>> আজ বৃহস্পতিবার দিন শেষে সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী স্থানের নদীগুলোতে পাহাড়ি ঢল নামা শুরু হওয়ার প্রবল আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে।

>> আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত ১০ দিনে সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর ওপর ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নির্দেশ করছে আবহাওয়ার সব পূর্বাভস মডেল।

>> আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলা ও মেঘালয় পর্বতের সীমান্তবর্তী স্থানে (চেরাপুঞ্জি নামক স্থানে) ১০০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করছে প্রধান-প্রধান আবহাওয়ার পূর্বাভাস মডেলগুলো।

শেষে তিনি লেখেন, উপরের পূর্বাভাস সঠিক হলে সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে একটি মাঝারি মানের বন্যার প্রবল আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে ১৬ জুন থেকে ২৫ জুনের মধ্যে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //