৯৯০ জনের বিপরীতে হাসপাতালে বেড একটি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মোট বেড সংখ্যা অনুযায়ী, প্রতি ৯৯০ জন লোকের বিপরীতে ১টি বেড রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।

আজ বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এ বি এম আনিছুজ্জামানের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে স্বস্থ্যমন্ত্রী এ তথ্য জানান। এর আগে, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

দেশে প্রতি ৫০ জনের বিপরীতে সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা শূন্য দশমিক ০২১১টি বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে পর্যায়ক্রমে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। ২০২২ সালের হেলথ বুলেটিনের তথ্য অনুযায়ী দেশে সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৭১ হাজার ৬৬০টি এবং বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৯৯ হাজার ৯৭৫টি। শয্যা সংখ্যা অনুযায়ী প্রতি ৯৯০ জনের বিপরীতে একটি শয্যা রয়েছে।

বিরোধী দলীয় চিপ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্যরা যদি সঙ্গে থাকেন তাহলে অবশ্যই অবৈধ ক্লিনিক বন্ধ করতে পারব। 

সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় যেসব ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে সেগুলোতে সব সুযোগ সুবিধা আছে কি না, লাইসেন্স আছে কি না, এসব দেখার আহ্বান জানান মন্ত্রী। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেন, সব হাসপাতাল বন্ধের পক্ষে না। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম যে হাসপাতাল ও ক্লিনিকে আছে সেগুলো থাকবে।

এইচ এম বদিউজ্জামানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, তিনি সব বিভাগে গিয়ে হাসপাতালগুলোতে কী কী সমস্যা আছে তা চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানে ব্যবস্থা করবেন। তিনি বিশ্বাস করেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে ঢাকা, চট্টগ্রামের মত শহরে রোগীর ভিড় হবে না, মাটিতে শুয়ে থাকতে হবে না।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদীর প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশের সরকারি হাসপাতালে স্নাতক ডাক্তার ২৯ হাজার ৫৬১জন। স্নাতক নার্সের সংখ্যা ৬ হাজার ৬৫০ জন, যার মধ্যে বিএসসি ইন নার্সিং ৩ হাজার ৯০৪, বিএসসি ইন পাবলিক হেলথ নার্সিং (পোস্ট বেসিক) ১ হাজার ৫৯৭ জন এবং বিএসসি ইন নার্সিং (পোস্ট বেসিক) ১ হাজার ১৪৯ জন। স্নাতক ফার্মাসিস্ট ৫ জন।

সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে ১৪ হাজার ২৯২টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ হাজার ২৭৫টি কমিউনিটি ক্লিনিকে কার্যক্রম চলমান।

আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মাহবুব উর রহমানের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, দেশের ৪২৯টি কার্যকরী উপজেলা হাসপাতালের মধ্যে ৩৮৩ টিতে এক্সরে মেশিন রয়েছে। যার মধ্যে ৫৩টি অচল বলে জানান মন্ত্রী।

আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতায় স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আনুষ্ঠানিক খাতের সরকারি চাকরিজীবী ও পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য সামাজিক স্বাস্থ্য বিমা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে অনানুষ্ঠানিক খাতের জনগোষ্ঠীকেও এ বিমার আওতায় আনা হবে।

আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে সামন্ত লাল সেন জানান, দেশের জাতীয় পর্যায়ে ফ্যাটি লিভার নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। তাই দেশের প্রায় চার কোটি মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত কি না এ বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন। লিভার ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস। ফ্যাটি লিভারের কারণে লিভার ক্যান্সার হতে পারে তবে এর সঠিক কারণ সম্পর্কিত কোনো গবেষণা তথ্য নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে এ ব্যাপারে আগামীতে আরও গবেষণা করা হবে। ক্যান্সারের প্রতি জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য মোহাম্মদ গোলাম ফারুকের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশের ৩৪টি জেলায় ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। নারায়ণগঞ্জে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের নীতিগত অনুমোদন রয়েছে। সরকারের আর্থিক সক্ষমতা ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় মেডিকেল কলেজ স্থাপন চলমান প্রক্রিয়া। কোনো জেলার মোট জনসংখ্যা, ভৌগোলিক অবস্থান, প্রয়োজনীয়তা, জনগুরুত্ব ইত্যাদি বিষয় বিবেচনাপূর্বক পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি জেলায় মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হবে।

আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি মুহিবুর রহমান মানিকের (সুনামগঞ্জ-৫) প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কিছু দেশ, ভারত, সিংঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও চীনসহ বিশ্বের ৭১টি দেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট SARS-CoV-2 Variant JN.1 ছড়িয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি ১০০টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৭ দশমিক ৩২ জন। গত ২০ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম বাংলাদেশে এই সংক্রমণ শনাক্ত হয়। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট এরই মধ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে সার্ভেল্যান্স কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি তৌহিদুজ্জামানের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনারী স্টেন্ট (রিং) এবং ম্যাকানিক্যাল ভাল্ব হাইটেক পণ্য, করোনারী স্ট্যান্টের প্ল্যান্ট তৈরি করতে বড় ধরনের বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আপাতত এ ধরনের প্রকল্প করার পরিকল্পনা সরকারের নেই। প্রকল্প অনুমোদনের আবেদনও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে জমা হয়নি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //