দ্য হিন্দুকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কোনো নির্দিষ্ট সরকার বা শাসনব্যবস্থার ওপর নির্ভর করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই কথা বলেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, যে কোনো দল বা সরকার ক্ষমতায় থাকুক না কেন, আমাদের সম্পর্ক পারস্পরিক স্বার্থ ও সম্মানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে। আমি বিশ্বাস করি, উভয় পক্ষই তাদের স্বার্থ বোঝে ও বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক থাকা উচিত।
তিনি আরও বলেন, আমরা শুধু আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছর কেন দেখব? বিএনপির আমলেও (১৯৯৬-২০০১) তো দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছিল। আমার মনে হয় না, সম্পর্ক নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক হতে হবে।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ওমানের মাসকটে অনুষ্ঠিত অষ্টম ভারত মহাসাগর সম্মেলনের ফাঁকে তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সেসময় বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়েও আলোচনা হয়, যার মধ্যে ছিল সংখ্যালঘু নির্যাতন, শেখ হাসিনার ভারত থেকে দেওয়া বক্তব্য, সীমান্ত হত্যা, জেলেদের প্রতি আচরণ ও আদানি বিদ্যুৎ প্রকল্প।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, এপ্রিলে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে বৈঠক হতে পারে। তবে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি ও সম্মেলনের আগেই এ বিষয়ে আলোচনা হবে।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন জানান, ২০২৪ সালে ২৪ জন বাংলাদেশি সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হন। তিনি বলেন, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ভারত প্রায়শই বলে যে সীমান্তে অপরাধ হচ্ছে, তাই গুলি চালানো হচ্ছে। কিন্তু বিশ্বের কোনো সীমান্তে এভাবে নির্বিচারে মানুষকে হত্যা করা হয় না।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়সহ সব ধর্মের মানুষ সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করেন। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের সরকারের দায়িত্ব। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর ভারতীয় মিডিয়ায় এ বিষয়ে অতিরঞ্জিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংখ্যালঘু নির্যাতনে জড়িত ছিল না।
তৌহিদ হোসেন বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ও তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারতকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ভারত যদি তাকে ফেরত নাও পাঠায়, তবে অন্তত তার বক্তব্যে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত যাতে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি না হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং প্রধানমন্ত্রী মোদির সাম্প্রতিক বৈঠকে বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি ভারতের নিজস্ব বিষয়। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে, যা বাণিজ্য খাতে এরই মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত আদানি পাওয়ার প্রকল্পের বিষয়ে তিনি বলেন, চুক্তির ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালিয়ে যেতে হবে, তবে যদি কোনো অনিয়ম থাকে, আমরা তা যৌথভাবে পর্যালোচনা করতে পারি। বিদ্যুতের দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় এটি পুনরায় আলোচনা করা হতে পারে, বিশেষ করে কয়লার ক্রয়মূল্য নিয়ে।
সূত্র: দ্য হিন্দু
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh