নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৫২ পিএম
আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:১৫ পিএম
তিন বছরের শিশু সন্তানকে বুকে আঁকড়ে ধরেই পুড়ে অঙ্গার হয়েছেন নাদিরা আক্তার পপি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্ত্রী-সন্তানের এমন মরদেহ দেখে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন পপির স্বামী মিজানুর রহমান। চোখ মুছতে মুছতে তিনি বলছিলেন, কে জানতো এভাবে আমার স্ত্রী-সন্তান আগুনে পুড়ে মরবে। আমরা তো রাজনীতি করি না, রাজনীতির খোঁজও রাখি না। কিন্তু কেন আমার স্ত্রী-সন্তানকে পুড়িয়ে মারা হলো? এর জবাব কে দেবে? কার কাছে বিচার চাইবো?
দুই সন্তান নিয়ে গত ৩ ডিসেম্বর গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায় যান নাদিরা আক্তার পপি (৩৫)। সঙ্গে গিয়েছিলেন নাদিরার ভাই হাবিবুর রহমান (২০)। ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় ফিরতে গতকাল সোমবার রাতে ওঠেন মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে। তবে কে জানতো, এই যাত্রা হবে তাদের অন্তিম যাত্রা। মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোর পাঁচটার পরে রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ওই আগুনে পুড়ে মারা যান নাদিরা আক্তার পপি ও তার তিন বছরের শিশুসন্তান ইয়াসিন। এ ঘটনায় আরও দুজন নিহত হয়েছেন। নিহত ওই দুই পুরুষের পরিচয় এখনো শনাক্ত হয়নি।
তিনি বলেন, আমার স্ত্রী পুড়ে গেছেন তবুও সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে আছেন। পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে, চেনাই দায়। তবুও দেখা যাচ্ছে দুই হাত দিয়ে তিন বছরের সন্তানকে জড়িয়ে ধরে আছেন।
রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় হার্ডওয়্যারের ব্যবসা করেন নিহত পপির স্বামী মিজানুর রহমান। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে পশ্চিম তেজতুরী বাজার এলাকায় বসবাস করতেন। বড় ছেলে রিয়াদ হাসান ফাহিম স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। ছেলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ৩ ডিসেম্বর দুই সন্তান নিয়ে নাদিরা আক্তার পপি যান গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায়। সেখান থেকেই মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে করে ঢাকায় ফিরছিলেন তারা। নাদিরার কলেজপড়ুয়া ছোট ভাই হাবিবুর রহমানও সঙ্গে ছিলেন। তবে ট্রেনে আগুন লাগার পর বড় ভাগনে ফাহিমকে নিয়ে হাবিবুর ট্রেন থেকে নেমে যান। কিন্তু নাদিরা ও ইয়াসিন আটকা পড়ে।
মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, গতকাল রাতে ট্রেনে ওঠার পর স্ত্রীর সঙ্গে শেষবারের মতো কথা হয়। কথা ছিল তারা কমলাপুর স্টেশনে নামবে। সকালে খবর পাই ট্রেনে আগুন লেগেছে। এরপর হাসপাতালে এসে দেখি আমার স্ত্রী-সন্তানকে একটি সাদা ব্যাগের মধ্যে রাখা হয়েছে। পুড়ে মারা যাওয়ার পরও সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে আছেন আমার স্ত্রী। আমি এখন কী করবো, কার কাছে বিচার চাইবো কেউ বলতে পারবে?
ওই ট্রেন থেকে বেঁচে ফিরেছেন নিহত পপির ভাই হাবিবুর রহমান। হাবিবুর বলেন, নেত্রকোনা থেকে ঢাকায় ফিরছিলাম একই পরিবারের ৯ জন। সোমবার রাতে ট্রেনে উঠি। বিমানবন্দর স্টেশনে আমাদের মধ্যে ৫ জন নেমে যান। ট্রেন বিমানবন্দর থেকে কমলাপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। আমরা জ বগিতে ছিলাম। হঠাৎ ঘুম ভাঙলে দেখতে পাই ট্রেনের বগি ভরে গেছে ধোঁয়ায়। আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু হয় চারদিক। তেজগাঁও স্টেশনে ট্রেন থামতেই সবাই হুড়োহুড়ি করে নেমে যায়। এসময় আমার বড় ভাগনে ফাহিমকে নিয়ে আমিও নেমে যাই। কিন্তু আমার বোন নাদিরা আক্তার পপি ও তার তিন বছরের ছেলে ইয়াসিন বের হতে পারেনি। যখন আমার বোনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় তখনো তার বুকে আঁকড়ে ছিল আমার ভাগনে। দুজন একসঙ্গে পুড়ে মারা গেছে। এ এক করুণ দৃশ্য।
ঢামেকে পপির দেবর দেলোয়ার হোসেন টিটুর আক্ষেপ করে বলেন, পরিবারের অন্য পাঁচ সদস্যের মতো সবাই যদি বিমানবন্দর স্টেশনে নেমে যেতো, তাহলে বাচ্চা ও ভাবি বেঁচে যেতেন।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : ট্রেনে আগুন মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস তেজগাঁও স্টেশন রাজধানী তেজগাঁও ট্রেনে নাশকতা নাদিরা আক্তার পপি নেত্রকোনা
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh