হজ প্যাকেজ ঘোষণা

কোটা পূরণ নিয়ে সংশয়

হজের খরচ অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছর হজের কোটা পূরণ হয়নি। এরই মধ্যে আগামী বছরের হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারিভাবে আগামী বছর (২০২৪ সালে) হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। বিশেষ হজ প্যাকেজের মূল্য ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ১৬ জুন (১৪৪৫ হিজরি সালের ৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। আগামী বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি কোটায় ১০ হাজার ১৯৮ জন ও বেসরকারি এজেন্সির কোটা এক লাখ ১৭ হাজার জন হজ পালন করতে পারবেন।

গত বছর সরকারি ও বেসরকারিভাবে একটি প্যাকেজের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে হজ পালন করেছেন বাংলাদেশিরা। চলতি বছর সরকারিভাবে একটি প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে খরচ নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬ লাখ ৭১ হাজার ২৯০ টাকা। আর বেসরকারিভাবে সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয়েছিল ৬ লাখ ৬০ হাজার ৮৯০ টাকা। সাধারণ প্যাকেজে আগামী বছরের হজের খরচ এবারের চেয়ে ৯২ হাজার ৪৫০ টাকা কম।

এখন বেসরকারিভাবে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে। বেসরকারিভাবেও সর্বনিম্ন ব্যয় সরকারি সাধারণ প্যাকেজের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করার নির্দেশনা দিয়েছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। গত ৫ নভেম্বর বেসরকারি হজ প্যাকেজ ঘোষণা দেওয়ার কথা থাকলেও অবরোধের কারণে তা ঘোষণা করতে পারেনি হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। তবে এবার হজের খরচ সাধ্যের মধ্যে থাকা ও কোটা পূরণ হবে কিনা, তা নিয়ে হজ এজেন্সিগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

কোনো কোনো এজেন্সি মালিক জানিয়েছেন, এবার অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে হরতাল-অবরোধ শুরু হয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে কবে মুক্তি মিলবে সেটার কোনো নিশ্চয়তা নেই। স্বাভাবিকভাবেই এ পরিস্থিতিতে মানুষের আয় কমে যাবে। গত বছর থেকে হজের খরচ এবার কিছুটা কমলেও হজে গমনেচ্ছুদের বেশিরভাগেরই সাধ্যের বাইরে থেকে যেতে পারে। তাই এবারও কোটা পূরণ নিয়ে সংশয় রয়েছে। আবার কিছু এজেন্সি মালিক জানিয়েছেন, দিন দিন যেখানে খরচ বাড়ে, সেখানে হজের খরচ প্রায় এক লাখের মতো কমছে। এতে অনেকেই হজে যেতে উৎসাহিত হবেন। তাই কোটা পূরণ হবে যাবে।

এ বিষয়ে হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, অতীতে হজের প্যাকেজে কখনোই এত টাকা কমানো হয়নি। আমরা আশাবাদী হজে যেতে মানুষ উৎসাহিত হবে, কোটাও পূরণ হবে।

হজ প্যাকেজ
গত ২ নভেম্বর সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ‘হজ প্যাকেজ-২০২৪’ ঘোষণা করেন ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। আগামী বছরের জন্য হজে দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার- সাশ্রয়ী সাধারণ প্যাকেজ ও বিশেষ হজ প্যাকেজ। বিশেষ প্যাকেজে অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে মক্কার হোটেলে ২ ও ৩ সিটের রুম নেওয়া যাবে। মক্কায় হারাম শরিফের চত্বর হতে সর্বোচ্চ ৮০০ মিটারের মধ্যে হোটেল, মদিনায় মারকাজিয়া এলাকায় আবাসন ব্যবস্থা, এক রুমে সর্বোচ্চ ৪ সিট থাকবে, মিনায় ‘এ’ ক্যাটাগরির তাঁবুতে আবাসন ও বুফে খাবার ব্যবস্থা এবং মিনা-আরফাহ-মুজদালিফা-মিনায় যাতায়াতে প্রত্যেক হজযাত্রীর জন্য বাসে সিট নিশ্চিত করা হবে। 

আর সাধারণ প্যাকেজে প্রতি রুমে সর্বোচ্চ ৬ সিট থাকবে। প্যাকেজ আপগ্রেডেশনের সুবিধায় অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে মক্কার হোটেলে ২ ও ৩ সিটের রুম গ্রহণ করা যাবে। সাধারণ প্যাকেজের ব্যয় গত বছরের চেয়ে ৯২ হাজার ৪৫০ টাকা কম। দ্রুত বিজ্ঞপ্তি প্রচারের মাধ্যমে হজযাত্রীর নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করা হবে। আগামী বছরের ১ মার্চ থেকে হজ ভিসা ইস্যু শুরু হবে। ৯ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হবে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।

যা বলছেন এজেন্সি মালিকরা
হজ এজেন্সি মালিকরা বলছেন, গত বছরের চেয়ে খরচ যেটি কমানো হয়েছে তা অনেকটা শুভঙ্করের ফাঁকি। কারণ মূল যে খরচের জায়গাগুলো রয়েছে সেখানে কমানো হয়নি। বিমান ভাড়া প্রায় আগের মতোই আছে। সৌদি আরব প্রান্তের খরচও আগের মতো আছে। শুধু বাড়ি ভাড়া কমানো হয়েছে। দূরে       থাকলে তো বাড়ি ভাড়া এমনিতেই কম হয়।  

হজ এজেন্সি আল-নূর ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরসের মালিক মোহাম্মদ শরিয়ত উল্লাহ বলেন, হজ প্যাকেজে যে টাকা কমানো হয়েছে তাতে হাজিদের কোনো লাভ নেই। বাড়ি ভাড়ার খরচ কমিয়ে প্যাকেজের খরচ কমানো হয়েছে। হাজিদের দূরের বাড়িতে রাখা হবে। এতে ভোগান্তি বাড়বে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এবার হজযাত্রীর কোটা পূরণ নাও হতে পারে। এখন পর্যন্ত হজযাত্রীদের সাড়াও তেমন পাওয়া যাচ্ছে না।

যে কারণে আগেভাগে প্যাকেজ ঘোষণা
ডিসেম্বরের শেষ ও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে। তফসিলের পর নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। তাই হজের কাজ এগিয়ে রাখতে চায় সরকার। এজন্য আগেভাগেই প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে কতজন হজে যাচ্ছেন সেই সংখ্যাও ডিসেম্বরের মধ্যে সৌদি আরবকে জানানোর তাগিদ রয়েছে।

সবকিছু মিলেই এবার আগেভাগে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। ধর্ম বিষয়ক সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার বলেন, ‘সৌদি আরব সরকার আমাদের চাপ দিয়েছে যে ডিসেম্বরের মধ্যে হজযাত্রীর সংখ্যা জানাতে হবে। এ নিয়মটা থাকবে কিনা জানি না, আমরা সেই প্রস্তুতিতেই এগোচ্ছি। একজন মানুষ হজে যাবে তার প্রস্তুতির দরকার আছে। তাই আমরা তাদের সেই সময়টা দিচ্ছি।’

বিমান ভাড়া নিয়ে আপত্তি
চলতি বছর বিমান ভাড়া এক লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা নির্ধারণ করে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল। আগামী বছরের হজের বিমান ভাড়া নির্ধারণ হয়েছে এক লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ২ হাজার ৯৯৭ টাকা কম।

হাবের সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘বরাবরই বলেছি, বিমান ভাড়ার ক্ষেত্রে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নয়, একটি স্বতন্ত্র কমিটির মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হবে। বিমান ভাড়া ডেডিকেটেড হজ ফ্লাইটের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো এয়ারলাইন্স যদি সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে হজযাত্রীদের বহন করে সেক্ষেত্রে ভাড়া কম হয়, সেই ভাড়াও যাতে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, আমরা সেই দাবি উত্থাপন করেছি।’

গত ৫ নভেম্বর হাবের সভাপতির সই করা বিমান ভাড়া পুনর্নির্ধারণের আবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ‘বিভিন্ন বিষয়াদি বিবেচনায় বিমান ভাড়া আরও কমানো সম্ভব। যেহেতু বিমান একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, তাই তাদের একক কর্তৃত্বে ভাড়া নির্ধারণ যথাযথ হয়নি বলে হাব কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ মনে করে।’

বর্তমানে এয়ারলাইন্সগুলো প্রায় ৭৫ হাজার টাকায় ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রিটার্ন টিকিট বিক্রি করছে জানিয়ে আবেদনে বলা হয়, ‘সেগুলো প্রায় ২০ শতাংশ আসন খালি রেখে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। হজের সময় প্রায় শতভাগ যাত্রী নিয়ে ফ্লাইট গমন করে। তাছাড়া খালি ফিরতি ফ্লাইটের পরিচালনা ব্যয়ও কম। সাধারণ ফ্লাইটের বিপণন ও সিস্টেম পরিচালনায় অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয়, যা হজের ফ্লাইটে করতে হয় না। সে হিসেবে ডেডিকেটেড হজ ফ্লাইটের ভাড়া সর্বোচ্চ এক লাখ ৫০ হাজার টাকা হতে পারত।’

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে আবেদনে আরও বলা হয়, ‘বর্তমান পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় একটি স্বতন্ত্র টেকনিক্যাল কমিটির মাধ্যমে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমিয়ে হজ প্যাকেজ পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে আপনার সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //