সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়লে দারিদ্র্য বাড়ে: গবেষণা

২০১৫ সালে দেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর ফলে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যান বেসরকারি খাতের কম বেতনের অনেক কর্মী। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ইফপ্রি) প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। 

প্রতিবেদনের প্রাথমিক ফলাফল উপস্থাপন করেছেন ইফপ্রির অর্থনীতিবিদ মো. আল-হাসান। তিনি জানান, মজুরি বেড়ে গেলে দারিদ্র্য ১০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) শীতকালীন অর্থনৈতিক সম্মেলনে এই প্রাথমিক গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়। গতকাল শনিবার সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে ‘দারিদ্র্য, অসমতা ও প্রবৃদ্ধি’ বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। ওই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ কে এনামুল হক।

গবেষণাটি উপস্থাপনকালে আল-হাসান বলেন, বেতন বাড়ানোর ফলে দারিদ্য বাড়ানো সরকারের উদ্দেশ্য না হলেও বেসরকারি খাতের স্বল্প দক্ষতাসম্পন্ন অনেক কর্মী সাময়িকভাবে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গিয়েছিলেন।

শুধু সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়লেও বর্ধিত দ্রব্যমূল্যের চাপ সবার ওপরেই পড়ে। কিন্তু বেসরকারি খাতের স্বল্প দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের মজুরি বৃদ্ধির হার কম বলে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জেরে সে সময় এই কর্মীদের অনেকে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যখন জাতীয় বাজেট প্রস্তাব করা হয় এবং সরকারি কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব আসে, তখন সামগ্রিকভাবে পণ্যমূল্য বেশ দ্রুততার সঙ্গে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। দেখা যায়, সরকারি কর্মীদের বেতন বাড়ছে এমন খবর আসামাত্র দ্রুতগতিতে বাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যায়।

আবার বেতন বৃদ্ধির খবরের সঙ্গে যদি বাজেট প্রস্তাবের সময় চলে আসে, তাহলে পণ্যমূল্য আরো বেড়ে যায়। তবে ইফপ্রির এই গবেষক জানান, গবেষণার ফলাফল এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। ২০১০ থেকে ২০১৬-১৭ সালের মধ্যে দেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে দক্ষ কর্মীদের মজুরি বেড়েছে ১৪০ শতাংশ, কিন্তু স্বল্প দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের মজুরি বেড়েছে ৯০ শতাংশ। এর বিপরীতে দেশের সরকারি কর্মীদের মজুরি একই সময়ে বেড়েছে ১৩০ থেকে ১৫৫ শতাংশ।

উপস্থাপনায় বলা হয়, বাজারে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের সরবরাহ কম থাকায় তাঁরা নিজেদের মজুরি বাড়িয়ে নিতে পারেন, কিন্তু স্বল্প দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের সরবরাহ বেশি থাকায় তাঁদের মজুরি তেমন একটা বাড়ে না।

সম্মেলনটি বিআইডিএস, বাংলাদেশ ইকোনমিক রিসার্চ নেটওয়ার্ক ও অ্যাসোসিয়েশন ফর ইকোনমিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ অন বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে।

বিআইডিএসের গবেষক কাজী ইকবাল বলেন, ‘বেতন বৃদ্ধির আগে থেকেই এক ধরনের ধারণা থাকে যে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। তখন মানুষ নিজে থেকেই মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করে দেন। সে জন্য প্রত্যাশিত মূল্যবৃদ্ধি ও অপ্রত্যাশিত মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পৃথকভাবে করা গেলে ভালো হয়।’

জবাবে গবেষক মো. আল-হাসান বলেন, ‘এ গবেষণায় সব ধরনের কর্মীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাঁদের মজুরি ২০১০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কর্মী বা কারখানার শ্রমিকদের আলাদা করা হয়নি।’ তবে দারিদ্র্য বাড়ার বিষয়টি সাময়িক বলে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রথম অধিবেশনের প্রথম গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আমিন মাসুদ আলী। ‘স্থানীয় সরকারের ইউনিট খণ্ডিত করা হলে কি দারিদ্র্য বিমোচন হয়’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার ইউনিট খণ্ডিত করার কারণে দারিদ্র্যে কী প্রভাব পড়ে, তা নিয়ে গবেষণা হয়নি। সেই বাস্তবতা থেকে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে, এর ফল কী হয়। স্থানীয় সরকারের ইউনিট খণ্ডিত করা হলে প্রাথমিকভাবে দারিদ্র্য কিছুটা কমতে পারে, কিন্তু খণ্ডিতকরণ নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলে পরবর্তীকালে দারিদ্র্য আবার কিছুটা বাড়তে পারে।’

প্রথম অধিবেশনে তৃতীয় গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আহমেদ সাদেক ইউসুফ। তাঁর গবেষণাপত্রের শিরোনাম ছিল ‘থ্রি সিগন্যাল মডেল ব্যবহার করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পরিমাপ।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //