১০ হাজার ম্যুরাল-ভাস্কর্যের ব্যয় ৪ হাজার কোটি

পতিত আওয়ামী লীগ সরকার মুজিববর্ষ উদযাপনে সারাদেশে ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ করেছিল। এতে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ ধরা হয়। এই উপলক্ষে দুই বছর ধরে নানা জমকালো আয়োজন করা হয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার বিপুল এই ব্যয়কে অপ্রয়োজনীয় ও অপচয় হিসেবে দেখছে। মুজিববর্ষের নামে কোন মন্ত্রণালয় কত টাকা খরচ করেছে, সেই তালিকাও প্রস্তুত করা হচ্ছে।

বিশিষ্টজনদের মতে, জনগণের ট্যাক্সের টাকা জনবান্ধব কাজে ব্যয় করা উচিত। তাঁরা বলছেন, মুজিববর্ষ পালন এবং ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণে অপচয়ে জড়িত ও দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।

ময়মনসিংহ জেলা পরিষদে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণে খরচ হয় ১ কোটি ৭ লাখ টাকার বেশি। রাঙামাটি শহরের উপজেলা পরিষদের সামনের ম্যুরালটি নির্মাণে ব্যয় ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সব জেলা পরিষদে এমন ম্যুরাল নির্মাণে খরচ হয় ৮ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত। 

২০২১ সালে পুলিশের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সারা দেশে ১ হাজার ২২০টি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য বানানো হয়। তবে সরকারি সাতশ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, জেলা-উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ মিলিয়ে ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার। তথ্য বলছে, এসব করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। 

এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, ‘যেকোনো খরচের ক্ষেত্রে খরচের সদ্ব্যবহার খুব জরুরি। আমরা যে ট্যাক্স পেয়ারস টাকাটা ব্যবহার করছি, সেটা জনগণের কল্যাণের জন্য যাতে সরাসরি হোক বা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তার একটা সম্পৃক্ততা থাকে। সরকারি যেকোনো ব্যয় করি না কেন, সেটা অবশ্যই আমাদের জনস্বার্থে হওয়া উচিত।’

এই ভাস্কর্য ও ম্যুরাল বা প্রতিকৃতি নির্মাণে পৃথক কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। সরকারি অর্থে স্থানীয় প্রশাসন এই ভাস্কর্য ও ম্যুরাল বা প্রতিকৃতি নির্মাণ করা হয়েছে। 

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বহুমাত্রিক রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়। এসব ব্যয়ে কোনো প্রকার প্রকল্প নেওয়া হয়নি। সুনির্দিষ্ট জবাবদিহিতা বা আয়-ব্যয়ের হিসাব থেকে শুরু করে কোনো ধরনের উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা বা কোনো কিছুই কিন্তু নিশ্চিত করা হয়নি।’

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা আশা করব, এই চক্রের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাঁদের সকলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।’

এদিকে, মুজিববর্ষে রাষ্ট্রের কী পরিমাণ টাকা অপচয় হয়েছে, তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান সরকার। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘আপনারা জানেন, মুজিববর্ষকে ঘিরে কীভাবে একটি উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল। মুজিববর্ষে কী ধরনের কাজ হয়েছে এবং কত টাকা অপচয় হয়েছে, সে বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদে ডকুমেন্ট করার আলোচনা হয়েছে। মুজিববর্ষের নামে কোন মন্ত্রণালয় কত কোটি টাকা খরচ করেছে, তা নিয়ে ডকুমেন্টেশন হবে এবং সেগুলোর একটি তালিকা তৈরি করা হবে।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh