পদ্মা সেতুর ব্যয় বাড়লো ১১শ কোটি টাকার বেশি

চালু হওয়ার এক বছর পর পদ্মা বহুমুখী সেতুর ব্যয় ১ হাজার ১১৭ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার ৫৮০ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার (২২ জুন) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়।  

পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান গণমাধ্যমকে বলেন, সেতু বিভাগের অধীন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ (তৃতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্পের মূল সেতু নির্মাণ কাজের ভেরিয়েশ বাবদ অতিরিক্ত এক হাজার ১১৭ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার ৫৮০ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমানে পদ্মা সেতু নির্মাণ ব্যয় ৩৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর সাথে এখন নতুন করে আরও ১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা যোগ হচ্ছে। ২০০৭ সালে প্রথম প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আন্তর্জাতিক নকশা প্রণয়নকারী ডিজাইন প্রতিষ্ঠান ‘ম্যাউনসেল এইকম’ মূল সেতুর নদীর মধ্যে অবস্থিত ৪০টি পিয়ারের মধ্যে ১০টি পিয়ারে সয়েল টেস্ট করে ডিজাইন প্রণয়ন করে।

ডিজাইন রিপোর্টে বাস্তব কাজের সময় প্রতিটি পিয়ারে আলাদাভাবে সয়েল টেস্ট ও লোড টেস্ট করে সেতুর কাজ সম্পাদনের নির্দেশনা দেয়া ছিল। পরবর্তীতে বাস্তব কাজ করার সময় ২২টি পিয়ারে মাটির গুণগত মান নরম হওয়ায় পাইল পুনঃডিজাইনের প্রয়োজন হয়।

পুনঃডিজাইন প্রণয়ন ও আনুষঙ্গিক কাজ করতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৪৩ মাস বেশি সময় লাগে। ঠিকাদার কাজের অতিরিক্ত ৪৩ মাস সময় বৃদ্ধিজনিত কারণে ১৩৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয় বেড়ে যায়।

দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, মূল সেতুর কাজের সময় বৃদ্ধি পাওয়ায় ঠিকাদারের বিদেশ থেকে আমদানি করা বৃহৎ আকৃতির ক্রেন, হ্যামারসমূহ প্রকল্প এলাকায় ৪৩ মাস অতিরিক্ত অবস্থান করাতে হয়েছে। ফলে যন্ত্রপাতির ভাড়া, ওয়েটিং চার্জ, ব্যবস্থাপনা খরচ ইত্যাদি খাতে ব্যয় বেড়েছে ৭৭০ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

তৃতীয়ত, মূল সেতুর ২২টি পিয়ারের ডিজাইন পরিবর্তনের কারণে ৬টি পাইলের পরিবর্তে ৭টি পাইল করার প্রয়োজন হয়। ২২টি পাইল বাড়ার কারণে ব্যয় বেড়েছে আরও ৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

চতুর্থত, মাওয়া প্রান্তের মাটির লিকুইফিকেশন সমস্যা থাকায় ভূমিকম্পজনিত ক্ষতি প্রতিরোধের জন্য ভায়াডাক্টের পাইলে স্কিন গ্রাউটিং করার জন্য ব্যয় বেড়েছে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। পঞ্চমত, ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ লাইনের টাওয়ারের জন্য ফাউন্ডেশন প্লাটফর্ম নির্মাণে ব্যয় বেড়েছে ৪০৭ কোটি ৮৯ টাকা।

অন্যান্যের মধ্যে চুক্তিকালীন মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ছিল ৭৮ টাকা ৩০ পয়সা। প্রতি বছর ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে ঠিকাদারের বৈদেশিক মুদ্রায় অতিরিক্ত ১০৫ কোটি ৪ লাখ মার্কিন ডলার পরিশোধের জন্য ব্যয় বেড়েছে ১৯৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

এ ছাড়া সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে ভ্যাট ও আয়কর হার ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর ফলে ব্যয় বেড়েছে ৩১০ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

সূত্র মতে, উল্লেখিত আইটেমে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল সেতু নির্মাণে মোট ১ হাজার ৮৭৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বেড়েছে। অন্য দিকে, বেশ কয়েকটি বিলে ৩৫০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা খরচ কমেছে।

এ ছাড়া সেতুর কাজের জন্য অতিরিক্ত ভ্যাট ও আয়কর ৪০৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যতীত নিট ব্যয় বেড়েছে ১ হাজার ১১৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //