এনআইডি ইসির অধীনে রাখার দাবিতে ২ ঘণ্টার ‘কর্মবিরতি’ ঘোষণা

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুবিভাগ নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখার দাবিতে বৃহস্পতিবার সারাদেশের নির্বাচন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘কর্মবিরতি’ পালন করবেন।

বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়গুলোর সামনে ‘স্ট্যান্ড ফর এনআইডি’ নামে এ কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মনির হোসেন।

বুধবার নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে মনির হোসেন বলেন, “এনআইডি নির্বাচন কমিশন থেকে অন্য কোথাও না নেওয়ার অনুরোধে আমরা ৫ তারিখে কমিশনারদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। দৃশ্যমান পদক্ষেপ আমরা দেখতে চেয়েছিলাম। কমিশনের পক্ষ থেকে পেলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ দেখিনি। আমরা ঘোষণা করেছিলাম, ১২ মার্চের মধ্যে যদি আমাদের দাবি মানা না হয়, তাহলে কর্মসূচি দেব। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সারাদেশে নির্বাচন কমিশন কার্যালয় ও অফিসগুলোতে বেলা ১১ টা থেকে ১টা পর্যন্ত আমরা ‘স্ট্যান্ড ফর এনআইডি’ কর্মসূচি পালন করব।”

তাদের দাবির বিষয়ে সরকার পদক্ষেপ না নিলে আরও ‘কঠোর কর্মসূচি’ দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

৪ মার্চ এনআইডি সেবা কার্যক্রম 'সিভিল রেজিস্ট্রেশন কমিশন' নামে একটি পৃথক কমিশন অধীনে নেওয়ার প্রস্তাব করে অন্তর্বর্তী সরকার। এ লক্ষ্যে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ’, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেন প্রধান উপদেষ্টা। উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকের আলোচনা অনুযায়ী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এনআইডি সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনেই রাখার দাবিতে এনআইডি অনুবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন।

সংবাদ সম্মেলনে এনআইডি ইসির অধীনে রাখার যুক্তি দিয়ে ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনর আহ্বায়ক মনির হোসেন বলেন, “এনআইডি ইসির অধীনে থাকবে এটি যৌক্তিক দাবি। এনআইডি ইসির অধীনে না থাকলে নাগরিক সেবা বাধাগ্রস্ত হবে এমন উদ্বেগ যৌক্তিক। এনআইডি আলাদা হলে নির্বাচন ব্যবস্থাই বাধাগ্রস্ত হবে।”

ইসি সচিবালয়ের এই উপসচিব আরও বলেন, “ভোটার তালিকা ও এনআইডি একসঙ্গে নির্বাচন কমিশনে রাখার পক্ষে ইসির পূর্বের সংলাপগুলোতে অংশীজনরা মতামত দিয়েছেন। সর্বশেষ ২০২৩ সালে একটি আইন করে শুধুমাত্র এনআইডি সেবা সুরক্ষা সেবা বিভাগে নেওয়ার চেষ্টা হয়। অন্তর্বর্তী সরকার এই আইনটি বাতিল করে এনআইডি ইসির অধিনেই রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু মাঝপথে দেখা যাচ্ছে আলাদা করে একটি কমিশন বানিয়ে এনআইডি তার অধীনে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলো।”

এনআইডি কার্যক্রম ইসি থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে নিতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০২৩’ না, আইন করে। ওই আইনে এনআইডি কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে না নেওয়া পর্যন্ত ইসির অধীনেই পরিচালনার কথা বলা হয়।

গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এনআইডি অনুবিভাগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়ার সিদ্ধান্তের জোর বিরোধিতা করে ইসি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সিদ্ধান্তকে ‘আইন বহির্ভূত’ দাবি করে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০২৩’ বাতিল করে এ সংক্রান্ত কার্যক্রম ইসির অধীনেই রাখার জন্য রাষ্ট্রপতির দপ্তরকে বেসরকারি পত্র (ডিও) পাঠিয়েছিলেন সংস্থাটির তৎকালীন সচিব শফিউল আজিম। ইসি ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আপত্তিতে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন বাতিল করা হয়।

এনআই ইসির অধীনে রাখার দাবিতে টানা কর্মসূচি থাকবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মনি হোসেন বলেন, “আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, অবস্থান কর্মসূচি চলাকালীন এনআইডি সেবা কার্যক্রম দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকবে।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh