শ্রম আইনের সংশোধন প্রস্তাব ফেরত পাঠানোর দাবিতে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি

ত্রি-পক্ষীয় পরামর্শ পরিষদকে (টিসিসি) পাশ কাটিয়ে শ্রম আইন সংশোধনের যে প্রচেষ্টা করা হচ্ছে শ্রম আইন সংশোধনের সেই প্রক্রিয়া বন্ধ করে পুনরায় আলোচনার দাবি করা হয়েছে। 

আজ বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) শ্রম প্রতিমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রেরণ করেছে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। স্কপের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন এই স্মারক লিপি দিয়েছে।

স্মারকলিপি প্রদানের আগে সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক শাহ মো. আবু জাফর। সঞ্চালনা করেন এবং স্মারকলিপি পাঠ করেন অপর যুগ্ম সমন্বয়ক নুরুল আমিন।

বক্তব্য রাখেন- স্কপ নেতা এবং শ্রম আইন সংশোধন কমিটির শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি রাজেকুজ্জামান রতন ও চৌধুরী আশিকুল আলম। 

আরও বক্তব্য রাখেন- স্কপ নেতা আনোয়ার হোসেন, আব্দুল কাদের হাওলাদার, মাহবুবুল আলম, সাইফুজ্জামান বাদশা, শামিম আরা, নইমুল আহসান জুয়েল, আমিরুল হক আমিণ, বাদল খান, সাকিল আক্তার চৌধুরী, আহসান হাবিব বুলবুল, আবুল কালাম আজাদ, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক মোখলেছুর রহমান, নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের প্রকাশ দত্ত প্রমুখ।

সমাবেশে চলতি মাসের মধ্যে উত্থাপিত দাবি মেনে নেয়া না হলে ৫ নভেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রমিক মহাসমবেশের মাধ্যমে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান।

স্মারকলিপিতে নেতারা বলেন, এই বিল ট্রেড ইউনিয়নের গণতান্ত্রিক কর্ম পরিচালনার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ এবং এই ভূখণ্ডের শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল কেড়ে নেয়ার সামিল। এই বিল আইনে পরিণত হলে তা হবে আইএলও কনভেনশনের স্বীকৃত ধর্মঘটের মৌলিক অধিকার এবং আন্তর্জাতিক সুপারিশের পরিপন্থি। 

তারা আরও বলেন, একান্ত বাধ্য না হলে শ্রমিকরা ধর্মঘট করে না, ধর্মঘট করতে চাইলে শ্রম আইনের বিধান মেনে করতে হয় এবং  বেআইনি ধর্মঘটের বিরুদ্ধে শ্রম আইনেই শাস্তির ব্যবস্থা আছে, তা সত্ত্বেও অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল উত্থাপন সাধারণ শ্রমিকদের সন্দেহ ও আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে এবং শ্রমিক অঙ্গনে অসন্তোষের বীজ বপন করেছে।  

তারা বলেন, ত্রি-পক্ষীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে উপেক্ষা করে এই বিল উত্থাপিত হয়েছে। শ্রম সংক্রান্ত যে কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত টিসিসি মিটিংয়ের মাধ্যমে অনুমোদিত হওয়ার কথা। কিন্তু ত্রি-পক্ষীয় কোন সভায় এই বিলের ব্যাপারে কোন আলোচনা হয়নি। এই আইন দেশের সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার গৃহীত নীতিমালা, সুপারিশের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। ফলে এই আইন প্রণীত হলে তা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করবে।

তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ কম মজুরি ও আধিক পরিশ্রমের দেশ হিসেবে পরিচিত। এই বিল আইনে পরিণত হলে দেশি-বিদেশি শ্রম শোষণকারী মালিক এবং কোম্পানিগুলো উৎসাহিত হবে আর শ্রমিকদের প্রতিবাদের শেষ হাতিয়ার না থাকায় তারা অসহায়ের মত নিপীড়ন মানতে বাধ্য হবে এবং দেশের শ্রমিকদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। শ্রমিকদের দরকষাকষি করার অধিকারকে কেড়ে নেয়ার এই বিল আইনে পরিণত হলে তা দেশি-বিদেশি মালিকদের অবাধ লুণ্ঠনকে সহায়তা করবে। এই আইন বাংলাদেশের শ্রম আইন, আইএলও কনভেনশন এবং আন্তর্জাতিক বিধি বিধানে ধর্মঘট করার যে গণতান্ত্রিক অধিকার আছে তা হরণ করবে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল সংসদে উত্থাপনের পর স্কপের পক্ষ থেকে  সমাবেশ, মিছিল, শ্রম প্রতিমন্ত্রী, শ্রম বিষয়ক সংসদীয় কমিটি, সংসদের স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। স্কপের সাথে আলোচনার সময় সংসদীয় কমিটিও স্কপের যুক্তিকে গ্রহণযোগ্য মনে করেছিলেন। শ্রমিকদেরকে ভীতি ও আতঙ্কের মধ্যে রেখে তাদের কাছ থেকে মানসম্পন্ন সেবা আশা করা যায় না। বরং অসহায়ত্ব বৃদ্ধি পায়, অসন্তোষ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

তারা আরও বলেন, এই বিলের মর্মবস্তু এবং সংসদে বিল উত্থাপন প্রক্রিয়া নিয়ে আমাদের উদ্বেগ ও আপত্তি আমরা শেষ ভরসা হিসেবে  আপনার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কাছে বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করছি। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে যে শ্রমজীবীরা শ্রম দিয়ে যাচ্ছে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় আপনার নির্দেশনা আমরা প্রত্যাশা করি।  

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //