বেনজীর ও তার স্ত্রী-কন্যাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুদক

দুর্নীতির অভিযোগে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের অবৈধ সম্পদের যেসব তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতেই মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বেনজীরের ও তার পরিবারের সদস্যদের দুদক কার্যালয়ে আসার জন্য তলব করেছে দুদক। দুদকের সূত্রে জানা গেছে তার স্ত্রী জিশান মির্জা, বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরকে আগামী ৯ জুন দুদকে তলব করা হয়েছে। তবে অবৈধ সম্পদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে দুদকের ডাকে বেনজীর ও তার পরিবার সাড়া দিচ্ছেন না। তবে এর আগে গত মাসে সবার অগোচরে দেশ ত্যাগ করে পুরো পরিবার নিয়ে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন বেনজীর।

এদিকে বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অর্জনে সহায়তাকারী পুলিশ কর্মকর্তা, ভূমি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদসহ অন্যদের তালিকা করছে দুদক। তালিকা তৈরির পর তাদের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান শুরু করবে সংস্থাটি। তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে।  ঢাকা, গাজীপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় বিপুল সম্পদ গড়েছেন বেনজীর আহমেদ। এসব এলাকার ভূমি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রারদের নাম তালিকায় থাকতে পারে বলে জানা গেছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, দেশের পাশাপাশি বিদেশেও অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বেনজীর। অবসরে যাওয়ার পর তুরস্কে নাগরিকত্ব নিয়েছেন কয়েক কোটি টাকায়। মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম প্রকল্পের আওতায় বিপুল বিনিয়োগ করেছেন। স্ত্রী জিশান মির্জার নামে সেকেন্ড হোম করেছেন স্পেনে। এছাড়া দুবাইয়ের পাম জুমেরা ও মেরিনা এলাকায় নামে-বেনামে বেনজীরের বেশ কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। দুবাইয়ের মস্কো নামের একটি হোটেলে তিনি বিনিয়োগ করেছেন বলেও তথ্য পেয়েছে দুদক।

বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব চেয়ে শিগগির তাদের ঠিকানায় বাহক মারফত নোটিশ পাঠানো হবে। নোটিশ গ্রহণ করার মতো কাউকে পাওয়া না গেলে তা বাসার দেয়ালে টানিয়ে দেওয়া হবে। বেনজীর সপরিবারে বিদেশে অবস্থান করায় নোটিশ গ্রহণ করতে পারবেন না বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ‘নন-সাবমিশন’ মামলা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের যেসব তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতেই মামলা হবে। বেনজীর যদি জিজ্ঞাসাবাদে না আসনে তাহলে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হারাবেন।’

বেনজীরের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে গত মার্চে জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ হয়। পরে সেই সংবাদ আমলে নিয়ে দুদককে অনুসন্ধান করতে সংস্থাটির চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

এরপর সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জিশান মির্জা, মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে গত ২২ এপ্রিল জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।

গত ২৩ ও ২৬ মে আদালত বেনজীর, তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে থাকা বিপুল সম্পদ জব্দের আদেশ দেন। তাদের ব্যাংক হিসাব ও শেয়ার অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করতেও বলেন আদালত। এছাড়া তাদের নামে থাকা ৬২৭ বিঘা জমি ও গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট জব্দ এবং ৩৮টি ব্যাংক হিসাব ও বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়।  ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন।

দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবার দেশত্যাগ করেছেন কি না সে বিষয়ে দুদকের কাছে কোনো তথ্য নেই। দুদকের তলবে হাজির হতে না পারলে বেনজীর ও তার পরিবার ১৫ দিন সময় চাইতে পারেন।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানিয়েছেন, বেনজীর আহমেদ তার ব্যাংক হিসাব থেকে কত টাকা সরিয়েছেন, তা বের করতে কাজ চলছে। আগামী ৬ জুন তাকে (বেনজীর) দুদক কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে। আমাদের সেই দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ডিএমপি কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //