মোকাররম রানা
প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৯ পিএম
আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৫ পিএম
২০১২ সালের ১৪ জুলাই। রাশিয়ার প্রধান রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল ওয়ানে একটি ভয়াবহ সংবাদ প্রচারিত হয়। সেখানে টিভি সাংবাদিক রাশিয়া সীমান্তের কাছে শরণার্থীশিবিরের এক নারীর সাক্ষাৎকার নেন। ওই নারী বলেন, তিনি নিজের চোখে দেখেছেন ইউক্রেনের সেনারা তিন বছরের এক শিশুকে হত্যা করে শহরের প্রধান চত্বরের ল্যাম্পপোস্টে মরদেহ পেরেক দিয়ে গেঁথে দিয়েছে। হত্যার আগে কয়েক ঘণ্টা ধরে শিশুটির ওপর নির্যাতন চালানো হয়। এ ছাড়া শিশুটির মাকে ট্যাংকের পেছনে বেঁধে নির্যাতন করা হয়।
ওই নারীর বয়ানের সত্য-মিথ্যা যাচাই করেনি চ্যানেল ওয়ান। কিছুদিন পরে খবরটি যাচাই করেন রাশিয়ার স্বাধীন ধারার একজন সাংবাদিক। তিনি সীমান্তবর্তী শহরে নিজে গিয়ে খোঁজ নেন। কেউই এ ধরনের কোনো ঘটনার কথা শোনেননি বলে জানান। তবে ততদিনে যা ঘটার ঘটে গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে রাশিয়ার বড় অংশের মানুষ এই ঘটনা বিশ্বাস করে ফেলেছে। ওই স্বাধীন ধারার সাংবাদিক পরে জানতে পারেন, এই গল্পের উৎস ছিলেন ক্রেমলিনের এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চল দখলের সময় এ ধরনের অনেক ভুয়া খবর ছড়িয়েছিল রাশিয়ার মূলধারার গণমাধ্যম। উদ্দেশ্য ছিল, ক্রিমিয়ায় আগ্রাসনের ‘বৈধতা’ তৈরি করা।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পদ্ধতিগতভাবে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি নতুন কিছু নয়। ১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে সাক্ষ্য দেয় নায়িরাহ নামে ১৫ বছর বয়সী এক কুয়েতি মেয়ে। জানায়, ইরাক কুয়েত আক্রমণ করার পর সে দেশ থেকে পালিয়ে এসেছে। নায়িরাহ জানায়, সে কুয়েতের একটি হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করত। সেখানে দেখেছে, আগ্নেয়াস্ত্রসহ ইরাকি সেনারা হাসপাতালে ঢোকেন। পরে তারা ইনকিউবিটরে থাকা নবজাতকদের ঠান্ডা মেঝেতে ছুড়ে হত্যা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে প্রচারিত নায়িরাহর এই সাক্ষ্যে পুরো বিশ্ব স্তম্ভিত হয়ে যায়। এটি ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করতে যুক্তরাষ্ট্রে জনমত গঠনে ব্যাপক ভূমিকাও রাখে। তিন মাস পরই ইরাকে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। পরে জানা যায়, নায়িরাহ কোনো সাধারণ কুয়েতি মেয়ে ছিল না। সে যুক্তরাষ্ট্রে কুয়েতের রাষ্ট্রদূতের মেয়ে ছিল। হিল অ্যান্ড নল্টটন নামের একটি জনসংযোগ সংস্থা নায়িরাহকে ওই মিথ্যা সাক্ষাৎকার দিতে প্রশিক্ষিত করেছিল।
গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচার ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে যাচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যম। ছড়ানো হচ্ছে উত্তেজনা ও বিদ্বেষ। প্রতিবেশীদের ঘিরে ভারতীয় গণমাধ্যমের এ ধরনের প্রচারণা যুদ্ধ নতুন ঘটনা নয়। ২০২০ সালে ভুয়া তথ্য নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
সেখানে ভুয়া সংবাদ প্রচারে ভারতের বৃহত্তম সংবাদ এজেন্সি এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালের (এএনআই) সংশ্লিষ্টতা নিয়ে ভয়াবহ তথ্য উঠে আসে। ভারতের স্বার্থ হাসিলের জন্য ১৫ বছর ধরে চালানো হয় ভুয়া তথ্য প্রচারের অভিযান। এই কাজে ব্যবহার করা হয় এমন এক অধ্যাপকের নাম, যিনি ২০০৬ সালেই মারা গেছেন।
সে সময় ভুয়া তথ্য নিয়ে তদন্ত চালানো ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডিস-ইনফোল্যাবের নির্বাহী পরিচালক আলেক্সান্দ্রে আলাফিলিপে বলেন, ‘আমরা যতগুলো চক্রের মুখোশ উন্মোচন করেছি, তার মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড়। নেটওয়ার্কটির উদ্দেশ্য ছিল মূলত পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিকভাবে হেয় করা এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল (ইউএনএইচআরসি) ও ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করা।’
তার আগে ২০১৯ সালে গবেষকরা বের করেন যে বিশ্বের মোট ৬৫টি দেশজুড়ে কাজ করছে ২৬৫টি ভারত-সমর্থক ওয়েবসাইট। তারা দেখতে পান, এই সাইটগুলোর গোড়ায় আছে একটিই জায়গা। সেটি হলো দিল্লিভিত্তিক একটি ভারতীয় হোল্ডিং কোম্পানি, যার নাম শ্রীবাস্তব গ্রুপ বা এসজি।
‘ইন্ডিয়ান ক্রনিকলস’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এসজির কার্যক্রম ছড়িয়ে আছে কমপক্ষে ১১৬টি দেশে এবং তারা ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্যদের ও জাতিসংঘকে টার্গেট করেছিল।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ২০২৪ বৈশ্বিক ঝুঁকি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মিথ্যা তথ্য (ডিস-ইনফরমেশন) এবং ভ্রান্ত তথ্য (মিস-ইনফরমেশন) ভারতে বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৩৪টি সম্ভাব্য ঝুঁকিযুক্ত দেশের মধ্যে ভারত রয়েছে শীর্ষস্থানে। সংক্রমণজনিত রোগ, অবৈধ অর্থনৈতিক কার্যক্রম, অর্থনৈতিক অসমতা এবং শ্রমসংকটের মতো বিষয়গুলোকেও এই ঝুঁকি ছাড়িয়ে গেছে।
বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই বড় ধরনের প্রচারণাযুদ্ধ শুরু করেছে ভারত সরকার, দেশটির রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন গণমাধ্যম। বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যান গত ১৭ আগস্ট ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতার পটপরিবর্তনকে কেন্দ্র করে এক্সে সাম্প্রদায়িক অপতথ্যের ভয়াবহতা’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। এতে তারা গত এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এর (সাবেক টুইটার) ৫০টি অ্যাকাউন্ট খুঁজে বের করেছে, যেখানে সাম্প্রদায়িক রূপ দিয়ে অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে।
রিউমার স্ক্যানার বলেছে, এসব অ্যাকাউন্টে অন্তত একটি পোস্টে সাম্প্রদায়িক অপতথ্য ও ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। অ্যাকাউন্টগুলোতে ৫ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে প্রচারিত পোস্টগুলো এক কোটি ৫৪ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে। অপতথ্য ছড়ানো এসব অ্যাকাউন্টধারীর ৭২ শতাংশই ভারতে থাকে।
দীপক শর্মা নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ৯ আগস্ট একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের হিন্দু নারী ও শিশুদের একটি শিবিরে (ক্যাম্প) জিহাদিরা বোমা হামলা চালিয়ে শত শত নারীকে হত্যা করেছে। রিউমার স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, এটি গত ৭ জুলাই বগুড়ায় জগন্নাথ দেবের রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পাঁচজনের নিহতের ঘটনার ভিডিও।
এক হিন্দু ব্যক্তি তার নিখোঁজ পুত্রের সন্ধান দাবিতে মানববন্ধন করছেন- এমন দাবি করে একটি ভিডিও ভারতের মূলধারার গণমাধ্যম এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল (এএনআই), এনডিটিভি, মিরর নাউ এর এক্স অ্যাকাউন্টে প্রচার করা হয়। তবে রিউমার স্ক্যানার যাচাই করে দেখে, মুসলমান ওই ব্যক্তির নাম বাবুল হাওলাদার। ২০১৩ সাল থেকে নিখোঁজ থাকা ছেলের সন্ধানের দাবিতে মানববন্ধনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
ভারতের তথ্য যাচাই ও ভুয়া খবরের খোঁজ দেয় এ রকম একটি ওয়েবসাইট ‘অল্ট নিউজ’ গত কয়েক দিনে বাংলাদেশসংক্রান্ত বেশ কয়েকটি খবর খুঁজে পেয়েছে। এগুলোতে ‘বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপরে আক্রমণ’ হচ্ছে বলে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে।
এসব ভুয়া টুইট বা ফেসবুক পোস্টগুলোতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে ‘সেভ বাংলাদেশি হিন্দুজ’ বা ‘অল আইজ অন বাংলাদেশি হিন্দুজ’ অথবা ‘প্রে ফর বাংলাদেশি হিন্দুজ’। আরো একটি বাক্য এ ধরনের ভুয়া পোস্টগুলোতে দেখা গেছে, যার মোটামুটি বাংলা অনুবাদ হলো ‘জিহাদিরা বাংলাদেশের হিন্দুদের কেটে ফেলছে অথচ বিশ্ব একেবারে চুপ করে আছে।’
গত ৬ ডিসেম্বর রিউমার স্ক্যানারের প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, ১২ আগস্ট থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতের ৪৯টি গণমাধ্যমে অন্তত ১৩টি ভুয়া খবর প্রচারিত হয়েছে। ভারতের গণমাধ্যম রিপাবলিক বাংলা সর্বাধিক পাঁচটি গুজব প্রচার করেছে। এরপর রয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস, জি নিউজ ও লাইভ মিন্ট; যারা প্রত্যেকে অন্তত তিনটি গুজব প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া রিপাবলিক, ইন্ডিয়া টুডে, এবিপি আনন্দ ও আজতক অন্তত দুটি করে গুজব প্রচার করেছে।
ভুয়া খবর ও গুজবের মধ্যে রয়েছে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর তার নামে ভুয়া খোলাচিঠি, মুসলিম ব্যক্তির নিখোঁজ পুত্রের সন্ধানে মানববন্ধন করার ভিডিওকে হিন্দু ব্যক্তির দাবিতে প্রচার, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার ভুয়া খবর, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ভিত্তিহীন দাবি এবং ট্রাম্পের বিজয়ের পর ড. ইউনূসের ফ্রান্সে পালিয়ে যাওয়ার ভুয়া দাবি।
ভারতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া ভুয়া খবর ও গুজবের মধ্যে আরো রয়েছে পাকিস্তানি জাহাজের মাধ্যমে অস্ত্র আনার মিথ্যা দাবি, চট্টগ্রামে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী হিসেবে প্রচার, বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ হওয়ার গুজব, বাংলাদেশে ভ্রমণ নিয়ে যুক্তরাজ্যের জারি করা একটি ভ্রমণ সতর্কতা নিয়ে বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশ। ভারতীয় কিছু গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী চীনের প্রযুক্তিগত সহায়তায় চিকেন নেকের কাছে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানঘাঁটি নির্মাণ করবে। তবে রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, এ দাবি পুরোপুরি মিথ্যা।
ভারতের প্রতিমা বিসর্জনের ভিডিও প্রচার করে বাংলাদেশে মুসলিমদের হামলায় হিন্দু মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের দাবি, শ্যামলী পরিবহনের বাসে হামলার মিথ্যা তথ্য প্রচার করে চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবীর ওপর হামলার ভুয়া দাবি, চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক ব্যক্তির ছবি নিয়ে বিভিন্ন গুজব ছড়ানো হয়। দাবি করা হয়, ওই ব্যক্তি রমেন রায়, যিনি চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী, যা সত্য নয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন মনে করেন, বাংলাদেশ নিয়ে কিছু ভারতীয় গণমাধ্যমের বর্তমান কর্মকাণ্ড নিছক ভুয়া তথ্য ছড়ানোর বিষয় নয়। বরং তারা এক ধরনের তথ্যযুদ্ধ শুরু করেছে।
তিনি বলেন, ‘মোদি সরকার ও দক্ষিণপন্থি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত মিডিয়া, কলকাতার আনন্দবাজারসহ আরো কিছু মিডিয়া যা করছে, এগুলোকে কোনোভাবেই সাংবাদিকতা বলা সম্ভব নয়। তারা যে মিসইনফরমেশন ও ডিজইনফরমেশন ছড়াচ্ছে, তার ভিত্তিতে আছে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মুসলমান সম্পর্কে ভয়ংকর রকমের কুসংস্কার। সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে তারা বাংলাদেশের জনগণ সম্পর্কে জানেই না।’
অধ্যাপক মামুন বলেন, ‘তারা যা করছে সেটাকে শুধু মিসইনফরমেশন হিসেবে লিমিটেড করা যাবে না। বলা যেতে পারে, এটা একটি যুদ্ধের অংশ। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তারা আসলে প্রপাগান্ডা ওয়ার চালাচ্ছে, যা আরো বৃহত্তর যুদ্ধের দিকে ইঙ্গিত করে। অনুমান করা যাচ্ছে যে ভারত আসলে সেটাই চাচ্ছে। দেশটি চায়, বাংলাদেশে যেন কোনোভাবেই স্থিতিশীলতা না আসে। তারা এখানে জবরদস্তিমূলক বাস্তবতা তৈরি করতে চায়। এটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশে এক ধরনের সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের কিছু মিডিয়া নিউট্রাল ভূমিকা পালনের চেষ্টা করছে। কিছু সাংবাদিক ও ব্লগার বাংলাদেশের প্রকৃত পরিস্থিতি তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। তবে সেটি পর্যাপ্ত নয়।’
ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্যযুদ্ধের বিপরীতে বাংলাদেশি মিডিয়া ও ফ্যাক্টচেকারদের আরো সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান এই অধ্যাপক।
ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টওয়াচের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) গণমাধ্যম অধ্যয়ন ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক সুমন রহমান। তিনি মনে করেন, ভারতীয় গণমাধ্যমের এই প্রচারণা দেশটির জনগণের ওপরে প্রভাব ফেলছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিসরেও বাংলাদেশ নিয়ে বোঝাপড়ায় খারাপ ভূমিকা রাখছে।
সুমন রহমান বলেন, ‘ভারত থেকে নানা চ্যানেলে প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। ফেসবুক ও ইউটিউবের বাইরে বড় ধরনের প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে ইউটিউব ও টুইটারে। আন্তর্জাতিক পরিসরে এর বেশ প্রভাব পড়ছে। অতি ডানপন্থিরা এ ধরনের প্রপাগান্ডা গ্রহণ করছে। যার প্রমাণ আমরা দেখি ভারতের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশবিরোধী মিছিল ও আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায়। মিডিয়া এই ঘটনাগুলোকে উসকে দিয়েছে। এ ধরনের লাগাতার প্রচারণায় খুব সংবেদনশীল ও সচেতন মানুষও বিভ্রান্ত হয়ে যান।’
তিনি বলেন, ‘সত্যিটা হলো, আমাদের এখানে কয়েকটি সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে তারা এই ঘটনাগুলোকে অতিরঞ্জিত করে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব তৈরি করেছে। ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য হলো একে প্রমাণ করা যায় না। ফলে এটি যে মিথ্যা সেটিও প্রমাণ করা যায় না। ভারতীয় গণমাধ্যম এই সুযোগটিই নিয়েছে।’
তবে ভারতের বামপন্থি ধারার অ্যাকটিভিস্ট ও মিডিয়া বাংলাদেশ ইস্যুতে ধীরে ধীরে মুখ খুলতে শুরু করেছে বলে জানান সুমন রহমান। তার মতে, এই ঘটনায় ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা অনেকটাই ব্যাহত হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারও আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রপাগান্ডা ঠেকাতে যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেটিও পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাবে বলে মনে করেন তিনি।
সুমন রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রমাণসহ কথা বলতে হবে। ধরা যাক, কোনো অপরাধ সাম্প্রদায়িক কারণে ঘটেনি, কিন্তু ওখানে (ভারতে) বিষয়টিকে এভাবে ফ্রেমিং করা হচ্ছে, আমাদের গণমাধ্যমের উচিত হবে নিজেরাই ফ্যাক্ট চেকিং করে সত্যটাকে তুলে ধরা।’
অপপ্রচার ও ভুয়া তথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে অ্যালগরিদমের ভূমিকার কথাও বলেন এই অধ্যাপক। এ ছাড়া সাম্প্রদায়িক হামলার ক্ষেত্রে দেশের গণমাধ্যমকে ‘সেলফ সেন্সরিং’ না করতেও আহ্বান জানান তিনি। সুমন রহমানের মতে, দেশের গণমাধ্যম কোনো সংবাদ চেপে না গেলে ভারতে অপপ্রচার চালানোর সুযোগ কমে যাবে। একই সঙ্গে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ঠেকাতে সরকারও দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh