সরব হচ্ছেন মানবাধিকার কর্মীরা, জবাব দেবে সরকার

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কাউন্সিলের এক সভায় আগামীকাল সোমবার (১৩ নভেম্বর) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে। এনিয়ে চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আসবে। এর আগে ২০০৯, ২০১৩ এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালে বাংলাদেশের যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দফার পর্যালোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ বৈঠকে বাংলাদেশ ছাড়াও বাংলাদেশসহ মোট ১৪টি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আসবে।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে বিরোধী নেতাকর্মীদের ঢালাও গ্রেপ্তার, পোশাক কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলন ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্তি প্রয়োগের মতো বিষয়গুলো এবারের পর্যালোচনায় উঠে আসবে।

বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। ইউপিআর ওয়ার্কি গ্রুপের সভায় দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোও অংশ নেয়। এই পর্যালোচনা বৈঠকের জন্য বাংলাদেশ সরকারও একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের কাছে। সর্বশেষ পর্যালোচনার পর থেকে গত পাঁচ বছরে মানবাধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশে কী অগ্রগতি হয়েছে সেটির বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।

সরকারের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালের প্রণীত দুর্নীতি দমন কমিশন আইন সংশোধন করা হয়েছে। এর ফলে দুদক তাদের জেলা পর্যায়ের অফিসের মাধ্যমে নিজেই দুর্নীতির মামলা দায়ের করতে পারে। এতে করে এখন থানায় মামলা করতে হয়না। এতে দুর্নীতি দমন কমিশন বেশি স্বাধীনতা লাভ করেছে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।

বাংলাদেশ সরকার দাবি করেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মানবাধিকারের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেয়। কোন সদস্য আইন ভঙ্গ করে শক্তি প্রয়োগ করলে তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ২০১৫ সাল থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ১৭০০ সদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসময়ের মধ্যে সাড়ে আট হাজার পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বড় ধরণের বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

সরকারের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের কিছু অপব্যবহার লক্ষ্য করেছে সরকার। সেজন্য এর কিছু ধারা সংশোধন করে নতুন সাইবার সিকিউরিটি আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া সাংবাদিকরা যাতে কোন ধরণের হয়রানি ছাড়া এবং ভয়ভীতিমুক্ত পরিবেশে কাজ করতে পারে সেটি নিশ্চিত করার জন্য সরকার বদ্ধপরিকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাব অনুসারে ২০০৬ সালে যখন মানবাধিকার কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন থেকেই ইউনিভার্সেল পিরিওডিক রিভিউ বা ইউপিআর শুরু হয়। এর মাধ্যমে জাতিসংঘের সদস্য ১৯৩ রাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয় প্রতি পাঁচ বছর পর। ইউপিআর প্রতি বছর তিনবার ওয়ার্কি গ্রুপের বৈঠকে বসে। বিশ্বের ৪৭টি দেশের সমন্বয়ে এই ওয়ার্কি গ্রুপ গঠিত। প্রতিটি ওয়ার্ক গ্রুপের সেশনে ১৬টি দেশের মানবাধিকার পর্যালোচনা করা হয়। অর্থাৎ প্রতিবছর ৪৮টি দেশের মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা হয়।

ওয়ার্কিং গ্রুপের আলোচনা ও পর্যালোচনার পরে একটি রিপোর্ট তৈরি করা হবে। এ রিপোর্ট তৈরির সাথে সংশ্লিষ্ট দেশ ও জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সম্পৃক্ততা থাকে। এই রিপোর্টে পুরো আলোচনার একটি সারমর্ম লিপিবদ্ধ করা হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের উত্থাপিত প্রশ্ন, মন্তব্য এবং সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এসব প্রশ্ন ও মন্তব্যের জবাবে সংশ্লিষ্ট দেশ যেসব উত্তর দিয়েছে সেটিও তুলে ধরা হবে। তবে এ পর্যালোচনায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব বিষয় উঠে আসবে সেগুলো বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার পদক্ষেপকে প্রভাবিত করতে পারে।- বিবিসি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //