শামসুল হক ওরফে বদর ভাই। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৬ সালে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পরে আপিলে সাজা কমিয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। অবশেষে দীর্ঘ কারাবাস শেষে গত ২১ নভেম্বর কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন শামসুল। এর মধ্যদিয়ে যুদ্ধাপরাধের মামলায় কারাবাস পূর্ণ করে প্রথম কোনো আসামি মুক্তি পেলেন।
২০১৫ সালে জামালপুর শহরের নিজ বাড়ি থেকে শামসুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই বছরের ২ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শামসুলসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ওইদিন বিকেলেই জামালপুরের নয়াপাড়া এলাকার বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে কারাবন্দী ছিলেন।
পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই সময় রায়ে শামসুলসহ পাঁচজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও তিনজনকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। সেদিন রায় ঘোষণার সময় শামসুল হক ছাড়াও এস এম ইউসুফ আলী নামে অপর এক আসামি উপস্থিত ছিলেন। তবে বাকিরা পলাতক ছিলেন।
সেই রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- জামালপুরের আশরাফ হোসাইন, আবদুল মান্নান ও আবদুল বারী। এছাড়া মো. শামসুল হক ওরফে বদর ভাই ছাড়াও আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল শরীফ আহমেদ ওরফে শরীফ হোসেন, হারুন, আবুল হাশেম এবং এস এম ইউসুফ আলীকে।
তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালেই আপিল বিভাগে আবেদন করেন শামসুল ও ইউসুফ। যদিও রায়ের বিরুদ্ধে করা এ আপিল বিবেচনাধীন থাকাবস্থায় অপর আসামি ইউসুফের মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে শামসুল হকের করা আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে তার সাজা কমিয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
ওইদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম। এছাড়া শামসুল হকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক। আর তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ মো. রায়হান উদ্দিন।
পরবর্তীকালে আপিল বিভাগ থেকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে করা আবেদনের রায় প্রকাশের পর সেটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। এরপর ট্রাইব্যুনাল থেকে সেই রায় কারাগারে পাঠানোর পর গত ২১ নভেম্বর কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান শামসুল। আসামিপক্ষের এক আইনজীবীর মতে, শামসুল হক ওরফে বদর ভাই একমাত্র ব্যক্তি যিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় কারাবাস পূর্ণ করে মুক্তি পেয়েছেন।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : যুদ্ধাপরাধ মামলা মুক্তি শামসুল হক
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh