সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ব্যাখ্যা অযৌক্তিক ও অবান্তর: টিআইবি

বিদেশে সম্পদ অর্জন ও হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগের বিষয়ে চট্টগ্রাম-১৩ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা অযৌক্তিক, অবান্তর ও অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

আজ রবিবার (৩ মার্চ) এক বিবৃতিতে সংস্থাটি আরও বলেছে, হলফনামায় মিথ্যা বা অপর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। মন্ত্রী পদে থেকে তিনি শপথ লঙ্ঘন করেছেন।

বিবৃতিতে টিআইবি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) বিদেশে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর সম্পদ অর্জনের প্রক্রিয়া ও পরিমাণ যাচাইয়ের আহ্বান জানিয়েছে।

গত ২৬ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে টিআইবি জানায়, সরকারের মন্ত্রিসভার এক সদস্যের বিদেশে একাধিক কোম্পানি রয়েছে, যার প্রতিফলন হলফনামায় নেই। পরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে স্পষ্ট হয়, তিনি সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। গতকাল শনিবার সংবাদ সম্মেলনে বিদেশে সম্পদ থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি।

নির্বাচনের আগে টিআইবির তথ্য প্রকাশের উদ্দেশ্য নিয়ে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন তোলেন। টিআইবি বলছে, এমন তথ্য প্রকাশের উদ্দেশ্য নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের আয় ও সম্পদের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা।

এ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সর্বশেষ চারটি জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ৬ হাজার ৭ জন প্রার্থীর হলফনামার ভিত্তিতে সার্বিক, আসন ও দলভিত্তিক তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরতে তথ্য বিশ্লেষণ করে টিআইবি। তিনি বলেন, ‘টিআইবি মনে করে, এ ধরনের সঠিক তথ্য প্রকাশ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিব্রত হওয়াই স্বাভাবিক।

হলফনামায় বিদেশে থাকা সম্পদ আলাদা করে ঘোষণার কলাম না থাকা প্রসঙ্গে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, প্রথমত, সাবেক ভূমিমন্ত্রী হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন। আর নির্বাচনী হলফনামায় মিথ্যা বা অপর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। হলফনামায় একজন প্রার্থীর সব সম্পদের বিবরণ প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুক না কেন।

টিআইবি বিবৃতিতে বলে, বিদেশে সম্পদ গোপন করার ঘটনায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী বেশ কয়েকটি আইন লঙ্ঘন করেছেন। তিনি সংবিধানের ১৪৭(৩) ধারা অনুযায়ী, দেশের মন্ত্রীসহ আট ধরনের সাংবিধানিক পদাধিকারী কোনো লাভজনক পদ কিংবা বেতন-ভাতাদিযুক্ত পদ বা মর্যাদায় বহাল হবেন না কিংবা মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যযুক্ত কোনো কোম্পানি, সমিতি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা বা পরিচালনায় কোনোরূপ অংশগ্রহণ করবেন না। অর্থাৎ সাবেক ভূমিমন্ত্রী শপথ নিয়ে সাংবিধানিক এই বিধান লঙ্ঘন করেছেন।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী দেশ থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে সম্পদ করেননি বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা অবান্তর বলে মনে করে টিআইবি। বিবৃতিতে বলা হয়, অর্থ পাচারসহ সাংবিধানিক ও আইনি বিধান লঙ্ঘন তদন্ত কমিটির বিষয় নয়। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় দুদক, এনবিআর, বিএফআইইউ, সিআইডিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে তদন্ত সাপেক্ষে জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //