সত্য অস্বীকার করে বিআরটিএ দুর্নীতিকে সুরক্ষা দিচ্ছে: টিআইবি

বাস্তবতাকে আমলে নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের পরিবর্তে সত্য অস্বীকার করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) দুর্নীতিকে সুরক্ষা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এতে দুর্নীতির বিষয়ে সরকার ঘোষিত শূন্য সহনশীলতার অঙ্গীকার বাস্তবায়নেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে।

আজ বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) টিআইবির বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার টিআইবি ‘ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস পরিবহন ব্যবসায় শুদ্ধাচার’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে পরিবহন খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বিআরটিএর ভূমিকা সংশ্লিষ্ট তথ্যও প্রকাশ পায়। গত বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার টিআইবির ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন।

টিআইবির বিবৃতিতে বলা হয়, বিআরটিএ চেয়ারম্যান মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছেন। এই গবেষণার তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিআরটিএর চেয়ারম্যান অথবা তার মনোনীত প্রতিনিধির সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য টিআইবির নির্বাহী পরিচালক স্বাক্ষরিত একটি চিঠি নুর মোহাম্মদ মজুমদারের কাছে পাঠানো হয়। গত ২৩ অক্টোবর সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য গবেষণা দলকে ডাকলেও তিনি তার কার্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। ফলে সাক্ষাৎকার গ্রহণ সম্ভব হয়নি। পরে বিভিন্ন সময়ে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ফের গত ১২ নভেম্বর সাক্ষাৎকারের জন্য তিনি পাঁচ মিনিট সময় দেন এবং সে সাক্ষাৎকারে কোনো ধরনের তথ্য প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করেন। এমনকি, বিআরটিএ চেয়ারম্যানের পরিবর্তে অন্য কোনো কর্মকর্তাকে সাক্ষাৎকারের জন্য মনোনীত করার অনুরোধ করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তী সময়ে গবেষণা দল থেকে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও বিআরটিএর চেয়ারম্যানের কার্যালয় থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে টিআইবির গবেষণা দল নিজস্ব সূত্রে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিআরটিএ কার্যালয়ের বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নিয়েছে।

টিআইবির গবেষণায় ১৬৮ জন বাস মালিকের কাছ থেকে একটি কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ সব তথ্যকে অসত্য বা কল্পনাপ্রসূত বলার কোনো যুক্তি নেই।

তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ফিটনেস সনদ ইস্যু-নবায়নে ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ বাস মালিককে ঘুষ দিতে হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগসাজশ ও পরীক্ষা না করে ফিটনেসসহ অন্যান্য সনদ সংগ্রহের কথা উল্লেখ করেন বাস মালিকরা। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিআরটিএ থেকে রুট পারমিট ইস্যু-নবায়নে গড়ে ৪৫ দিন সময় প্রয়োজন হয়। এছাড়া ৪২.৬ শতাংশ বাস মালিক জানিয়েছেন, বাসের রুট পারমিট ইস্যু-নবায়নে তাদের ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূত অর্থ দিতে হয়েছে।

টিআইবির গবেষণা সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণার অনুসৃত পদ্ধতি ও মান অনুসারে পরিচালিত। এতে যদি বিআরটিএর ভাবমূর্তি সত্যিই ক্ষুণ্ন হয়ে থাকে, তবে তা প্রত্যাখ্যান না করে টিআইবি প্রণীত সুপারিশমালা অনুসরণ করে পদক্ষেপ নেওয়াই শ্রেয়। টিআইবি মনে করে, গবেষণাটি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন নয় বরং দুর্নীতির বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের শূন্য সহনশীলতার দৃঢ় অঙ্গীকারকে সম্পূর্ণ সমর্থন করে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //