‘ভূমি অধিকার ও জলবায়ু পরিবর্তন একই কাতারে আলোচনা করতে চাই’

বর্তমানে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব দেখতে পাচ্ছি তা রোগের উপসর্গ উল্লেখ করে পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, ভূমি অধিকার হলো মানবাধিকার। তাই আমরা সেই মানবাধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে ভূমি অধিকার ও জলবায়ু পরিবর্তনকে একই কাতারে নিয়ে এসে আলোচনা করতে চাই। 

আজ বুধবার (১১ অক্টোবর) জলবায়ু সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন।

এশিয়ান এনজিও কোয়ালিশন ফর অ্যাগ্রেরিয়ান রিফর্ম অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট (এএনজিওসি) এবং অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা ও প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রায় ৮টি দেশের ১৪ জন প্রতিনিধিসহ জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায় থেকে দেশীয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন এই সম্মেলনে।

এ সম্মেলনে উপস্থিত তৃণমূল ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, নাগরিক সংস্থা, শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং অংশগ্রহণকারী ২১টি দেশের (অনলাইনসহ) নাগরিকদের উপস্থিতিতে উন্নত দেশগুলোর প্রতি কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করার দাবি তুলে ধরা হয়।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভূমি অধিকার ও ভূমিতে মালিকানা না থাকলে দরিদ্র মানুষের জীবনে টেকসই উন্নয়ন আসে না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষ যে ক্ষতির সম্মুখীন হয় তার মধ্যে ভূমি সংক্রান্ত সমস্যা ও সংকট সেই ক্ষতিকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

সম্মেলনে যেসব সুপারিশমালা করা হয়েছে-

দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর জোরালো করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক ও সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।

ভূমি সুশাসন, ভূমি সংস্কার এবং ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদে ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকারকে জলবায়ু সহনশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে নিশ্চিত করতে হবে। ভূমির সুরক্ষিত মেয়াদ গ্রামীণ দরিদ্রদের মধ্যে জমি টেকসইভাবে ব্যবহার করার সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।

আদিবাসীদের ভূমি ও সংস্কৃতির অধিকারকে নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের বন, চারণভূমি এবং মৎস্যসম্পদসহ জমি ও প্রাকৃতিক সম্পদে প্রথাগত সুশাসন ও ব্যবস্থাপনাকে সমর্থন করতে হবে। আদিবাসীদের নিজস্ব বলয়ে তাদের ঐতিহ্যগত অধিকার রক্ষায় সরকার এবং নীতিনির্ধারকদের আইন প্রণয়ন করতে হবে।

নারীর ভূমি অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করে এমন লিঙ্গ বৈষম্যমূলক আইন, নীতিমালা এবং রীতিগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারে নারীদের পূর্ণ অংশগ্রহণের বাধাসমূহ নিরসন করতে হবে।

ভূমিভিত্তিক জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন এবং প্রশমনের জন্য সকল অংশীজনদের, বিশেষ করে যারা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ, নীতি ও পদ্ধতি নির্বাচন, মূল্যায়ন, বাস্তবায়ন এবং পর্যবেক্ষণে তাদের পূর্ণ সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যারা বৃহত্তর ঝুঁকি এবং হুমকির সম্মুখীন হয় তাদের অধিকার এবং বেঁচে থাকাকে প্রভাবিত করে এমন সমস্ত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গিকার/প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকারকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত সকল ব্যক্তির অধিকার বজায়, রক্ষা এবং প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আন্তর্জাতিক সীমানায় বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের অধিকারকে মর্যাদা, সুরক্ষা এবং প্রয়োগ করার জন্য নতুন আদর্শ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। শরণার্থীদের অবস্থা সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সনদ তৈরি করতে হবে যেখানে আন্তর্জাতিক সীমানায় বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের মানবাধিকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত ও প্রয়োগ করা হয়েছে। এই বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের গুরুত্ব দিতে বিশ্ব সম্প্রদায় অঙ্গিকারবদ্ধ।

যেহেতু সরকার এবং বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলো জলবায়ু তহবিল প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাই এই তহবিলগুলোকে অবশ্যই স্থানীয় সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছাতে হবে। সহনশীলতা তৈরি করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলার জন্য অবশ্যই সম্প্রদায় চিহ্নিত অগ্রাধিকারগুলোর সাথে সারিবদ্ধ হতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //