বাড়ি ফিরছে মানুষ: বাস, ট্রেন ও লঞ্চে উপচে পড়া ভিড়

ঈদের আর মাত্র দুদিন বাকি। ঈদে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে মানুষ। তাই দলে দলে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। সড়ক, নৌপথ আর ট্রেনে বাড়ী ফেরা মানুষের উপচেপড়া ভিড়। 

আজ শুক্রবাার (১৪ জুন) ভোর থেকেই বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। রাজধানীর গুলিস্তান, মহাখালী, গাবতলী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালসহ বেশিরভাগ দূরপাল্লার বাস কাউন্টারে ভিড় করছেন ঘরমুখো মানুষ।

যাত্রীরা জানান, স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে ভোরের আলো ফোটার আগেই ঘর থেকে বেরিয়েছেন অনেকে। বাস ধরতে যেন কোনোভাবেই দেরি না হয়, সেজন্য আগেভাগেই টার্মিনাল ও কাউন্টারে গেছেন তারা। তবে নির্ধারিত সময়ে অনেকে বাস না ছাড়ার অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন, বাসের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

বাস কাউন্টার থেকে জানানো হয়,  ঢাকায় ফিরতে সময় বেশি লেগে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ে বাসগুলো টার্মিনাল বা কাউন্টারে পৌঁছাতে পারছে না। এজন্য বাস ছাড়তে কিছুটা দেরি হলেও যাত্রীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান তারা।

এদিকে, তৃতীয় দিনের মতো ট্রেনে ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে আজ। গত ৪ জুন যারা অগ্রিম টিকিট ক্রয় করেছিলেন তারা আজ ভ্রমণ করতে পারছেন। এছাড়া ট্রেনের সাধারণ শ্রেণির মোট আসনের ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট স্টেশন থেকে দেওয়া হচ্ছে।

কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রেলের অগ্রিম টিকেট পাওয়ার পরও সিটে বসতে পারেননি। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে গত বুধবার (১২ জুন) থেকে শুরু হয় ‘স্পেশাল’ ট্রেন সার্ভিস। কিন্তু প্রথম দিনেই শিডিউল বিপর্যয়ে পড়ে সকল ট্রেন। অন্যদিকে, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, ভিড়ের চাপে হিমশিম খাচ্ছেন লঞ্চ যাত্রীরা।

এর আগে গত বুধবার (১২ জুন) থেকে ট্রেনে ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। যারা গত ২ জুন টিকিট ক্রয় করেছিলেন তারা সেদিন ভ্রমণ করতে পেরেছিলেন। এবার টিকিটবিহীন যাত্রী ঠেকাতে কমলাপুর রেলস্টেশনে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে৷

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বিকেলে কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শন করে রেলমন্ত্রী মো.জিল্লুল হাকিম বলেন, আমরা সফলতার সঙ্গে গতকাল বুধবার যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছি। যা সম্ভব হয়েছে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সহযোগিতায়। আমরা চেষ্টা করছি যে সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেই যাত্রীদের বাড়ি পৌঁছে দিতে।

মন্ত্রী আরও বলেন, সব প্রস্তুতি আছে। ঢাকা থেকে প্রতিদিন ৬৪টি ট্রেন ছেড়ে যায়। আজ দু-একটা ট্রেন বাদে ৩০টা ট্রেন সময়মতো ছেড়ে গেছে। নিরাপদ ঈদযাত্রার লক্ষ্যে রেলওয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া আম ও গবাদিপশু পরিবহনের জন্য স্পেশাল ট্রেন চালু করেছি।

অন্যদিকে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও দেখা গেছে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে নদীপথে ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ। আর চাঁদপুর, শরীয়তপুর, বরিশাল ও ভোলা যাওয়া জন্য ঘাটে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি বিলাসবহুল লঞ্চ। এসব লঞ্চগুলোর কেবিন খালি নেই, ডেকেও দেখা গেছে যাত্রীদের ভিড়।

ঘরমুখো মানুষের সুবিধা ও অসুবিধার বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাতকারে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ঈদুল আজহায় নৌপথে ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা ও পশুবাহী নৌযানের চলাচল নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন রাখতে নৌ পুলিশ রয়েছে।

আইজিপি বলেন, জনগণের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করা, যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি এবং নসিমন, করিমন, ভটভটি, থ্রি হুইলার ইত্যাদি যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।

এছাড়া হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি শাহাবুদ্দিন খান বলেন, যাত্রীদের আমরা বারবার অনুরোধ করছি যেন ঝুঁকিপূর্ণ অনিরাপদ যাত্রায় শামিল না হন। পিকআপ, পশুবাহী ট্রাক, খোলা ট্রাক, মালবাহী পরিবহন, বাসের ছাদে যাত্রা না করার জন্য। এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় শামিল হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, আমাদের উচিত একটু দেরি হলেও সুস্থ ও সুন্দরভাবে বাড়ি গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করা।

উল্লেখ্য, ঈদুল আজহার সরকারি ছুটি ১৬ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত হলেও এর আগে শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় মোট পাঁচ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //