কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ হবে আজ

এবারের পবিত্র ঈদুল আজহায় সারা দেশে এক কোটি ৩০ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে বলে জানিয়েছে প্রাণী ও পশু সম্পদ অধিদপ্তর। আর সেজন্য কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণে আজ রবিবার (২৫ জুন) সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠক শেষে চলতি বছরের চামড়ার দাম ঘোষণা করা হবে।

গত কয়েক বছরের কাঙ্ক্ষিত দাম না মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চামড়া ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে এবারও এমন শস্কার কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। তাই কোরবানির চামড়ার দাম ঠিক রাখতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে এ সংক্রান্ত কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জানা গেছে, গত বছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৫২ টাকা, খাসির চামড়া ২১ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বাজারে এর প্রভাব ছিল না। নির্ধারিত দামে চেয়ে অনেক কম দামে চামড়া বিক্রি করতে হয় গ্রাহকদের। ১ লাখ ২০ হাজার টাকার গরুর চামড়া তিনশ টাকা দাম বলায় অনেক সেই চামড়া ফেলে নষ্ট করে দিয়েছে।

ট্যানারি মালিকরা বলছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে লোন না পাওয়া, বিদ্যুৎ, পানি ও লবণের দাম বাড়া, ঈদকে কেন্দ্রিক এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগীর কারণে কয়েক বছর ধরে চামড়া খাতে নৈরাজ্য চলছে। এসব কারণে গত বছর ছোট ও মাঝারি ট্যানারিগুলো সক্ষমতার চেয়ে বেশি কাঁচা চামড়া কেনায় ৩০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়েছিল। দেশের অনেক ট্যানারি বিভিন্ন শ্রেণিবদ্ধ হয়ে গেছে। সচল আছে ১০ থেকে ১৫টি। যেসব ট্যানারি ক্লাসিফাইড হয়ে গেছে, সেসব ট্যানারি সচল না হলে এ শিল্পের সংকট কাটবে না।

ঈদের দিন থেকে আগামী তিন মাস নিরবচ্ছিন্ন বিদুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের নেতারা সম্প্রতি বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ দাবি জানান। তারা বলেন, কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করার ট্যানারিগুলোতে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ না থাকলে পানি ওঠানো যায় না। অন্যান্য প্রক্রিয়া সমস্যা হয়। তাই আগামী তিন মাস ট্যানারি এলাকা সম্ভব না হলে শুধু ট্যানারিগুলোতে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে হবে।

বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে ওই বৈঠকে লবণ ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর দেশে সর্বোচ্চ ২২ লাখ ৩২ হাজার ৮৯০ টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। এবারও গত বছরের চেয়ে বেশি লবণ উৎপাদন হয়েছে। ফলে এবার লবণের সংকট হবে না এবং দামও কম হবে।

ঈদের পর লবণ নিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাবি করে ট্যানারি মালিকরা ঈদের সময় লবণের কৃত্রিম সংকট যাতে না হয় সে জন্য লবণ আমদানির অনুমতি দেওয়ার দাবি জানান।

এদিকে চামড়ার যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ঘাটতির ফলে দীর্ঘ সময় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি আয়ের খাত চামড়াশিল্পের এখন বেহাল দশা। বিশ্ববাজারে বিশাল চাহিদার পরও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে সম্ভাবনাময় এই শিল্প যথাযথভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় গত বছরও অব্যবস্থাপনায় প্রায় ৩০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়। এজন্য চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কিছু নির্দেশনা দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

পশুর চামড়া সঠিকভাবে ছাড়ানোর পদ্ধতি

• চামড়া ছাড়ানোর সময় প্রথমেই পশুর সামনের এক পা থেকে বুকের ওপর দিয়ে অন্য পা পর্যন্ত লম্বালম্বিভাবে এবং পেছনের এক পা থেকে অন্য পা পর্যন্ত লেজের গোড়া থেকে প্রায় ৪-৬ ইঞ্চি ওপর দিয়ে লম্বালম্বিভাবে কাটতে হবে। একই সঙ্গে চামড়ার জবাই স্থান থেকে পেটের ওপর নিয়ে লেজের গোড়া পর্যন্ত লম্বালম্বিভাবে কাটতে হবে।

• পশু জবাইয়ের পর চামড়া আড়াআড়ি কাটার জন্য চালের মধ্যে ছুরি এবং চামড়া ছাড়ানোর জন্য অবশ্যই বাঁকানো মাথার চুরি ব্যবহার করতে হবে।

• কোরবানির পশু জবাইয়ের পর রক্তমাখা চুরি কোনোভাবেই পশুর চামড়ায় মোছা যাবে না, এতে চামড়ার ক্ষতি হতে পারে।

• কাঁচা চামড়ার বড় ধরনের ত্রুটি (লেস-কাট); যা অসতর্কতা, অজ্ঞতা ও ভুল চুরি ব্যবহারের মাধ্যমে হয়ে থাকে। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, সতর্কতা ও বাঁকানো মাথার ধারালো ছুরি ব্যবহার করে লেস-কাট হ্রাস করা সম্ভব।

কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ পদ্ধতি

• চামড়া ছাড়ানোর পর লবণ দিয়ে সংরক্ষণের পূর্বে অবশ্যই চামড়ায় লেগে থাকা চর্বি, মাংস, মাটি এবং গোবর ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে চামড়ার পানি করিয়ে লবণ প্রয়োগ করতে হবে।

• কাঁচা চামড়া ছাড়ানোর পর সংরক্ষণের জন্য (গরুর চামড়ার ক্ষেত্রে ৭-৮ কেজি এবং ছাগল/ভেড়ার চামড়ার ক্ষেত্রে ৩-৪ কেজি) লবণ প্রয়োগ করতে হবে। লবণ এমনভাবে প্রয়োগ করতে হবে যেন চামড়ার ফ্লেশ সাইডের কোনো অংশ ফাঁকা না থাকে, লবণ সমভাবে চামড়া ছড়িয়ে নিতে হবে।

• চামড়া ছাড়ানোর ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যে অবশ্যই লবণ লাগাতে হবে এবং সংরক্ষণের জায়গা একটু ঢালু হতে হবে যেন চামড়া থেকে পানি ও রক্ত সহজেই গড়িয়ে যেতে পারে।

• লবণ দেওয়া চামড়া এমন জায়গায় রাখতে হবে, যেন রোদ বা বৃষ্টির পানি না লাগে এবং বাতাস চলাচল স্বাভাবিক থাকে।

সাত দিন স্থানীয়ভাবেই চামড়া সংরক্ষণ করতে হবে

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জানিয়েছে, কাঁচা চামড়া যাতে নষ্ট না হয় তার জন্য কোরবানির পর সাত দিন স্থানীয়ভাবেই সংরক্ষণ করতে হবে। এই সাত দিন বাইরে থেকে ঢাকায় এবং ঢাকা থেকে বাইরে কোনো চামড়া পরিবহন করতে দেওয়া হবে না। এ জন্য সরকারের জননিরাপত্তা বিভাগ, বিজিবি এবং পুলিশের সর্বোচ্চ নজরদারি থাকবে। চামড়ার চোরাচালান ঠেকাতে সীমান্তসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় তদারকি বাড়ানো হবে। এ ছাড়া সচেতনতামূলক পোস্টার ব্যবহারসহ সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচার বাড়ানো হবে।

কসাইদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে

কোরবানির চামড়ার যথাযথ সংগ্রহে চলতি বছর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সারা দেশে জেলা ও উপজেলায় এক দিনের জন্য কসাইদের প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। এতে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনকে (বিটিএ) সম্পৃক্ত করা হবে। এছাড়াও সাভারের কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির দক্ষতা বাড়ানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা ঈদুল আজহার আগেই শেষ হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //