প্রথমবার গভীর সমুদ্র থেকে পাইপলাইনে তেল খালাস শুরু

দেশে প্রথমবারের মতো গভীর সমুদ্রের মুরিং থেকে ১১০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন দিয়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল খালাস করা হচ্ছে। আজ রবিবার (২ জুলাই) দুপুরের দিকে সৌদি আরব থেকে আনা ৮২ হাজার মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল পরীক্ষামূলকভাবে ইস্টার্ন রিফাইনারি প্ল্যান্টে নেওয়া শুরু হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, অনেক উন্নত দেশকে টেক্কা দিয়ে গভীর সাগর থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল খালাসের যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ।

তিনি আরও জানান, ১১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন দিয়ে এই তেল আসবে চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারীতে। ৮ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের কারণে তেল খালাসের সিস্টেম লস ও খরচ কমার পাশাপাশি সময় ২৫ দিন কমে মাত্র ২ দিনে নেমে আসবে।

প্রকল্পের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নে উপকূল থেকে ছয় কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) স্থাপন করা হয়েছে। এসপিএম থেকে ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের দুটি আলাদা পাইপলাইনের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল ও ডিজেল আনলোডিং করা হবে।

১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সেই পাইপলাইন প্রথমে  তেল নিয়ে আসা হবে কালারমারছড়ার সোনারপাড়া সিএসটিএফ বা পাম্প স্টেশন অ্যান্ড ট্যাঙ্ক ফার্মে। পাইপলাইন কমিশনিং করার পর সেখানে থাকা হেজ, সার্কিট বাল্ব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।

এরপর স্টোরেজ থেকে বিভিন্ন পাম্পের মাধ্যমে ৭৪ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল চলে যাবে আনোয়ারা উপজেলার সমুদ্র উপকূলে। সেখান থেকে আবার ৩৬ কিলোমিটার পাইপলাইন পাড়ি দিয়ে তেল নিয়ে যাওয়া হবে পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারিতে।

ইস্টার্ন রিফাইনারির এমডি লোকমান হোসেন বলেন, এসব পাইপলাইনে ২০ হাজার টন ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। এসপিএম থেকে মহেশখালীতে এসে যেখানে পাম্প হবে, সেখানে দুই লাখ টন ধারণ ক্ষমতার একটি স্টোরেজ নির্মাণ হয়েছে। এর মধ্যে ক্রুড অয়েল থাকবে এক লাখ ২৫ হাজার টন। বাকি ৭৫ হাজার টন হবে ডিজেল বা পরিশোধিত তেল।

এই পাইপলাইন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে তেলের সংরক্ষণ ক্ষমতাও বেড়েছে। বর্তমানে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে ৫ লাখ টন সংরক্ষণ ক্ষমতা আছে। এর মধ্যে ক্রুড অয়েল সংরক্ষণ ক্ষমতা দুই লাখ ২৫ হাজার টন। বাকিটা পরিশোধিত তেল রাখার স্টোরেজ।

দেশের একমাত্র রাষ্ট্রয়াত্ত প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি বছরে ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন করতে সক্ষম। সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন (এসপিএম) প্রকল্প প্রতিষ্ঠানটির দ্বিতীয় ইউনিট। এটি চালু হলে পরিশোধন ক্ষমতা ৪৫ লাখ টনে উন্নীত হবে।

এর আগে, ২০১৫ সালে পাইপলাইন বসানোর প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। মোট চার হাজার ৯৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকায় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা থাকলেও; ইতোমধ্যেই প্রকল্পের মেয়াদ তিনবার বাড়ানো হয়। এর সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়ও বেড়ে সাত হাজার ১২৫ কোটি টাকায় ঠেকেছে। এর মধ্যে চার হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিচ্ছে চীন সরকার।

এ ছাড়া বিপিসি এক হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার ৬০১ কোটি টাকা দিচ্ছে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে। প্রকল্পের অধীনে এক সেট এসপিএম-পিএলইএম, একটি ভাসমান বয়া, ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইন যুক্ত করা আছে যার মধ্যে ১৪৬ কিলোমিটার সাগরের তলদেশ দিয়ে এবং ৭৪ কিলোমিটার পাইপলাইন উপকূল দিয়ে যুক্ত করাসহ দুই লাখ ৮৮ হাজার ঘনমিটারের ছয়টি স্টোরেজ ট্যাংক, তিনটি ব্লক ভালব স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে।

মহেশখালী কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক  বলেন, মহেশখালীতে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং বা এসপিএম প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ। রবিবার দিবাগত রাতে এসপিএম প্রকল্পে আমদানি করা অপরিশোধিত তেল আনলোডের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে। এরই মাধ্যমে জ্বালানি ব্যবস্থাপনার নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

প্রসঙ্গত, আগামী আগস্ট মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসপিএম প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেনে বলে আশা করা যাচ্ছে।

গভীর সমুদ্রের মুরিং থেকে  পাইপলাইন দিয়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল খালাস। ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //