কোনো শয়তান যেন পালতে না পারে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

প্রত্যেক অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কোনো শয়তান যেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে পালাতে না পারে।

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর রাজারবাগে অবস্থিত বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের উপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠানে সারাদেশে চলমান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ প্রসঙ্গে তিনি এ নির্দেশ দেন।

গত শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যৌথ বাহিনী দেশজুড়ে অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু করেছে। গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে এক সভায় এই অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসর, দুস্কৃতিকারী, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।” 

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ বিদায় নিয়েছে, কিন্তু তাদের দোসররা দেশে বিদেশে সরকারের বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।

পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অন্যায়ভাবে ব্যবহার করেছে মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, যারাই তাদের (আওয়ামী লীগ সরকার) অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার

 হয়েছে তাদেরকে দেশদ্রোহী আখ্যা দেয়া হয়েছে ও দলীয় নেতাকর্মীদেরকে লেলিয়ে দিয়ে অন্যায়ভাবে মামলা-হামলা করেছে।

“তারা গনমাধ্যমগুলো দখল ও নিয়ন্ত্রণ করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে শায়েস্তা করেছে। অনুগত পুঁজিবাদী শ্রেনী তৈরি করে সম্পদ লুন্ঠন করেছে। সিভিল সার্ভিস ও নিরাপত্তা বাহিনীর উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করেছে। আদালতের স্বাধীনতা খর্ব করেছে।”

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “জুলাই- আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি জড়িত সন্ত্রাসী, নরহত্যায় জড়িত বিশেষ হেলমেট বাহিনী, ফৌজদারি অপরাধে সম্পৃক্ত ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসররা, অর্থ পাচারকারী, লুণ্ঠনকারী, ষড়যন্ত্রকারী, দুস্কৃতিকারী, রাষ্ট্রদ্রোহী, দুদকের মামলায় আসামিদের আইনের আওতায় আনার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে।”

তিনি বলেন, “সরকারের পুলিশ বাহিনী, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা আইনি প্রক্রিয়ায় এ সকল অপরাধীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রেপ্তার  করেছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।” 

একই অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, “দায়িত্ব নেয়ার পরের বিষয়গুলো অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিলো। পতিত ফ্যাসিস্টরা লাখ লাখ কোটি টাকা খরচ করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।”

তিনি বলেন, “হুটহাট কাউকে জামিন দিবেন না, যিনি জামিনের যোগ্য তাকে আবার জামিন থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। জামিন দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ যেন জামিন নিয়ে বের হয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ১৫ বছর অরাজকতা হয়েছে। ১৫ বছরের প্রতিটা হত্যার বিচার হবে। তাছাড়া এই পদে থাকার মানে হয় না।”

সঠিকভাবে কাজ করলে মবতন্ত্র কমে যাবে মন্তব্য করে আসিফ নজরুল সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান। 

গৃহায়ন ও গণপূর্ত  উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবাইকে ব্যবহার করা হয়েছে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য৷ 

দেশের মানুষকে মুক্তি দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। সব সেক্টরে সংস্কার দরকার। ন্যায়ভিত্তিক কাজ করতে হবে। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা যেন আর না ঘটে। অপরাধীকে যেন আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। 

অনুষ্ঠানে মানবাধিকার নিশ্চিতসহ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পুলিশকে আরও জনবান্ধব করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা। ভিন্নমত দমনে জেলখানাকে ব্যবহার করা হবে না এমন প্রত্যয় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাজ করার আহ্বান জানান তারা। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh