কল্যাণপুর বাস ডিপোর ইউনিটপ্রধানের দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) অকেজো একটি বাস কেটে কেজি দরে বিক্রি করে দেন নুর-ই-আলম। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাটির তদন্তে এর প্রমাণ মিলেছে। এ ছাড়া ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ডিপোতে দায়িত্ব পালনকালে প্রায় এক কোটি টাকা জমা দেননি নুর-ই-আলম। এ ব্যাপারে তাকে দফায় দফায় নোটিসও দিয়েছে বিআরটিসি।
নুর-ই-আলম এখন বিআরসিটির প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত। সেখানে তিনি বিআরটিসি সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিআরটিসির ঊর্ধ্বতন কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় বেপরোয়া হয়ে ওঠেন নুর-ই-আলম। তার বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ, প্রতারণা ও আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
বাস বিক্রি নিয়ে নুর-ই-আলমের বিরুদ্ধে বিআরটিসিতে একটি অভিযোগনামা জমা পড়েছে।
অভিযোগনামা থেকে জানা যায়, গত বছর বিআরটিসির কল্যাণপুর বাস ডিপোর ইউনিটপ্রধান ছিলেন নুর-ই-আলম। তিনি গত বছর ৯ মার্চ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ডিপোতে থাকা ঢাকা মেট্রো-চ-৭৩৬০ রেজিস্ট্রেশন নম্বরের অকেজো একটি বাস কেটে বাইরে বিক্রি করে দেন। এ বিষয়ে তার প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার বিষয়টি ব্যবস্থাপক (কারিগরি) মো. মনিরুজ্জামানের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। এ অভিযোগনামায় নুর-ই-আলমকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা, ১৯৯০-এর ৩৯ (ক), (খ) ও (চ) দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ, প্রতারণা ও আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
বিআরটিসির যে বাসটি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে, সেটি সংস্থাটির নামেই নিবন্ধিত বলে বিআরটিএতে (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নুর-ই-আলম ডিপোর দায়িত্বে থাকার সময় ভুয়া ভাউচার দিয়ে বিল করতেন। ‘বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স’ নামে ঠিকানাহীন একটি দোকানের নামে বিল করতেন তিনি। তা ছাড়া তার অন্যতম সহযোগী ইলিয়াস নামে বিআরটিসির একজন প্রভাবশালী চালক এবং গোপালগঞ্জের এক ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী আবুল হাসান। তাদের মাধ্যমেই তিনি বাসটি কেটে কেজির দরে বিক্রি করেছেন। তা ছাড়া এ চক্রের ভয়ে তটস্থ থাকতেন করপোরেশনের অনেক কর্মকর্তা। মূলত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাব দেখিয়ে নুর-ই-আলম সব সময় দলবল নিয়ে চলতেন।
ডিপোর বাস বিক্রি নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির দায়িত্বে থাকা বিআরটিসির ব্যবস্থাপক (ওয়ার্কস) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘নুর-ই-আলম বাসটি বাইরে বিক্রি করে দিয়েছেন আমরা তদন্ত কমিটি এর সরাসরি প্রমাণ পেয়েছি। ওই সময় দায়িত্বে থাকা কয়েকজন তদন্ত কমিটিতে সরাসরি সাক্ষী দেন যে অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি বাসটি বিক্রি করেছেন। সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা একটি অভিযোগনামা বিআরটিসিতে জমা দিয়েছি।’
এ বিষয়ে কল্যাণপুর বাস ডিপোর বর্তমান ইউনিটপ্রধান মো. শাহরিয়ার বুলবুল বলেন, ‘আগের যিনি (নুর-ই-আলম) ডিপোর দায়িত্বে ছিলেন, তার বিরুদ্ধে এখানে থাকা কর্মচারীরা অভিযোগ করেছেন তিনি বাস বাইরে বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি এখানকার দায়িত্ব ছাড়ার সময় কোনো টাকা জমা দিয়ে যাননি। বরং অনুমোদিত আয় দেখিয়ে গিয়েছেন।’
তবে অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন নুর-ই-আলম। তিনি বলেন, ‘যে বাসটির কথা বলা হচ্ছে, সেটি আমি দায়িত্বে থাকার সময় কেউ আমাকে বুঝিয়ে দেয়নি। তাই আমি ওই ডিপো ছাড়ার সময় কাউকে বুঝিয়ে দিতে পারিনি।’ তা ছাড়া এই নম্বরের কোনো বাসই বিআরটিসিতে নেই বলে দাবি করেন নুর-ই-আলম।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিসির মুখপাত্র মোহাম্মদ মোবারক হোসেন মজুমদার বলেন, ‘এই বাস বিক্রির ঘটনাটি আমার সময় ঘটেনি। যার নাম বলা হচ্ছে, তিনি বর্তমানে বিআরটিসির সচিব হিসেবে হেড অফিসে আছেন। একটি অভিযোগনামা হয়েছে। তার বিষয়ে বিআরটিসি থেকে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : বিআরটিসির বাস বিক্রি সচিব কল্যাণপুর বাস ডিপো
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh