গণভবনে সাধারণ জনগণ
বগলদাবা করে কভার ছাড়া পুরনো এক বালিশ নিয়ে গণভবন থেকে হাসিমুখে বেরিয়ে আসছেন মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা কামরুল (ছদ্মনাম)। জানালেন স্মৃতি হিসেবে রাখবেন এই বালিশ। ১৩ বছরের কিশোর রাসেলের মাথায় চেপে গণভবন থেকে নিয়ে আসা দুটো চেয়ার। খুশি মনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। চোখেমুখে রাজ্যের খুশির ঝিলিক। কেউ গণভবনের গরু টেনে নিয়ে যাচ্ছেন, কেউবা ছাগল। তাদের দেখে হই-হুল্লোড়ও হয়। জানতে চাওয়া হয় ছাগল নিয়ে কী করবেন? জবাবে জানান, এটি এলাকার নির্যাতিত মানুষকে কেটে রান্না করে খাওয়াবেন।
কেবল লুটপাট নয়, গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতি হিসেবে জিনিসগুলো রেখে দিতে চান তারা। একে বিজয় ছিনিয়ে আনার মতো ঘটনা বলেও দাবি করেন কেউ কেউ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর নৈরাজ্যের প্রতি পুষে রাখা দীর্ঘ ১৫ বছরের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ যেন এভাবেই ঘটালেন সাধারণ জনগণ।
গত ৫ আগস্ট গণ-আন্দোলনের মুখে পদত্যাগের পর শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার খবর ছড়িয়ে পড়তেই মিছিল নিয়ে সর্বস্তরের জনগণ গণভবনে ঢুকে পড়ে। দুপুরের পর গণভবনের ভেতরে প্রবেশ করে তারা। এ সময় অতি উৎসাহী অনেকেই যে যা পেরেছে গণভবনে ব্যবহৃত জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে আসতে দেখা গেছে। যার যার মতো করেই শেখ হাসিনার ব্যবহৃত সকল সম্পদ নিজের মতো করে নিয়ে যান। এ সময় এসি, ফ্রিজ, হাঁস, মুরগি, কবুতর, ছাগল, গাভী সব নিয়ে গেছে উৎসাহী জনগণ। আবার কাউকে দেখা গেছে পুকুরে নেমে মাছ ধরতে। একদল মানুষ আবার গণভবনের ভেতরে পুকুরে নেমে সাঁতার কাটতে কাটতে আনন্দ-উল্লাস করেছে। ভেতরে থাকা বিভিন্ন খাবার-দাবারও দল বেঁধে খেয়েছেন অনেকেই।
গণভবনের সবুজ মাঠে তাদের উল্লাসে ফেটে পড়তে দেখা যায়। একই চিত্র দেখা যায় সংসদ ভবন এলাকাতেও। এ সময় জনতা ভুয়া, ভুয়া, পালাইছে, এই মাত্র খবর এলো, স্বৈরাচারের পতন হলো-এমন নানা স্লোগান দিয়ে বিজয় উল্লাস করতে থাকেন। এ সময় অনেককে কোলবালিশ, ঘটিবাটি ও বালতি ভরে গণভবনের ও সংসদ ভবনের বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যেতে দেখা যায়।
সাধারণ মানুষ দাবি করেন, এটি তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। সাম্প্রতিক গণহত্যা ছাড়াও পুরো ১৫ বছরের বেশি সময় তিনি এ ভবন থেকে কাজ করে পুরো দেশকে কারাগারে পরিণত করেছেন।
তবে এ সময় অনেককেই রাষ্ট্রীয় এসব সম্পদ নিয়ে যেতে বাধা দিতে দেখা যায়। তারা বলছিলেন, এগুলো রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এভাবে নিয়ে যাবেন না। এদিকে সন্ধ্যা না হতেই গণভবন থেকে নিয়ে যাওয়া মালামাল অনেকেই আবার ফিরিয়ে দিয়েছেন। জানা গেছে, কয়েকজন শিক্ষার্থী গণভবনের জিনিসপত্র ফিরিয়ে নিতে সেখানে স্বেচ্ছাসেবীর কাজ করছেন।
এ বিষয়ে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে সোমবার রাত ১১টা ২৫ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করেন এম হামিদ মারুফ নামে এক ব্যক্তি। সেখানে গণভবন থেকে নিয়ে যাওয়া জিনিসপত্র লোকজনকে ফেরত দিতে দেখা যায়।
ভিডিওটির সঙ্গে হামিদ মারুফ একটি ক্যাপশনও জুড়ে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘গণভবনের জিনিসপত্র ফেরত দিয়ে আসছে শিক্ষার্থীরা! রাষ্ট্রীয় সম্পদগুলো পুনরায় হেফাজতে নেওয়ার কাজ করছে ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ভলান্টিয়ার এবং সাধারণ মানুষ। সুন্দর দৃশ্য। দেশ গড়বে এখন এই যুবসমাজই। প্রিয় দেশ, সুন্দর দিন আসন্ন, ইনশাল্লাহ।’
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : গণভবন রাষ্ট্রীয় সম্পদ গণ-অভ্যুত্থান
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh