শিক্ষক মুরাদের বিরুদ্ধে ছাত্রী হয়রানির প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ

রাজধানীর আজিমপুরে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের গণিত শিক্ষক মো. মুরাদ হোসেনের হাতে বিভিন্ন সময় ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। তারা বলছে, স্কুলের পাশে কোচিং সেন্টারে ছাত্রীদের পড়ানোর নামে ভিন্ন সময়ে ছাত্রীদের শরীরে হাত দেওয়াসহ নানাভাবে যৌন হয়রানি করেছেন তিনি, এর প্রমাণ পাওয়া গেছে শিক্ষক মুরাদের মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপে।

আজ বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপোরেশন্স) ড. খ. মহিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, ডিএমপির লালবাগ থানায় এক ছাত্রীর অভিভাবক বাদী হয়ে মুরাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। বাদী অভিযোগ করেছেন, তারা মেয়ে  ভিকারুননিসা নূন স্কুলের আজিমপুর শাখার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ২০২৩ সালে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে মুরাদের কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়। কোচিং চলাকালীন প্রায় সময় ভুক্তভোগী ছাত্রী ও তার সহপাঠীদের সঙ্গে আপত্তিকর কৌতুক শোনাতেন শিক্ষক মুরাদ।

ওই ছাত্রী স্কুলে নাচ করতো, সেই নাচের ভিডিও শিক্ষক মুরাদ ঘুমানোর আগে দেখতো। ২০১৩ সালের ১০ মার্চ বিকেলে ভুক্তভোগী ছাত্রীর সহপাঠীরা কোচিং এর পরে চলে গেলেও কৌশলে তাকে ডেকে বসিয়ে রাখে মুরাদ। পরে পানি আনার কথা বলে এবং হঠাৎ করে পেছন থেকে জড়িয়ে নানাভাবে যৌন হয়রানি করে। পরবর্তীতে এই বিষয় কারও কাছে না বলার অনুরোধ করে শিক্ষক মুরাদ ছাত্রীকে বলে, ‘আমি তোমাকে বাবার মতো জড়িয়ে ধরেছি, এটা কাউকে বলবে না।’

পরবর্তীতে একইভাবে দীর্ঘদিন ধরে মুরাদ কোচিং সেন্টারে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন করতো। এমনকি শিক্ষক মুরাদ ওই ছাত্রীকে নামাজ ঘরে নিয়েও যৌন নির্যাতন করেছে বলে দাবি মামলার বাদী ছাত্রীর অভিভাবকের। প্রতিবারই সে শিক্ষার্থীকে বলতো, আমি তোমার বাবার মতো, তাই এরকম করেছি। এই ঘটনা ভুলে যাও। এটা জানাজানি হলে তোমার মা-বাবার সম্মানহানি হবে এবং স্কুল থেকে তোমাকে বের করে দেবে।

মুরাদের এমন হুমকির কারণে ভুক্তভোগী ছাত্রী বিষয়টি গোপন রাখে। তবে সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন অশালীন আচরণের বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে তারা উদ্যোগী হয়ে বেশ কয়েকজন অভিভাবককে স্কুলে ডাকেন। পরবর্তীতে অভিভাবকদের উপস্থিতিতে শিক্ষক মুরাদের হাতে ছাত্রীদের যৌন নির্যাতনের বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলে তারা বিষয়টি স্বীকার করেন। এই বিষয়টি প্রকাশিত হলে মুরাদের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার অনেক ছাত্রী মুখ খুলতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি আজিমপুরে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মিলে শিক্ষক মুরাদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন।

অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, মামলা দায়ের হওয়ার পরে ২৭ তারিখ রাতে অভিযুক্ত শিক্ষক মুরাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে ঘটনার বিষয়ে শিক্ষক মুরাদকে জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। এছাড়াও ভুক্তভোগী ছাত্রী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। শিক্ষক মুরাদের মোবাইল ও ল্যাপটপ থেকে বেশ কিছু ভিডিও ও অডিও রেকর্ড উদ্ধার করা হয়েছে।

এ ঘটনার পর অভিভাক অনেকেই চিন্তিত। তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে অনেকেই ভয় পাচ্ছেন। এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে অভিভাকদের উদ্দেশে কোনও বার্তা আছে কি-না জাতে চাইলে তিনি বলেন, নারী ও শিশুর বিষয়ে পুলিশ অত্যন্ত সংবেদনশীল। এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধ যদি কেউ করে থাকে তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। যেসব শিক্ষার্থী স্কুল-কোচিংয়ে যাচ্ছে তারা স্বাভাবিকভাবে যাবে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাদের সুরক্ষায় বদ্ধপরিকর।

ভিকারুননিসা স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পেশাগত অবহেলা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে ড. মহিদ বলেন, ব্যক্তির দায় কখনও প্রতিষ্ঠান নেয় না। প্রতিষ্ঠানটিতে আরও অনেকে চাকরি করেন। তারা নিশ্চিয়ই এমন আচরণ করছেন না। একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাদের যে আচরণ করা দরকার তারা সেটাই করছেন। বিক্ষিপ্তভাবে একজন শিক্ষক যদি এ ধরনের কাজ করেন সে দায়ভার তো অন্য শিক্ষকরা নেবেন না।

একই প্রতিষ্ঠানে এমন অভিযোগে তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে। সেই তদন্তে তাদের দায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এই দায়মুক্তি পুলিশের তদন্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার মহিদ উদ্দিন বলেন, এটি একটি একাডেমিক বিষয়। তদন্তের বিষয়গুলো প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং কমিটি রয়েছে। তাদের দায়িত্বশীল যে জায়গাগুলো আছে সেগুলো তারা দেখবেন। তবে ফৌজদারি বিষয়গুলো আমাদের অংশ। দায়িত্ব নিয়ে আমরা তদন্ত করবো।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //