অফিস ফাঁকি দিয়ে আন্দোলনে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা

বাংলাদেশ অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশনের (বিভিএ)।

গতকাল মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর চত্বরে অবস্থান নিয়ে প্রায় চার ঘণ্টারও বেশি সময় অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অন্তত ১০ জন কর্মকর্তাকেও সমাবেশে সক্রিয় দেখা যায়। যাদের অনেকেই এসেছেন ঢাকার বাইরে থেকে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন অধিদপ্তরে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। সমাবেশ চলাকালে সচিবকে নাহিদ রশীদকে কটূক্তি করে নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়। আতঙ্কে অধিদপ্তরে দেখা দেয় ভীতিকর পরিস্থিতি। অফিসের কর্মকাণ্ডে নেমে আসে অচলাবস্থা। 

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ আন্দোলন নজর রাখছে বলে জানা গেছে। তারা বিষয়টিকে সুবিধাভোগী একটি গোষ্ঠীর ইন্দন ও উস্কানি হিসেবে দেখছে। উতোমধ্যে সমাবেশ অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করেছে। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন,  সরকারি কর্মকর্তারা মন্ত্রণালয়ের কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এভাবে মাঠে নামতে পারেন না। তারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে কর্মস্থলের বাইরে গিয়ে সভা-সমাবেশ করছেন, উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখছেন, যা সরকারি কর্মচারী আচরণবিধির পরিপন্থী।

গতকাল প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এমদাদুল হক সমাবেশে এসে দুই মিনিটে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করে চলে যান। কিন্তু পুরো সমাবেশে দীর্ঘ সময় জুড়ে অবস্থান করেছেন সারাদেশ থেকে অন্তত ১০ জন কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে ছিলেন- প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের পরিচালক ড. মো. মোস্তফা কামাল, ঢাকা জেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালের ভেটেরিনারি অফিসার ড. সৈয়দ আলী আহসান, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির চিফ ইনস্ট্রাক্টর ডা. কাজী রফিকুজ্জামান, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ ফারুক আহমেদ, ঢাকা জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের উপপরিচালক ডা. নিতাই চন্দ দাস, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নাজমুল হুদা। 

বিভিএ অনুমতি নিয়ে এ সমাবেশ করছে কি না— এমন প্রশ্নে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাণিসম্পদের প্রশাসন শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, আমি যত দূর জানি এখনো এ সংক্রান্ত কোনো অনুমতি তারা নেয়নি।

বিভিএ সভাপতি এস এম নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোল্লার সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন বিসিএস লাইভস্টক ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নিতাই চন্দ্র দাস, সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান, মহাসচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ। 

মহাসচিব মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোল্লা বলেন, এনিম্যাল হাজবেন্ড্রি আইন নিয়ে আমরা সচিবের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তিনি যখন ডাকবেন আমরা হাজির হবো। গোপনে নয়, আলোচনা মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান হোক। আর তা না হলে প্রতিদিন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে অবস্থান নেব। 

এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ বলেন, অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন করতে মাত্র একটি সভা হয়েছে। অনেক সংগঠন এই আইনের প্রতি সমর্থন দিয়েছে। আমরা আরও স্টেহোল্ডারদের মতামত নেব।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন,পশু পালন ও জাত উন্নয়নে অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি ডিগ্রিধারীদের বড় অবদান আছে। কিন্তু তাদের জন্য নেই কোনো কাউন্সিল। অথচ প্রাণিসম্পদ খাতে ভেটেরিনারি কাউন্সিল আছে। এ কারণে নতুন কাউন্সিল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিরাপদ প্রাণিজাত খাদ্য উৎপাদন, রপ্তানি বাড়ানো, পশু পালনের সঙ্গে জড়িতদের আইনি সুরক্ষা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে যুগান্তকারী এ আইনকে স্বাগত জানিয়েছে এ খাতের রংশ্লিষ্টরা। এতে একচেটিয়া আধিপত্য খর্বের আশঙ্কা করছে একটি চক্র। তারা আন্দোলনে ভুল বুঝিয়ে উসকানি দিচ্ছেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //