মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দসংবলিত গ্রাফিতি রাখা ও না রাখা নিয়ে মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সামনে দুটি পক্ষের বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে হামলায় অনেকে আহত হয়েছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে “জাতিগত ও বাংলাদেশ প্রশ্নে বিভাজিত করার হীন উদ্দেশ্যে এনসিটিবি'র সামনে হামলার প্রতিবাদ ও জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে” বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
সমাবেশের বক্তব্যে নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “৭১-এর গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধে জাতির মধ্যে যে ঐক্য তৈরি হয়েছিলো, ’৭২ এর মুজিববাদী সংবিধান তা ধুলিস্যাৎ করে মূলনীতিতে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ অন্তর্ভুক্ত করে বিভেদের বীজ বপন করেছে। তারই ফলাফল আজকে রাজপথে আমার বোনের রক্ত।” ’২৪ এর ঐক্যবদ্ধ চেতনাকে ধারণ করে পাহাড় ও সমতলের সকলকে বিভাজন তৈরির সকল চক্রান্তের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটি মনে করে আজকের সহিংসতার ঘটনায় ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে পূর্বঘোষিত সমাবেশের সময় একই স্থানে কর্মসূচি ঘোষণা করে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ দায়িত্বশীল আচরণ করেনি এবং তাদের এমন সিদ্ধান্ত ইচ্ছাকৃত উত্তেজনা তৈরি করেছে। ঘটনাস্থলে সংঘটিত ঘটনাবলী থেকে এটা স্পষ্ট যে, এই হামলা পরিকল্পিত ছিল এবং এর পেছনে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র ভূমিকা ছিল স্পষ্ট। তাদের এই আচরণ শুধু সহিংসতার মাধ্যমে ভিন্নমত দমনের অপপ্রয়াস নয়, বরং এটি দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার এবং মর্যাদার ওপর সরাসরি আঘাত।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মতপ্রকাশ, সভা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এই অধিকার চর্চায় কোনোভাবেই সহিংসতা বা হামলা বরদাশত করা যায় না। আমরা এই হামলায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাই। এছাড়াও, পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা অত্যন্ত হতাশাজনক। হামলা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে তাদের ব্যর্থতা নাগরিক অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতার উদাহরণ। আমরা জোর দাবি জানাই যে, আহতদের যথাযথ চিকিৎসা এবং ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হোক। পাশাপাশি, এনসিটিবির সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার এবং সকল পক্ষের মতামত বিবেচনা করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাজ করার আহ্বান জানাই।
জাতীয় নাগরিক কমিটি দেশের সকল জাতিসত্তার সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক অধিকার রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে ফ্যাসিবাদ মুক্ত একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তখনই সম্ভব, যখন সকল মত, পথ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ এবং সংস্কৃতির মানুষ পারস্পরিক সহিষ্ণুতা এবং সংলাপের মাধ্যমে বিভেদ নিরসনে অঙ্গীকারবদ্ধ হবে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকারের প্রতি অবিচল প্রতিশ্রুতি আমাদের গণতান্ত্রিক চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হতে হবে। শুধুমাত্র এই মূল্যবোধগুলোর চর্চার মাধ্যমেই আমরা একটি সত্যিকারের বৈচিত্র্যময় এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব।
বিক্ষোভ সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
সেই সাথে উপস্থিত ছিলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ, নির্বাহী সদস্য মেহেরাব সিফাত, রিফাত রশিদ, লুৎফর রহমান সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।