নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৪৭ পিএম
আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:০৩ পিএম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সংঘর্ষ-সহিংসতায় অনেকে আহত হয়েছেন। আহত এসব মানুষের কারও পা অথবা হাত কেটে ফেলতে হয়েছে। এসব মানুষের বেশিরভাগই সমাজের নিন্মবিত্তের মানুষ। এদের আয়েরই চলতো তাদের পরিবার। ফলে এদের পরিবারগুলো চিন্তিত তাদের ভবিষ্যত নিয়ে।
হাত-পা কেটে ফেলা তাদের অর্ধেকের বয়স ২০ বছরের কম। এদের অনেকের কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ নেই । তাদের দাবি, সর্বোচ্চ মানের কৃত্রিম হাত ও পা দিতে হবে। তবে এখনও পর্যণ্ত সরকার থেকে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
আল আমিনের বয়স ১৭। তার বাড়ি পাবনায়। সে ধোবাখোলা করোনেশন নাটিয়াবাড়ি উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। বড় হয়ে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন তার। বাবা ঢাকায় অটোরিকশা চালান, থাকেন রাজধানীর বাড্ডা এলাকায়। স্কুল বন্ধ থাকায় আল আমিন ঢাকায় বাবার কাছে চলে এসেছিল। গত ৫ আগস্ট বিকেলে মেরুল-বাড্ডা এলাকায় বিজয় মিছিলে সেও অংশ নিয়েছিল। মিছিলের ওপর গুলি চলে। অনেকের সঙ্গে সেও গুলিবিদ্ধ হয়। জীবনের ঝুঁকি কমাতে চিকিৎসকেরা তার বাঁ পা কেটে ফেলেছেন। এখন তার চিকিৎসা চলছে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতালে)।
আল আমিন বলে, ‘ডাক্তার হবার ইচ্ছা ছিল, মনে হয় পারব না।’ চোখের জল মুছতে মুছতে বলে, ‘আমার ভাগ্যে যা হবার তা-ই হবে।’
পঙ্গু হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আল আমিনসহ ওই দিন পঙ্গু হাসপাতালে ৯ জন ভর্তি ছিলেন, যাদের কোনো একটি পা কাটা। কারও ডান পা, কারও বাঁ পা। হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ১৬ জনের বাঁ পা অথবা ডান পা এবং চারজনের হাত কেটে ফেলতে হয়েছে।
মাইনুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ীর হাত কেটে ফেলতে হয়েছিল, পরে সংক্রমণ হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি মারা যান।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, অঙ্গ হারানো ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এর মধ্যে আছেন মামুন মিয়া, রাজু, নাদিম, আরাফাত ও মোস্তাকিন। তবে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়া ব্যক্তিদের মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি। তাদের মধ্যে আছে তামিম, আলী আহসান, রাইমুল ইসলাম, মেরাজুল ইসলাম, আল আমিন, ইমরান ও জুনায়েদ। মোরসালিন কাজ করতেন হোটেলে, রাকিব কাজ শেখা শুরু করেছিলেন সেলুনে, আকাশ কাজ করতেন মিষ্টির দোকানে। জাকির শিকদার, মোহাম্মদ হোসেন আহম্মদ ও আতিকুল ছোট চাকরি করতেন।
অঙ্গ হারানো ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এর মধ্যে আছেন মামুন মিয়া, রাজু, নাদিম, আরাফাত ও মোস্তাকিন। তবে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়া ব্যক্তিদের মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি।
আহত ব্যক্তির পরিবার ও চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, প্রতিবন্ধী হয়ে পড়া ব্যক্তিদের কৃত্রিম হাত-পা দেওয়ার একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক কাজী শামীম উজ্জামান বলেন, কৃত্রিম পা লাগানো ব্যক্তি হাঁটাচলা করতে পারবেন, বসতে পারবেন। কৃত্রিম হাত লাগানো ব্যক্তি জিনিসপত্র ধরার কাজ করতে পারবেন। কিন্তু হাত দিয়ে সূক্ষ্ম কাজ করার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা থেকে যাবে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃত্রিম হাত ও পায়ের দামে তারতম্য আছে। ২-৩ লাখ টাকা থেকে দাম ৭০-৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।
ব্র্যাকের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মসূচির প্রধান শাহীনুল হক বলেন, হাঁটুর ওপর থেকে কাটা পায়ের প্রতিটির জন্য কৃত্রিম পায়ের খরচ পড়বে ৬-৭ লাখ টাকা। আর হাঁটুর নিচ থেকে কাটা পায়ের জন্য কৃত্রিম পায়ের খরচ সাড়ে ৩ লাখ টাকা। আর কৃত্রিম হাতের জন্য খরচ পড়বে সাড়ে ৩ লাখ টাকা।
তিনি আরও বলেন, হাত বা পা হারানো কেউই আর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পারবেন না। যারা কাজ করতেন, তারা আর আগের মতো কাজ করতে পারবেন না। তাঁদের প্রত্যেকের মানসিক স্বাস্থ্য গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যের ওপর নির্ভরশীল থেকে তাঁদের বাকি জীবন কাটানোর ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh