নতুন পেশা ‘মাছ কাটিয়ে’

বাজারে গেছেন মাছ কিনতে, চোখের সামনে চকচকে ছোট মাছ দেখে চনমনিয়ে উঠল মন। সাধ জাগল- ইস, যদি ঝাল মরিচে চচ্চড়ি খাওয়া যেত! কিন্তু সেই ইচ্ছাকে বুকে চাপা দিতে হয়। ছোট মাছ বাসায় নিলে রক্ষে আছে! বউ তো বটেই, বাড়ির কাজের বুয়াটাও দেখলে মুখ বাঁকাবে। 

এমন ব্যথিত হৃদয়ে যারা বাড়ি ফেরেন তাদের সাধ পূরণের কথা মাথায় রেখেই সৃষ্টি হয়েছে নতুন এক পেশার। আগে বাজারে ছোট মাছ কাটার ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু এখন নানা ধরনের ছোট মাছও বাজার থেকে কাটিয়ে আনা যায় অনায়াসে। ইদানীং দা-বঁটি নিয়ে আমেনা বেগম আর মাছুমার মতো অনেক নারীই বাজারে এসে বসেছেন মাছ কাটতে। বাজারে মাছ বিক্রেতার সঙ্গেই বসেন তারা। মাছ কিনে একেবারে কাটিয়ে আনতে পারবেন সেখান থেকে। যদিও এ জন্য আপনার পকেট থেকে যাবে কিছু টাকা। এ ক্ষেত্রে মাছ যত ছোট, কাটানোর দাম তত বেশি। যদিও শখের মাছ খেতে পারার আনন্দের কাছে এ অর্থ ব্যয় একেবারেই নগণ্য। 

বনশ্রী এলাকার মেরাদিয়া বাজার ঘুরে কথা হয় আজিরনের সঙ্গে, তিনি তার ক্লাস ফোর পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে প্রায় তিন মাস হলো এ বাজারে মাছ কাটেন। সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে মাছ কাটা। ভিড়টা সকালের দিকে বেশি থাকে বলে জানান তিনি। কী মাছ বেশি কাটেন জানতে চাইলে বলেন, ছোট-বড় সব ধরনের মাছই কাটতে হয়। রুই, কাতলা, বোয়াল, আইড়, পাঙ্গাশ- এ ধরনের মাছ কাটতে কষ্ট কম, পাঁচ মিনিটেই কেটে ফেলা যায়। সময় বেশি লাগে ছোট মাছ কাটতে। এক কেজি পুঁটি বা টেংরা কাটতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট লাগে। মেয়ে কেমন মাছ কাটে জানতে চাইলে কিশোরী আয়েশার মা জানান, প্রথমে দেরি হলেও এখন মেয়ে মাছ কাটায় হাত পাকিয়েছে। তরতরিয়ে কেটে ফেলতে পারে সব ধরনের ছোট মাছ। 

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রোজ কয় কেজি মাছ কাটেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ছোট-বড় মিলিয়ে হিসাব করলে ১০ থেকে ১৫ কেজি মাছ কাটা যায়। শুধু মেরাদিয়া বাজারেই এমন মাছ কাটিয়ে আছেন আট থেকে ১০ জন। এ ছাড়া এলাকাভিত্তিক ছোট বাজারগুলোতেও নারীরা বসেন দল বেঁধে। বড় মাছ কাটতে ওজন অনুযায়ী ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত লাগে। আর ছোট মাছ কাটতে পকেট থেকে বেরিয়ে যাবে মাছভেদে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৫০ বা তার কিছু বেশি টাকা। মাছ কেটে তাই প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পাওয়া যায় অনায়াসেই। দক্ষতা ও বাজারে ক্রেতার আগমনের ওপর ভিত্তি করে এ টাকার পরিমাণ কমবেশি হয়। বনশ্রী বাজারের মৌসুমি বলেন, গার্মেন্টস বা বাসাবাড়ির কাজের চেয়ে এই কাজ অনেক ভালো। শুধু মাছ কেটেই মাস শেষে তার আয় ১২ হাজার টাকা প্রায়। অনেকে আবার বাসাবাড়িতে ছুটা বুয়ার কাজের ফাঁকে এ কাজ করেন বাড়তি আয়ের জন্য। 

কেউ কি ভেবেছিল, পরের বাড়ির মাছ কেটেও এমন আয় করা যায়? মাছ কাটিয়ে এই নারীদের বদৌলতেই ভূরিভোজ করা যাচ্ছে ঝাল-মসলায় হাতে মাখা ছোট মাছের চচ্চড়ি দিয়ে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh