কোটা সংস্কার অন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা, গণপ্রেপ্তার, হামলা, মামলা, গুম এবং খুনের প্রতিবাদে ও জাতিসংঘ কর্তৃক তদন্তপূর্বক বিচারের দাবিতে এবং ছাত্র সমাজের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে 'মার্চ ফর জাস্টিস' কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আগামীকাল বুধবার (৩১ জুলাই) দেশের সকল সকল আদালত, ক্যাম্পাস এবং রাজপথে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। সারাদেশের শিক্ষক, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী, পেশাজীবি, শ্রমজীবী ও সকল নাগরিককে কর্মসূচি পালনে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও আমাদের দাবি আদায়ের সাথে একাত্মতা ঘোষণার অনুরোধ জানানো হয়। পাশাপাশি দাবি মেনে নিয়ে স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয় সরকারকে।
লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এমনকি সেনাবাহিনী উন্মুক্ত গুলি চালিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বুক ঝাঝরা করেছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দমন করতে রাম দা, অস্ত্র, রড ও লাটি হাতে লেলিয়ে দিয়েছে সরকার দলের ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগেকে। তাদের এই যৌথ সন্ত্রাসী হামলায় শাহাদাত বরণ করেছেন শত শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিক।
নিহতের সংখ্যা উল্লেখ করে বলা হয়, Against Oppression (SOP) ২৫ জুলাইয়ের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী এ পর্যন্ত ২৬৬ জন শহীদের নাম তালিকা প্রকাশ করা হলেও এ সংখ্যা সহস্রাধিক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ৩৬ জনকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছেএবং এর বাইরে বিভিন্ন জায়গায় গণকবর পাওয়া গিয়েছে বলে আমাদের কাছে তথ্য এসেছে। হতাহতের উল্লেখিত সংখ্যা উল্লেখ করে গণমাধ্যমগুলো বলছে এ সংখ্যা মাত্র কয়েকটি হাসপাতাল থেকে পাওয়া। এর বাইরে আরও অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে, যেখানে হতাহতের অনেক ঘটনা আছে। আবার অনেকে পরিস্থিতির কারণে লাশ হাসপাতালে না এনে নিজেরাই বাড়িতে নিয়ে দাফন করেন। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী চিকিৎসাধীন আছেন ৬ হাজার ৭ শত ১ জন। যাদের অনেকেই চিরতরে অন্ধ হয়ে গেছেন এবং অনেকে হয়েছেন পঙ্গু।
গণগ্রেপ্তার চালানো হচ্ছে অভিযোগ করে বলা হয়, আন্দোলন দমনের জন্য শাসকদের নির্দেশে সাধারণ ছাত্র ও আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে যে ভাবে গণগ্রেফতার চালানো হচ্ছে, সেটা রীতিমতো দেশের সংবিধান বিরোধী ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। গত ১২ দিন ১০ হাজারেরও অধিক নিরপরাধ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাতের আঁধারে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে কোন শিক্ষার্থী আছে কিনা। থাকলে সাথে সাথে মোবাইল চ্যাক ও গ্রেপ্তার। গণমাধ্যমে এমন খবরও ছেপেছে যে, বিনা অপরাধে গ্রেপ্তার করে মোটা অংকের টাকা দিলেই ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। বিরল এক স্বাধীন দেশের নাগরিক! পৃথিবীতে এমন দেশ খোঁজে পাওয়া সত্যিই দুষ্কর।
সরকারের নির্দেশে সাধারণ মানুষকে মামলা দেয়া হচভহে অভিযোগ করে বলা হয়, গত কয়েকদিন ঢাকা শহরেই দুই লাখের অধিক মানুষের নামে-বেনামে মামলা দেয়া হয়েছে শিক্ষার্থী পরিচয় দেখে দেখে হয়রানি, বিনা অপরাধে গ্রেপ্তার, গ্রেপ্তার বাণিজ্য ইত্যাদি এখন আমার স্বাধীন দেশের নৈমিত্তিক ঘটনা। নিজ দেশেই যেন পরবাসী আমজনতা। বিভাগীয় তদন্তের নামে প্রহসন ও আন্দোলনে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ট্যাগ দিয়ে নির্যাতন, গুম, রিমান্ড যেন প্রতিদিনের ঘটনা।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh