ড. ইউনূসের মামলা পর্যবেক্ষণের অনুরোধ হিলারি ক্লিনটনকে

সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে বাংলাদেশে এসে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলা মামলার বিচারকার্য পর্যবেক্ষণের অনুরোধ জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

আজ বুধবার (৩০ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের মাধ্যমে তিনি এই অনুরোধ জানান। 

দুদক আইনজীবী বলেন, শ্রম আদালতে এলেই বুঝতে পারবেন ড. ইউনূস শ্রমিকদের সঙ্গে কী ধরনের প্রতারণা করেছেন এবং কীভাবে তাদেরকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। না দেখে সমালোচনা করাটা আমাদের সঙ্গে এক ধরনের অন্যায়।

দুদকের এই আইনজীবী বলেন, আমি কথা দিচ্ছি, আপনি (হিলারি ক্লিনটন) এলে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। আপনি যে কাগজপত্র চাইবেন সব কাগজপত্র দেওয়া হবে। শ্রম আদালত এবং হাইকোর্টের রায়ের কপি দেখানো হবে আপনাকে। সব কিছু দেখে পর্যবেক্ষণ করে আপনি আলোচনা-সমালোচনা করুন। না বুঝলে আপনি দুইজন এক্সপার্ট নিয়ে আসুন। তারপরে আপনি আপনার সিদ্ধান্ত দেন।

ফৌজদারি বিশেষজ্ঞ খুরশীদ আলম খান বলেন, না জেনে, না বুঝে শুধুমাত্র আবেগের বশে পর্যবেক্ষণ দেওয়া আপনার মতো একজন নেতাকে মানায় না বলে মনে করি। 

এর আগে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে হয়রানি রুখে দিতে বিশ্বকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান হিলারি ক্লিনটন। গতকাল মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘‘নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তার প্রয়োজনের মুহূর্তে সমর্থন করার জন্য আমার এবং ১৬০ জনের বেশি বিশ্বনেতার পাশে দাঁড়ান। তাকে ‘হয়রানি’ বন্ধের দাবিতে আন্দোলনে যোগ দিন।’’

প্রসঙ্গত, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিতের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন ১৬০ জন বিশ্বনেতা। ওই চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ১০০ জনেরও বেশি নোবেল বিজয়ীসহ রাজনীতি, কূটনীতিক, ব্যবসা, শিল্পকলা ও শিক্ষাক্ষেত্রের অগ্রগণ্য ব্যক্তিরা রয়েছেন। গত সোমবার স্বাক্ষরকারীদের একজন- রেজাল্টস অ্যান্ড সিভিক কারেজের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ডেলি-হ্যারিস এক বিজ্ঞপ্তিতে ওই খোলা চিঠিটি প্রকাশ করেন।

চিঠিতে স্বাক্ষর করা বিশ্বনেতাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্তা, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, মেক্সিকোর সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিসেন্ট ফক্স, সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর, রোটারি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী জন হিয়োকো, উইকিপিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলসের মতো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব রয়েছেন।

এর আগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে চিঠি লেখেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। একদিন পরই ১৬০ বিশ্বনেতা ড. ইউনূস ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি লিখলেন।

চিঠিতে বলা হয়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানবাধিকারের প্রতি যে হুমকি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তা হলো- শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা। আমরা উদ্বিগ্ন, সম্প্রতি তাকে টার্গেট করা হয়েছে। এটা ক্রমাগত বিচারিক হয়রানি বলেই আমাদের বিশ্বাস। এর আগে ৪০ জন বিশ্বনেতা তার নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে আপনার কাছে যে আবেদন করেছিলেন এই চিঠিটি তার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলারই চেষ্টা। আমরা বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, আপনি অবিলম্বে অধ্যাপক ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করুন।

এদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, যারা বিবৃতি দিয়ে তার (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) বিচার স্থগিত করতে বলেছেন তাদের বলছি- বিবৃতি না দিয়ে আইনজীবী পাঠান, এক্সপার্টরা দেখুক অনেক কিছু পাবেন। আমাদের দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। সব কিছুই আইন মতো চলে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মামলাটি চলমান (সাব জুডিস)। আমাদের দেশে আমরা চলমান মামলা নিয়ে আলোচনাও করি না। কারণ এটা সাব জুডিস। যেখানে যেটি নিজের দেশে সাব জুডিস হিসেবে গণ্য করা হয়, সেখানে বাইরের থেকে বিবৃতে এনে মামলা প্রত্যাহার করতে বলা হয়। আমি কে মামলা প্রত্যাহার করার? আমার কী অধিকার আছে? আমার সেই ক্ষমতা আছে? জুডিশিয়াল তো স্বাধীন। আমরা তো হস্তক্ষেপ করতে পারি না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //